পুঁজিবাজার সম্পর্কে জেনে বুঝে ও পড়াশোনা করে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমিতে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ-২০১৭ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক খায়রুল হোসেনের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিতি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আইন-কানুন ও নীতিমালার দুর্বলতার কারণে ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধস নামে। এরপর চার বছর শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রশাসনিক এবং আইন-কানুন, নীতিমালার সংস্কার করা হয়। এর ফলশ্রুতিতে ২০১৩ সালে পুজিবাজার ভালো অবস্থানে পৌঁছে, যা এখনো স্থিতিশীল আছে।
তিনি বলেন, শেয়ারবোজারে জেনে বুঝে বিনিয়োগ না করলে বড় দুর্দশার মধ্যে পড়তে হয়। যেটা আমার ক্ষেত্রেও হয়েছিল।
নিজের জীবনের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী জানান, ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানে করাচিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় সেখানকার স্টক মার্কেট বিনিয়োগ করি এবং লাভবানও হই। ১৯৬৯ সালে আইসিপিতে (ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব পাকিস্তান) কাগজপত্র জমা দিয়ে বিদেশে যাই। এর মধ্যে ১৯৭১ সালে দেশ ভাগ হওয়ায় বিনিয়োগের অর্থ আর ফেরত পাইনি। তখন আমার ৩৩ হাজার টাকার মতো বিনিয়োগ ছিল। এরপর ১৯৯০ সালের দিকে কিছু বিনিয়োগ করলেও ২০০২ সালের পর আর নতুন বিনিয়োগ করিনি।
এখন এখানে বিনিয়োগের পরিবেশ ভালো রযেছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন বিনিয়োগের জন্য একটি প্রতিষ্ঠিত ফ্রেমওয়ার্ক আছে। যে কেউ চাইলে বিনিয়োগ করতে পারেন।
বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক খায়রুল হোসেন বলেন, যে দেশে শিক্ষার হার এক শতাংশ বেড়ে যায় সেই দেশে জিডিপি বাড়ে ৩ শতাংশ। তাই শিক্ষার ওপর আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, একজন বিনিয়োগকারীর পুঁজি সুরক্ষার জন্যে বিনিয়োগ শিক্ষা প্রয়োজন। সম্প্রতি ভারত পাঠ্যক্রমে বিনিয়োগ শিক্ষা চালু করেছে, শ্রীলঙ্কায় ৮ম শ্রেণী থেকে বিনিয়োগ শিক্ষা দেয়া হয়। তেমনি বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম শক্তিশালী হলে পুঁজিবাজার শক্তিশালী হবে, কারণ বিনিয়োগকারীরাই পুঁজিবাজারের মূল চালিকাশক্তি। পুঁজিবাজার শক্তিশালী হলে দেশ বিদেশি সহায়তা, ব্যাংক ঋণনির্ভরতা ছাড়াই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হবে। এ জন্য পাঠ্যক্রমে বিনিয়োগ শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি। বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, এখন থেকে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দিতে ও দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে বিএসইসিতে কাজ করবেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান নিজ জীবনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার থাকাবস্থায় সম্পর্কে মামা-শ্বশুর তাকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য তাগাদা দিতেন। বলতেন, পুঁজিবাজারে ১০-২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে ৩-৪ মাসের মাথায় ২০-৩০ হাজার টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। তখন আর বিনিয়োগ করা হয়নি। এরপর তিনি মারা যান। পরিবারের সবাই মনে করে, শেয়ারবাজার ধসের কারণে তার বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তিনি মারা গেছেন।
তিনি আরো বলেন, ২০১০ সালের পর শেয়ার বাজার ধসের পর আইন-কানুন, নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনি কাঠামোর দিক থেকে বিএসইসি অনেক বেশি শক্তিশালী। আন্তর্জাতিক অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসসিও) রেটিংয়ে বিএসইসি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছে। এখন বিনিয়োগকারীদের শিক্ষিত করতে পারলে শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ে তোলা সম্ভব। এ জন্য স্কুল ও কলেজের পাঠ্যপুস্তকে বিনিয়োগ শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
বিএসইসি’র শুভেচ্ছা দূত সাকিব আল হাসান বলেন, আমি যখন দেশের বাইরে খেলতে যায় তখন দেখি বিদেশি খেলোয়াড়রা (বিশেষ করে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা) মাঠে বসে পড়াশোনা করছে। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম কী নিয়ে পড়াশুনা করছো। তথন তারা আমাকে বললো স্টক এক্সচেঞ্জ বিষয়ে পড়াশুনা করছি। অর্থাৎ তারা শেয়ারবাজার বিষয়ে পড়াশোনা করে জেনে বুঝে বিনিয়োগ করেন।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্য সাকিব আল হাসান বলেন, যেহেতু পুঁজি আপনার তাই জেনে বুঝে আপনাকেই বিনিয়োগ করতে হবে। এ জন্য পড়াশোনার বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে জানানো হয় বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অ্যাসোসিয়েশন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনের (আইওএসসিও) ডাকে প্রথমবারের মতো ৮১টি দেশে এ দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও এ সপ্তাহ উদযাপন করছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
সোমবার ২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ চলবে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত। শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বিষয়ে সচেতন করাই এর উদ্দেশ্য। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে একটি র্যালি বের হয়। র্যালিটি মৎস ভবন থেকে প্রেস ক্লাব হয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে শেষ হয়।
এসআই/একে/এমএস