মতামত

টিভির ডিজিটাল রূপান্তর

সমসাময়িক কালে দুনিয়ার কোনো মানুষের জন্যই টেলিভিশন সম্প্রচার ছাড়া জীবন ধারণ করা কঠিন। সারা দিন বাইরে থেকে ঘরে ঢুকেইতো টিভিটা অন করি। এখনকার মানুষের তথ্য-উপাত্ত ও বিনোদনের প্রধানতম মাধ্যম হচ্ছে টিভি। খবর দেখি, সিনেমা দেখি, নাটক দেখি, টক শো দেখি, দেখি কতো কিছু। যতোক্ষণ জেগে থাকি ততোক্ষণতো ওটা আমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। তবে এখন সম্ভবত মনে মনে চিন্তা করতে হচ্ছে যে, এমনটি কি সামনেও এরকমই থাকবে? আগামীতে টিভি সেটেই কি টিভি দেখব? স্যাটেলাইট বা টেরেস্টরিয়াল উপায়েই টিভি সম্প্রচার হবে? কি কি থাকবে টিভিতে? নানাবিধ প্রশ্ন এখন সকলের মাথায় ঘোরপাক খায়।টিভির জন্মের পর ধারণা করা হয়েছিলো যে, কাগজ, রেডিও, সিনেমা এবং অন্য মাধ্যমগুলো হয়তো টিভির দাপটের কাছে টিকে থাকবে না। বিশেষ করে রেডিও টিভির দাপটের জন্য প্রচণ্ড চাপের মাঝে পড়ে এবং সাম্প্রতিককালে এফএম রেডিওর জাগরণের আগে রেডিও প্রায় বিলুপ্তির পথেই চলে গিয়েছিলো। তবে টিভি পত্রিকার বিকল্প হয়ে যায়নি। কাগজের গণমাধ্যম বিলুপ্ত না হয়ে বরং প্রসারিত হয়েছে। ধারণা করা হয়েছিলো যে, টিভির আবির্ভাবের ফলে সিনেমা হারিয়ে যাবে। বাংলাদেশে সিনেমা বিপন্ন হবার প্রধানতম কারণ নিম্ন মান ও পাইরেসি হলেও দুনিয়াজুড়ে সিনেমা একটি স্বতন্ত্র মাধ্যম হিসেবে এখনও কোনো না কোনােভাবে টিকে আছে। হলিউড বা বলিউডে এখনও সিনেমার জয় জয়কার।  এর সহজ হিসাবটা হলো, টিভি তার নিজের প্রভাব বাড়াতে পারলেও কাউকেই বিলুপ্ত করতে পারেনি। কিন্তু এখন প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে যে সামনের দিকে টিভি-রেডিও-কাগজ ইত্যাদি গণমাধ্যমের রূপান্তর কেমন করে হবে? কি রকম হবে? কতোটা হবে?বাংলাদেশে ১৯৬৪ সালে টিভির জন্ম হবার পর সেটি নানাভাবে বিবর্তিত হয়েছে। প্রথমে সাদাকালো সরকারি টিভি ছিলো। সেটি প্রচারিত হতো টেরিস্টরিয়াল পদ্ধতিতে। অ্যান্টেনা দিয়ে টিভি সেটে টিভি দেখা যেতো। পরে সেই টিভি স্যাটেলাইট সম্প্রচারে গেছে, রঙিন হয়েছে এবং বেসরকারি মালিকানায় বিপুল সংখ্যায় জন্ম নিয়েছে। এক সময়ে টিভি স্টুডিওকেন্দ্রিক থাকলেও এখন মাঠে ময়দানে এবং তাৎক্ষণিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। টিভির যন্ত্রপাতিতেও নানা পরিবর্তন এসেছে। ফিল্ম, বিএনসি, ইউম্যাটিক, বেটা থেকে ডিভি-এইচডির প্রবহমান ধারায় এখন পুরোই ডিজিটাল প্রক্রিয়ার জয়জয়কার। তবে যে জায়গাটিতে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি সেটি হলো টিভি সেট। একসময়ে ক্যাথোড রে টিউবভিত্তিক সাদাকালো টিভি সেট এখন বড়জোর এলসিডি-এলইডি ও কালার হয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড ১৯/২০ ইঞ্চির টিভি ৪২ ইঞ্চিও হয়েছে। অ্যান্টেনার যুগ পার হয়ে এখন আমরা ক্যাবল বা ডিশ লাইনের যুগে এসেছি। টিভি সম্প্রচার বিতরণের সর্বশেষ প্রযুক্তিটার নাম বোধহয় ডাইরেক্ট টু হোম।আপনি যদি ইন্টারনেটে টিভির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনুসন্ধান করেন তবে দেখবেন কেউ বলছে টিভির ভবিষ্যৎ হচ্ছে মোবাইল ফোন, কেউ বলছেন টিভি মানে ইন্টারনেট বা কেউ বলছে আরও নতুন কিছু। আমরা বাংলাদেশে এতোসব ভাবিনা। ফলে প্রচলিত ধারার সাথে যতোটা নতুনত্ত্ব আসে তাতেই আমরা তৃপ্ত হই। আমাদের টিভি দেখা মানে মহিলাদের ভারতীয় সোপ অপেরা দেখা আর চায়ের স্টল ও আড্ডাখানাসহ বাড়ির পুরুষদের বাংলাদেশী টকশো দেখা। এজন্য ডিশের ক্যাবল লাইন হচ্ছে