দেশজুড়ে

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ২ দিন ধরে দীর্ঘ যানজট

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গত দুই দিন ধরে লেগে আছে দীর্ঘ যানজট। শুক্রবার দুপুরের পর থেকে শুরু হওয়া যানজট শনিবার বিকেল ৬টা পর্যন্ত থেমে থেমে তা অব্যাহত রয়েছে। শনিবার ১২টার পর যানজট কিছুটা কমতে থাকলেও বিকেল ৪টার পর থেকে তা আবারো শুরু হয়। মহাসড়কের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা থেকে বাসাইল উপজেলা বাঐখোলা পর্যন্ত প্রায় ৩৭ কিলোমিটার এলাকায় যানজট অব্যাহত রয়েছে। শনিবার বিকেল ৬টায় মহাসড়কে এ দৃশ্য দেখা গেছে। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করলেও উত্তরবঙ্গের প্রায় ২২টি জেলার ঢাকাগামী শত শত যানবাহন যানজটে আটকে রয়েছে। যানজটে আটকা পড়া যানবাহন থেমে থেমে চললেও স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশ।এছাড়া যানজটের পাশাপাশি শুক্রবার রাতে ও শনিবার থেমে থেমে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির কারণে বাসের ছাদে আসা যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।  পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ঈদের ছুটি শেষে শুক্রবার দুপুরের পর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যাত্রীদের পাশাপাশি মহাসড়কে যানবাহনের চাপ ক্রমে বাড়তে থাকে। ফলে যানজটের শুরু হয়। যানজট একপর্যায়ে মহাসড়কের চন্দ্র হতে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ হয়। শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত থেমে থেমে যানবাহন চলাচল করলেও রাতভর যানজটে আটকে পড়ে শত শত যানবাহন। যানজট একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। যানজটে অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীরা। তবে যানজটে আটকে পড়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নারী ও শিশুরা। প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে তাদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে বলে জানা গেছে।শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে দেওহাটা ব্রিজের উপর একটি ট্রাক বিকল হলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় এক ঘন্টা পরে পুলিশ রেকার নিয়ে বিকল হওয়া ট্রাকটি সরিয়ে নিলে থেমে থেমে যান চলাচল শুরু হয়। শনিবার বেলা ১২টার পর থেকে যানজট কিছুটা কমতে থাকে। বিকেল ছয়টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে বাসাইলের বাঐখোলা পর্যন্ত প্রায় ৩৭ কিলোমিটার এলাকায় থেমে থেমে যানজট দেখা গেছে।মির্জাপুর উপজেলা পরিষদের সদস্য আলো রানী বিশ্বাস জানান, ভোর পাঁচটার দিকে উত্তরা থেকে রওনা হয়ে সকাল সাড়ে নয়টায় মির্জাপুরে এসে পৌঁছান।উপজেলার জামুর্কী ইউনিয়নের কাটরা গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী আকবর আলী জানান, বিকেল ৫টায় টাঙ্গাইল থেমে পাকুল্যা আসার জন্য রওনা হন তিনি। ১৩ কিলোমিটার রাস্তা আসতে তার সময় লাগে প্রায় আধা ঘন্টা। পথিমধ্যে বাঐখোলা এলাকায় যানজটে পড়েন। পরে তিনি দেলদুয়ারের কোপাখী গ্রামের ভেতর দিয়ে পাকুল্যা আসেন। সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী এসআর পরিবহনের যাত্রী পূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী আনোয়ার হোসেন বলেন, ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরার জন্য রওনা হয়েছি। দুপুর ১২টায় করটিয়ায় যানজটে আটকে পড়ি। করটিয়া হতে মির্জাপুর বাইপাস এলাকা পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার রাস্তা আসতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সময় লেগেছে বলে জানান তিনি। বগুড়া থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী এসটি পরিবহনের হেলপার সুভাষ সাহা জানান, যানজটের কারণে বগুড়া থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত আসতে প্রায় ৯ ঘণ্টা সময় লেগেছে।  মির্জাপুরের সেন্ট্রি পোস্টের সার্জেন্ট জামাল হোসেন জানান, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় যানজট দেখা দিয়েছে। তাছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন বিকল হওয়ায় থেমে থেমে যানবাহন চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।মির্জাপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন এবং গোড়াই হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর বলেন, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া শুক্রবার সারা দিনই থেমে থেমে বৃষ্টি এবং গর্তের কারণে মহাসড়কে গাড়ির গতি কম ছিল। ঈদের ছুটি শেষ হওয়ায় শুক্রবার দুপুরের পর থেকেই মহাসড়কে গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। একদিকে অব্যাহত গাড়ির চাপ অন্যদিকে মির্জাপুর-চন্দ্রা মহাসড়কে গাড়ির ধীর গতির কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলেও জানান তারা। টাঙ্গাইলের দিকে যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। ঢাকার দিকে যানবাহনের চাপ বেশি হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া শুক্রবার রাতে বৃষ্টি হওয়ায় যানজট নিরসনে পুলিশ রাতে কাজ করতে পারেনি। তবে শনিবার সকাল থেকে যানজট নিরসনে পুলিশ কাজ করছে বলে তারা উল্লেখ করেন।এস এম এরশাদ/এআরএ/এমআরআই