দেশজুড়ে

ভুয়া কাগজে তিন ব্যক্তির বিদেশ গমন : ২ এসআই সাসপেন্ড

ভুয়া পরিচয় ও জাল কাগজপত্র দেখিয়ে বিদেশ যাত্রা ঠেকানোর কোনো ব্যবস্থা নেই বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে। পুলিশ ও পাসপোর্ট কর্মকর্তারা এ দুর্বলতার বিষয়টি স্বীকারও করছেন। আর এ সুযোগে ভুয়া পরিচয় ও জাল কাগজপত্র দেখিয়ে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে সম্প্রতি তিন ব্যক্তি দেশ ছেড়েছেন।  যা তারা ধরতে পারেননি।  এ অভিযোগে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে দায়িত্বরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) জিয়াউর রহমান ও এসআই রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পুলিশ হেড কোয়ার্টারের স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয় যশোর পুলিশ প্রশাসনকে।  চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ওই নির্দেশনা এসে পৌঁছে যশোর পুলিশ সুপারের কাছে।  আর তার দু‘দিন পরে ওই দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে ইস্যু করা হয় ‘অফিসিয়াল পাসপোর্ট।  বিদেশ যাওয়ার জন্য তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ স্বাক্ষরিত সরকারি আদেশ (জিও) প্রয়োজন হয়।  বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটি ও নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) দেখিয়ে এখন ভারতে যেতে পারছেন। এভাবে অনেকেই সরকারি অফিসিয়াল পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ গিয়ে আটক হচ্ছেন।  বিদেশ থেকে বলা হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা সাজিয়ে বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার করা হচ্ছে।  দূতাবাস থেকে এ সংক্রান্ত খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হলে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে মে মাসের শেষের দিকে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ চারজনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।  একই ঘটনার সূত্র ধরে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে কর্মরত পুলিশের দুই উপ-পরিদর্শক (এসআই) জিয়াউর রহমান ও রবিউল ইসলামকে ৯ জুন সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করা হয়।এ ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত এসআই জিয়াউর রহমান জানান, যে তিন ব্যক্তি ভুয়া পরিচয় ও জাল কাগজপত্র দেখিয়ে বেনাপোল সীমান্ত পার হয়েছেন, তাদের মধ্যে দু’জন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আরেকজন সমবায় অধিদফতরের কর্মকর্তা পরিচয় দেন।  সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে তাদের যথেষ্ট সম্মান দেখিয়েছি।  কিন্তু, তারা যে ভুয়া পরিচয় ও জাল কাগজপত্র ব্যবহার করছেন, তা কীভাবে জানব ?বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম খান বলেন, চেকপোস্টে এমন কোনো যন্ত্র নেই, যা দিয়ে কাগজপত্র সঠিক কি জাল তা পরীক্ষা করা যায়।  এ ছাড়া বেনাপোল হলো বাংলাদেশের ব্যস্ততম চেকপোস্ট।  এ চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াত করে থাকেন।  সকাল থেকে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের লম্বা লাইন পড়ে।  একজনের কাগজপত্র যাচাইয়ে বেশি সময় ব্যয় করলে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যরা বিরক্ত হন।  সে কারণে তড়িঘড়ি কাজ সারতে হয়।যশোর পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, পুলিশ হেড কোয়ার্টারের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) নির্দেশনা পেয়ে যশোর পুলিশ প্রশাসন ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।  তারা বর্তমানে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, ইমিগ্রেশন চেকপোস্টগুলোতে জালিয়াতি ধরার কোনো ম্যাকানিজম নেই।  জিও ইস্যু হয় সচরাচর সচিব পর্যায় থেকে।  একজন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ অফিসার কখনও সচিবের কাছে জানতে চাইতে পারেন না, জিওটি আসল না জাল।পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক আবু নোমান মো. জাকির হোসেন বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয়ধারী ব্যক্তিরা যে এনওসি নিয়ে পাসপোর্ট করতে আসেন, তা যাচাই করার কোনো ব্যবস্থা নেই।  আর জিও ইস্যু করা হয় সচিবালয় থেকে।  মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা তা কীভাবে পরীক্ষা করবেন? মানবপাচারের কারণে এখন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক বলেন, ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তে একজন সিনিয়র অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের কাছে কৈফিয়তও তলব করা হয়েছে।  কৈফিয়তের জবাব এবং তদন্ত রিপোর্ট হাতে এলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জামাল হোসেন/ এমএএস/পিআর