রাজশাহী অঞ্চলের ৪৮০ গভীর নলকূপের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। প্রায় ২৬ লাখ টাকা বকেয়া বিল থাকায় বিচ্ছিন্ন করা হয় এসব সংযোগ। তবে প্রি-পেইড মিটারে সেচের আগেই কৃষকের কাছ থেকে বিল কেটে নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)।
এখন সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বিপাকে পড়েছেন হাজারো কৃষক। কবে তা চালু হবে না নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। খরায় শুকিয়ে যাচ্ছে সবজি ও আউস খেত। একই অবস্থা আমন বীজতলার। তবে এ দায় বিএমডিএর বলে জানিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
বিএমডিএর অভিযোগ, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অযৌক্তিবভাবে পাওয়ার ফ্যাক্টর মাসুল চাপিয়ে দিয়েছে বিএমডিএর ঘাড়ে। বিষয়টি নিষ্পত্তিতে সমিতির চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন বিএমডিএ চেয়ারম্যান। কয়েক দফা আহ্বান জানিয়েও সাড়া মেলেনি। সমঝোতা ছাড়াই সম্প্রতি শুরু হয়েছে সংযোগ বিচ্ছিন্ন।
রাজশাহী ও নাটোর জেলা নিয়ে বিএমডিএ রাজশাহী অঞ্চল। সেচের জন্য এ অঞ্চলে রয়েছে ৩ হাজার ২৬২ সেচ যন্ত্র। গত এপ্রিল পর্যন্ত বিএমডিএ এ অঞ্চলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে প্রায় ১৭ কোটি ৫৬ লাখ ২৮ হাজার ৬৭২ টাকা নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছে।
তবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আপত্তি, পাওয়ার ফ্যাক্টর মাসুল বাবদ বকেয়া রয়েছে আরো প্রায় ১৭ লাখ টাকা। সরকারি হিসেবে মোট বিলের দশমিক ৯০ শতাংশ ধরে এ বিল এসেছে। বার বার তাগাদা দিয়ে বিএমডিএ বিল পরিশোধ না করায় বাধ্য হয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে নেমেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে গত ১৬ মে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন বিএমডিএ চেয়ারম্যান। তারপরও সংস্থাটি কেটে যাচ্ছে গভীর নলকূপের সংযোগ।
বিএমডিএর হিসাবে, রাজশাহী অঞ্চলের ৪৮০ গভীর নলকূপের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এর মধ্যে চাঁইনবাবগঞ্জ সদরের ৯৯টি, শিবগঞ্জের ১৫২টি, গোমস্তাপুরের ২৩টি, নাচোলের ৫৫টি, ভোলাহাটের ৮২টি, রাজশাহীর তানোরের ২৪টি, পবার ৭টি, গোদাগাড়ীর ৭টি, মোহনপুরের ১৮টি, নাটোরের ৯টি এবং বড়াইগ্রামের ৩টি গভীর নলকূপের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
জেলার তানোর উপজেলার অমৃতপুর গভীর নলকূপের অপারেটর শফিকুল ইসলাম জানান, বিনা নোটিশে গত ৪ জুন তার গভীর নলকূপের বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করে গেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এতে সেচ সংকটে খরায় নষ্ট হচ্ছে সবজি ও আউস খেত। আমন বীজতলা নিয়েও সংকটে রয়েছে কৃষক।
বিএমডিএর রাজশাহী জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান খান জানান, বিএমডিএ কর্তৃক নির্মিত ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কাছে হস্তান্তরিত ১১ কেভিএ বিদ্যুৎ লাইনের জন্য বিএমডিএ ১০ শতাংশ প্রদত্ত বিলের উপর বাট্টা পেয়ে থাকে। কিন্তু ২০০৭ সাল থেকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিএমডিএকে বাট্টা দিচ্ছে না। এতে পল্লী সমিতির কাছে বিএমডিএর পাওনা প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এনিয়ে অডিট আপত্তিও হয়েছে।
তাছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিভিন্ন সময় বিএমডিএর ট্রান্সফরমার, পোল, পোল ফিটিংস ইত্যাদি মালামাল ধারে গ্রহণ করেছে। এগুলো এখনও ফেরৎ দেয়ানি। অফেরৎ এসব মালামালের আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি টাকা। অথচ নামমাত্র ও আপত্তিকৃত বিল অপরিশোধিত থাকায় বিএমডিএর সেচ যন্ত্রের বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করছে পল্লী বিদ্যুৎ। এতে এ অঞ্চলের হাজারো কৃষক পড়েছেন চরম বেকায়দায়।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিএমডিএ নির্বাহী প্রকৌশলী মানিরুজ্জামান মনির। তিনি জানান, বোরো মৌসুমে বিএমডিএ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে ৪৪ কোটি টাকারমত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছে। আপাতত কোনো বিল বকেয়া নেই। এখন তারা পাওয়ার ফ্যাক্টর মাসুল বকেয়া দাবি করছে প্রায় ২৫ লাখ টাকার মত। এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও মনগড়া।
তিনি আরো বলেন, পাওয়ার ফ্যাক্টর কমাতে সেচযন্ত্রের সরঞ্জাম লাগানো হয়েছে। এটি লাগানো হয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সুপারিশেই। কেবল সিস্টেম লস কমাতেই বিএমডিএর উপর এ দায় চাপাচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বার বার চিঠি দিয়ে সাড়া মিলছে না। উল্টো জোর করে সংযোগ কেটে দেয়ার অভিযোগ করেন এ প্রকৌশলী।
তবে এ অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেন রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী এসএম মোজাম্মলে হক।
তিনি দাবি করেন, সরকার নির্ধারিত হারেই পাওয়ার ফ্যাক্টর মাসুল আরোপ করা হয়েছে। এটি দেবে বিএমডিএ। গত পাঁচ মাস ধরে রাজশাহীতে বকেয়া রয়েছে এ বিল। অন্য এলাকায় বকেয়া রয়েছে আরো আগের। কয়েক দফা বাড়িয়ে বকেয়া পরিশোধে গত ২৫ মে পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধ করেনি বিএমডিএ। বিল পরিশোধের পর ত্রুটি ধরা পড়লে পরে সমন্বয় করে নেয়ার কথা জানিয়েছিলেন তারা। কিন্তু তাতে কান দেয়নি বিএমডিএ। এ নিয়ে তাদের কোনো দায় নেই বলেও দাবি করেন এ কর্মকর্তা।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এফএ/আরআইপি