১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গণহত্যায় স্বামী-স্বজন হারানো শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামের বীরকন্যা পল্লীর বিধবাদের মাঝে ঈদু-উল ফিতর উপলক্ষে শাড়ি বিতরণ করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে জামালপুর শহরের মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘হাসি মুখ’ বিধবাদের মাঝে এসব শাড়ি বিতরণ করে। সোহাগপুর বীরকন্যা পল্লীর ৩৫ জন বিধবা নারীকে একটি করে শাড়ি প্রদান করা হয়।
এ সময় সোহাগপুর শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. জালাল উদ্দিন ও ‘হাসি মুখ’ সংগঠনের সমন্বয়কারী স্বপন বিশ্বাসসহ সংগঠনের আটজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
ঈদের নতুন শাড়ি হাতে পেয়ে বিধবা করফুরি বেগম বলেন, ‘আমগরে কতা মুনে কইরা এই ছাত্ররা আমগর লাইগা যে শাড়ি আনছে, এতে আমরা বিরাট খুশি অইছি। পুলাপানগুলা নেহাপড়া কইরা অনেক বড় হোক, আল্লার কাছে হেই দোয়াই করি।’
‘হাসি মুখ’ সংগঠনের সমন্বয়কারী স্বপন বিশ্বাস বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। সংগঠনের সদস্যদের ব্যক্তিগত অর্থে স্বাধীনতাযুদ্ধে পাকসেনাদের নির্মম অত্যাচারে সোহাগপুর গ্রামে স্বামী-স্বজন হারা নারীদের জন্য শাড়ি বিতরণ করা হয়েছে। এই নারীদের মাঝে শাড়ি বিতরণ করতে পেরে আমাদের অনেক ভালো লাগছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী সোহাগপুর গ্রামে গণহত্যা চালায়। সে সময় পাকহানাদার বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসরদের সহায়তায় ওই গ্রামে ছয় ঘণ্টার তাণ্ডব চালিয়ে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ১৮৭ জন পুরুষকে হত্যা করে। ওই ঘটনায় ৬২ জন নারী বিধবা হন।
সেই থেকে গ্রামটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ‘সোহাগপুর বিধবাপল্লী’ নামে পরিচিতি লাভ করে। এ গণহত্যায় নেতৃত্বদানকারী আলবদর কমান্ডার জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকরের পর ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ‘৭১ সোহাগপুর বিধবাপল্লীকে ‘সোহাগপুর বীরকন্যা পল্লী’ নামে ঘোষণা করেন।
হাকিম বাবুল/আরএআর/পিআর