একমাত্র বাহন। ঘরে ১৪ ইঞ্চি থেকে ৪২ ইঞ্চি আকারের টিভি যাতে সিআরটি, এলসিডি বা এলইডি থাকতেই পারে। কিন্তু অবস্থাটি এখন আর তেমন মনে হচ্ছে না। গত ৪ঠা মে ২০১৫ দৈনিক প্রথম আলো ছোট একটি খবর ছাপে। খবরটি এরকম- "মাঠে তখন চলছে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের তৃতীয় ওয়ান ডে। আর ক্রিকেটের ভক্ত সুমন কিনা বসে আছে বাসে, আটকে গেছে যানজটে। সাধারণত জগন্নাথ হলের টিভি রুমেই বন্ধুদের নিয়ে হই-হুল্লোড় করে দেখে খেলা। কিন্তু আজ হলে ফিরতে দেরিই হয়ে যাবে, যে যানজট! রেডিওতে ধারাভাষ্য শুনছেন ঠিকই, কিন্তু এতে কি আর দেখার সাধ মেটে? এমন সময় ফেসবুকের একটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘মোবাইল টিভি’ সম্পর্কে ধারণা পান সুমন। ব্যস, সঙ্গে সঙ্গেই সেটা চালু করে নিলেন। বাসের সবাই মিলে জ্যামে বসেই সাক্ষী হলেন আরেকটি বাংলাওয়াশের!কী এই মোবাইল টিভি? টুজি বা থ্রিজি মোবাইল সংযোগ ব্যবহার করে দেশের যেকোনো স্থানে যেকোনো সময় মোবাইলের নির্দিষ্ট অ্যাপ ব্যবহার করে মোবাইল ফোনেই টিভির সব অনুষ্ঠান দেখার প্রযুক্তি হলো মোবাইল টিভি। এই সেবা দিচ্ছে মিডিয়াকম লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সম্পর্ক বিভাগের অ্যাকাউন্ট সুপারভাইজার খন্দকার আহসানুজ্জামান বলেন, ‘মোবাইল টিভির কল্যাণে বিনোদন এখন পুরোপুরি হাতের মুঠোয়—যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময়।’ তিনি জানান, বাংলালিংক, রবি, টেলিটক ও এয়ারটেলের সিম ব্যবহার করে উপভোগ করা যাবে মোবাইল টিভি। জাভা, অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস-চালিত ফোনে চলবে এটি। নির্ধারিত ফির বিনিময়ে নিবন্ধন করতে হবে।এ জন্য যেতে হবে নিচের ওয়েব ঠিকানায়-বাংলালিংক: goo.gl/E8W804 (মাসিক ৪০ টাকা), টেলিটক: goo.gl/fOZsGn (মাসিক ৮০ থেকে ১৮০টাকা), রবি: goo.gl/xw616J (মাসিক ৫০ টাকা), এয়ারটেল: goo.gl/h0Z2g7 (মাসিক ৭২ টাকা)।দেশ-বিদেশের বিভিন্ন চ্যানেলের অনুষ্ঠান ছাড়াও এতে দেখা যাবে ধারণকৃত নাটক, ছবি, টেলিফিল্ম, মিউজিক ভিডিওসহ ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান। তবে সরাসরির বেলায় কেবল টিভির চেয়ে ২ সেকেন্ড পরে দেখা যাবে অনুষ্ঠান।”খবরটি ব্যাখ্যা করার দরকার নাই। সুমন বোধহয় একা নয়। তবে এটি বোঝার বিষয় আছে যে, টিভি দেখার যন্ত্রটা টিভি সেট  থেকে মোবাইল ফোনে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। আরও একটি বিষয় চোখে পড়ার মতো যে মোবাইল অপারেটররা টিভি সেবা প্রদান করা শুরু করেছে। মোবাইলে যখন বিনামূল্যে কথা বলার সুযোগ তৈরি হয়েছে তখন কথা বলার মোবাইল নেটওয়ার্কের জন্য এমন পথে চলা শুরু করাটা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। মোবাইল যন্ত্রটি রেডিও শোনার, ছবি তোলার যন্ত্র হয়েই আছে। ইন্টারনেট ব্রাউজ করা ও নানাবিধ কাজে একে ব্যবহার করার এক অসাধারণ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে এই যন্ত্রটির। ফলে ডিজিটাল সভ্যতার ডিজিটাল যন্ত্র বলতে আমরা সবচেয়ে জনপ্রিয় হিসেবে মোবাইলকেই শনাক্ত করতে পারি। মোবাইলের আকার কেমন হবে, এটি অ্যাপলের আইফোন থাকবে, না স্যামসাঙের গ্যালাক্সি হবে না ট্যাবলেট হবে এসব নিয়ে অনেক লম্বা বিতর্ক হতে থাকবে। কেউ ট্যাবলেটকে ল্যাপটপের বিকল্প বানাবেন, কেউ স্মার্ট ফোনকে ট্যাবলেটের বিকল্প বানাবেন। তবে সম্ভবত কিছু মৌলিক বিষয় এমন হবে যে, স্মার্ট ফোন ও ট্যাবলেটে (হয়তো ল্যাপটপেও) সিম ব্যবহারের সুযোগ একটি অতি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হচ্ছে। ওয়াইফাই-ব্লুটুথ নিয়ে কথা বলার দরকারই নেই।