কৃষিতে ক্রমান্বয়ে শ্রমিক সংকটের কারণে যন্ত্রপাতি ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা। শ্রম ও সময় সাশ্রয়ের কারণে কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে কৃষি যন্ত্রপাতি। তবে কৃষি যন্ত্রপাতি কিনে বিক্রয়োত্তর সেবা না পাওয়ায় প্রতারিত হচ্ছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, চাষাবাদের ক্ষেত্রে কৃষকের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় পাওয়ার টিলার। যন্ত্রটি কৃষকের ক্রয় ক্ষমতার নাগালে আনতে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকিও দিচ্ছে সরকার। তবে যন্ত্রটি কিনে প্রায় প্রতারিত হচ্ছেন কৃষক। বিক্রয়ের পর কোম্পানির পক্ষ থেকে বিক্রয়োত্তর সেবা না দেয়ায় বিপাকে পড়ছেন তারা। অপরদিকে এ বিষয়ে যথাযথ নীতিমালা না থাকায় ব্যবস্থাও নিতে পারছে না স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার শহিদুল এক বছর আগে ডংফেং কোম্পানির স্থানীয় ডিলারের মাধ্যমে পাওয়ার টিলার কিনেন। কেনার পর বিয়ারিং, খারা চেইন, ইয়ার ক্লিনার, পিছনের চাকা পরিবর্তন করতে হয়েছে। তবে কোম্পানির কোনো সার্ভিসিং সেন্টার না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাকে।
একই অবস্থা নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পলাশ মিয়ার। ৮ মাস আগে সাইফেং কোম্পানির পাওয়ার টিলার কিনে গত ২ মাসে তিনবার চেইন পরিবর্তন করেছেন। গাড়ির চেসিস ভেঙে যাওয়ায় সেটিও পরিবর্তন করতে হয়েছে। গত ৮ মাসে পাওয়ার টিলার দিয়ে ৭০ হাজার টাকা আয় করেছেন। কিন্তু মেরামত করতেই খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। আর যন্ত্রটি মেরামতে ডিলার কিংবা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কোনো সহযোগিতা পাননি তিনি।
বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের যৌথ জরিপের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ব্যবহার্য পাওয়ার টিলারের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখ। গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার পাওয়ার টিলার আমদানি করা হচ্ছে। পাওয়ার টিলারের বাজারে ৭০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে চিটাগাং বিল্ডার্স লিমিটেড। ২০১৬ সালে ৪২০ কোটি এবং ২০১৭ সালে সাড়ে চারশ কোটি টাকার পাওয়ার টিলার বিক্রি হয়েছে। আর দেশের বাজারে ৭০ শতাংশের বেশি দখল রয়েছে চিটাগাং বিল্ডার্স অ্যান্ড মেশিনারি লিমিটেডের। এর বাইরে কিছু প্রতিষ্ঠান পাওয়ার টিলার আমদানি করে থাকে। এ বিষয়ে চিটাগাং বিল্ডার্স অ্যান্ড মেশিনারি লিমিটেডের মহাব্যস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের পাওয়ার টিলারের এক বছরের ওয়ারেন্টি আছে। কোনো ক্রেতা যদি ডিলার পয়েন্ট এসে অভিযোগ করে তবে সেখানেই সেবা দেয়া হচ্ছে। সম্ভব হলে বাড়িতেও দেয়া হচ্ছে। তবে অন্য কোনো কোম্পানির মেশিনে বিক্রয়োত্তর সেবা দেয়া হয় না।
এ বিষয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের অধ্যাপক মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, সার্বিকভাবে কৃষিতে শ্রমিক সংকট ও উৎপাদন বাড়াতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের বিকল্প নেই। সঠিক যন্ত্র যেমন কৃষকের কাছে পৌঁছাতে হবে তেমনি সেটির বিক্রয় পরবর্তী সেবাও নিশ্চিত করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান কৃষি যন্ত্রপাতি বিক্রয় করবে তাদের অবশ্যই বিক্রয়োত্তর সেবা কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হবে। তা না হলে কৃষকরা যন্ত্রপাতি ব্যবহারে আগ্রহ হারাবে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোকে দক্ষ কারিগর তৈরিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। সরকারকেও এ বিষয়ে সমন্বিত নীতিমালার মাধ্যমে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এমএ/এএইচ/আরআইপি