দেশজুড়ে

‘নৌকা ছাড়া চলাচল করন যায় না’

‘পাঁচ বিঘা জমিতে (১ বিঘা=৩৩ শতাংশ) ধানি গোল্ড জাতের ধান লাগাইছিলাম। বন্যার পানি চার বিঘা জমির ধানই খাইয়া গেছে। কোনো মতে এক বিঘা জমির ধান বাঁইচ্চা আছে। পানি দুই দিন ধইরা কিছুডা কমছে। তারপরেও বাড়িভিটার চারিদিকেই পানি। নৌকা ছাড়া চলাচল করন যায় না।’ 

কথাগুলো বলছিলেন শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়নের ৭ নং চর গ্রামের কৃষক আক্কাছ আলী (৫৬)। 

ওই গ্রামের আরেক কৃষক মো. দুলু মিয়া জানান, বোরো ধান কেটেই তিনি সাত পাখি জমিতে (১ পাখি=৩০ শতাংশ) পাট লাগিয়েছিলেন। আর আউশ ধান করেছিলেন চার পাখি জমিতে। কিন্তু বন্যার পানিতে ডুবে তার সব ধান-পাট একদম নষ্ট হয়ে গেছে। 

তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতির কথা বইলা আর কি অবো, যা অবার তাতো অইয়াই গেছে। আমরাতো আর কোনো ক্ষতিপুরণ পামুনা। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক জমির ধান, পাট ও কিছু তরিতরকারির খেত বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। 

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে খেতের আবাদি ফসল। যদিও দুই দিন ধরে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তারপরও যে ফসলগুলো পানিতে তলিয়েছে, সেগুলো আর ঘরে তোলা যাবে না পচে নষ্ট হয়ে গেছে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যদিও এবার বন্যার প্রকোপ তেমন নয়, তারপরও চলতি বন্যায় কামারেরচর ইউনিয়নের প্রায় ৪০০ বিঘা জমির পাট এবং অন্তত ২৫০ বিঘা জমির ধান ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু সবজির আবাদও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। 

কামারেরচর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি মেম্বার এমদাদুল হক মাঠু মিয়া (৫৮) বলেন, আমার ৪০ শতাংশ জমি হঠাৎ কইরা পানি আইসা বেগুন টালডা (বেগুন আবাদ) নষ্ট হইয়া গেলো। আমার এই খেতের কমপক্ষে এক লাখ ট্যাকার বেগুন বিক্রি করতাম। এই এক লাখ ট্যাকা আমার লস।

৬ নং চরের বাসিন্দা কৃষক মো. তোত মিয়া (৪২) বলেন, ছয় বিঘায় পাট বুনেছিলাম। আউশ ধান লাগাইছিলাম আরও দেড় বিঘা জমিতে। বানের পানিতে সব খাইয়া গেছে। 

কিছু জমি গাঙেও (পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ) ভাইঙ্গা নিছে গা। ১০/১২ হাজার ট্যাহা খরচ কইরা জমিন আবাদ করছিলাম। ফসল ঘরে তুলবার পারলে ৬০/৭০ হাজার ট্যাহা পাইতাম। এহনতো সব শেষ। 

বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া ফসল নিয়ে আলাপকালে নিজের ক্ষয়ক্ষতির তুলে ধরেন এই প্রান্তিক কৃষক আরও বলেন, কিছু ঋণ আছে। ঋণ কইরা জমিতে ডালছি, নিজেরাও খাইছি। মুনে করছিলাম ফসলডা উঠলে ঋণগুলা শোধ করমু। কিন্তু ইবার আর ঋণ শোধ করা সম্ভব হবো না।’

তিনি এই প্রতিবেদককে অনুরোধ করে বলেন, আমি যেন কিছু সাহায্য-সহায়তা পাইতে পারি, আমার নামডা ইট্টু সরকারি তালিকার মইধ্যে তুইল্লা দিবেন।

এ ব্যাপারে শেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পিকন কুমার সাহা বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদে পানিবৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের কিছু এলাকায় আবাদি জমিতে পানি ওঠেছিল। কিছু ধান-পাট পানিতে ডুবেছিল। তবে যে আবাদি জমির ফসল ডুবেছিল তার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ রিপোর্ট করার মতো নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।  

হাকিম বাবুল/আরএআর/পিআর