ঘটনাটি সম্ভবত কেবল মোবাইলে টিভি দেখাতেই সীমিত হয়নি। বাংলাদেশে যারা টিভি দেখেন তারা টিভিকেন্দ্রগুলোর স্ক্রলবারে দেখেন যে র্যাডিয়্যান্ট আইপি টিভি নামের একটি অ্যাপ দিয়ে ইন্টারনেট থেকেও টিভি দেখা যায়। এর মানেটি খুবই সহজ। আপনি ইন্টারনেটে যুক্ত থাকলেই টিভি আপনার হাতের মুঠোয়। ইদানিং ইন্টারনেটভিত্তিক টিভি পাওয়া যায়। ফলে টিভি সেটেও ইন্টারনেটের টিভি পাওয়া যায়। বাংলাদেশের বেশ কিছু টিভি কেন্দ্র নিজস্ব অ্যাপ বাজারে ছেড়েছে। সেটি দিয়েও সেই টিভির পর্দা ইন্টারনেটে পাওয়া যায়।যারা বর্তমানের খবরাখবর রাখেন তারা জানেন যে, এখন সরাসরি ইন্টারনেটে টিভি সম্প্রচার করতে প্রযুক্তিগত কোনো সমস্যাই নাই। আমি নিজে একটি ইন্টারনেট টিভি প্রতিষ্ঠানের ফিতে কেটেছি। আরও আধা ডজন টিভি কেন্দ্র ইন্টারনেট টিভি হিসেবে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় আছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, ইন্টারনেটে সম্প্রচারিত টিভি দেখার জন্য টিভি সেটের কথা ভাবাই দরকার নাই। মোবাইল থেকে পিসি যাই হাতের কাছে থাকুক যা মানুষকে ইন্টারনেটে যুক্ত করে সেটিই তার টিভি সেট। একই সাথে কোথায় স্যাটেলাইট আছে, কোথায় তরঙ্গ পেলাম বা পেলাম না সেইসব ভাবনার চাইতে বড় ভাবনা হলো ইন্টারনেট সংযোগ আছে কিনা।যারা ইন্টারনেট টিভির পাশাপাশি স্যাটেলাইটেও টিভি সম্প্রচার করতে চান তাদেরকে এখন আর ভূ উপগ্রহ কেন্দ্র বা ফ্রিকুয়েন্সি বা তরঙ্গ বরাদ্দ নেবার দরকার নেই। ইন্টারনেট সেই কাজটিও করে ফেলেছে। অন্যদিকে টেলিভিশনের কনটেন্ট বিষয়টিও বর্তমানের রূপটাতে থাকছে না।আমি আর্নেস্ট এন্ড ইয়ং নামক একটি প্রতিষ্ঠানের একটি প্রতিবেদন এখানে ছোট করে তুলে ধরছি। তারা তাদের প্রতিবেদনে সামনের দিকে তাকিয়ে টিভির কথা ভাবতে বলেছে। তাদের মতে সামনের দিনে ছয়টি প্রবণতা টিভির জগতটাকে বদলাবে।1. Storytelling will evolve to make better use of an omniplatform environment. Metadata that enables synchronization between screens is a key enabler to this experience. Initiatives such as the Coalition for Innovative Media Measurement’s (CIMM) Trackable Asset ID (TAXI) will help.However, this has implications for almost every system in a media company’s supply chain, from content creation and preparation through sales, traffic and distribution. Omniplatform programming will strain digital supply chains even further.2. Ubiquitous screens will demand greater content mobility. Content providers will want to measure engagement and captivation across not just multiple platforms, but also multiple screens to determine how to optimize the experience and ad placements. More screens mean more potential opportunities for ad impressions, provided the experience is carefully calibrated and tuned for a multiscreen lifestyle.3. Social dynamics and synergistic experiences will drive more event-based viewing. Although consumers will continue to demand time- and place-shifted viewing, M&E companies may want to consider creating event windows to drive relationships with content franchises, and deliver value to advertisers that is “DVR-proof.” While the viewing landscape grows increasingly fractured, consumers still want to be part of the collective social experience of events such as the World Cup or the Academy Awards. If content creators can build a strong social experience around a program (e.g., gaming and other social second screen experiences) viewers will not want to be left out and be driven back to the screen.4.Innovation in program discovery and television controls will drive new techniques to cut through the clutter. Content providers will have to engage in “content discovery optimization,” similar to today’s search engine optimization practices where content is continuously tuned so that it can be discovered by the broadest possible audience at the right time. This will need to go far beyond the descriptive show metadata and into parameters, such as sentiment of show, optimum watching circumstances (screen size, etc.) and shared creative heritage.5. Bingeing will drive more innovation in measurement and personalization. M&E companies will need to measure “bingeing” (where a viewer consumes several hours of the same back-to-back content in a single sitting) more granularly than broadcast television is measured today. Using data analytics, companies can then package the right experiences for advertisers and monetize them directly by building a model that caters to different types of binge viewers. The challenge to be solved is obtaining this data from distribution partners.6. New entrants demanding unique content will drive innovation beyond the traditional studio system. New relationship models will enable a larger number of players within the M&E industry to take more creative risks. The corresponding impact on systems to track and calculate rights, profits and participations, and revenue realization will have to account for an even more complex fabric of participants and interested parties.প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয় যে, এজন্য টিভি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দর্শকদের সাথে আরও ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এমনকি তাদেরকে দর্শক-শ্রোতার পছন্দ অপছন্দ জানার জন্যও বিনিয়োগ করতে হবে। তারা উপসংহারে মন্তব্য করে;Ultimately, we see the future of television as a carefully crafted omniscreen experience that combines great content with equally compelling social and gamification techniques tailored to an individual viewer’s stated and implicit preferences. This, we believe, is the key to winning the future of television in a world where consumers are in control. (www.ey.com/GL/en)আমি মনে করি, বস্তুত টিভি বলি, সিনেমা বলি, রেডিও বলি বা পত্রিকা বলি তার বাহন হিসেবে ইন্টারনেটের একচ্ছত্র আধিপত্য গড়ে ওঠার পর এর বিষয়বস্তুর কোন সীমানা থাকবে না। ফলে বিনোদন বা তথ্য-উপাত্ত যার যা খুশি তার সবটাই ইন্টারনেটে পাওয়া যাবে।বাংলাদেশে বিদ্যমান টিভি ব্যবস্থার আমূল রূপান্তরটা আসলে দেশে ইন্টারনেটের প্রসারের ওপর নির্ভরশীল। এখনও আমরা দেশের জেলা শহরগুলোতে থ্রিজি  নেই। খুব সামান্য গতিতে আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহৃত হয়। এটির পরিবর্তন মানে বাংলাদেশটারই পরিবর্তন। আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি সেটি কেবল দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটিতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মাঝে এর মূল্য আসার ওপর নির্ভরশীল। টিভি-পত্রিকা-রেডিও-সিনেমা সব মিডিয়ারই একটি গন্তব্য-ইন্টারনেট।খুব সঙ্গতকারণেই আমি মনে করি যে টিভি দেখার যন্ত্র এবং সম্প্রচারের উপায়ে পরিবর্তনের পাশাপাশি রূপান্তরটা এর বিষয়বস্তু বা চরিত্রেও হবে।আমি নিজে একাত্তর নিউজটিভি নামক একটি আইপি টিভির শুভেচ্ছাবাণীতে লিখেছি, “ রেডিও টিভি তো ইন্টারনেটেই থাকবে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিলো মাত্র ৮ লাখ সেখানে ২০১৪ সালের অক্টোবরে সেই সংখ্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সোয়া চার কোটি। অঙ্কের হিসাবে এই ধারাবাহিকতা যদি অব্যাহত থাকে, এবং যা থাকাই স্বাভাবিক তবে সামনের পাঁচ বছরে এই সংখ্যা ১১ কোটি অতিক্রম করবে। আমার মতে ২০২৫ সালের মধ্যে সারা দুনিয়াতে এমন একজন মানুষ পাওয়া যাবে না যার ইন্টারনেট ব্যবহার করার ক্ষমতা ও দক্ষতা থাকা স্বত্ত্বেও তিনি ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন না।কেউ কি চোখ বুজে কখনও ভেবে দেখেছেন যে, এর প্রভাবটা কোথায় কিভাবে পড়বে? অর্থাৎ পুরো জীবনটাই ইন্টারনেট নির্ভর হবে।  আর এটিকে অবশ্যই ইন্টারনেট সভ্যতা বলতে হবে।  এমন দুনিয়াতে জীবনটা কেমন হতে পারে? বাসাবাড়িতে ইন্টারনেটের গতি থাকবে ২ গিগাবিট।  ব্যবসা-বাণিজ্য-শিল্প-কল কারখানা পরিচালিত হবে ইন্টারনেটে।  জ্ঞানার্জন ইন্টারনেটে।  সরকারও ইন্টারনেটে।  প্রেম-ভালবাসা-সামাজিকতা-বিনোদন; তথা জীবনধারা সবই ইন্টারনেটে। তাহলে রেডিও-টেলিভিশন কি হবে? কেউ টেলিভিশন সেটে টিভি দেখবে না? কোনো এক ধরনের ডিজিটাল ডিভাইসেই থাকবে সম্প্রচার মাধ্যম এবং অন্যান্য মিডিয়া? বিটিআরসি থেকে তরঙ্গ বরাদ্দ নেবার প্রয়োজন হবে না।  সেই কাজটি ইন্টারনেট সেবাদানকারীর জন্য সীমিত থাকবে।  সম্প্রচারকারী ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইডথ কিনবেন।  দর্শক-শ্রোতা রেডিও-টিভির সাথে ইন্টারএ্যাক্ট করবে।  সম্প্রচারের সময় বলতে কিছু থাকবে না।  চব্বিশ ঘণ্টা বলতে কিছু নেই।  ৩৬৫ দিন নামকও কিছু নেই।  খবর, নাটক-প্রামাণ্য চিত্র-চলচ্চিত্র; কোনোটাই কখনও মারা যাবে না।  নিজের ডিজিটাল যন্ত্রে নয়, এর সবাই থাকবে সাইবার আকাশে।  ইন্টারনেটের মতোই সম্প্রচবার বা মিডিয়ার রাষ্ট্রীয় সীমানা বলতে কিছু থাকবে না।  হতে পারে ভাষার সীমানাটাও বিলীন হবে।  এসব মাধ্যমে কনটেন্টস কেবল যে সম্প্রচারকারীই তৈরি করবেন তা নয়-সাধারণ মানুষ-দর্শক শ্রোতাও অংশ নেবে এই মহাযজ্ঞে।  তবে পেশাদারিত্ব বা সৃজনশীলতার সাথে কোনো আপোস করা যাবে না।  কম্পিউটার প্রোগ্রামিং হবে সম্প্রচার মাধ্যমের কনটেন্ট নির্মাণের মূল স্রোত।  সম্ভবত এর চাইতে বেশি কিছু আমি এখন কল্পনাও করতে পারিনা।  তবে সহসাই ইন্টারনেটও থাকবে না-অন্য কোনো নেটওয়ার্ক ইন্টারনেটের স্হলাভিষিক্ত হবে। যিনি বা যারাই সামনের আগামী এক দশকের জন্য সম্প্রচার মাধ্যমে বসবাস করতে চান তার বা তাদের কাছে সবিনয়ে আবেদন হচ্ছে কথাগুলো মনে রাখার জন্য। লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদএইচআর/পিআর