কুষ্টিয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অন্তত ২৫ নেতা কর্মী গড়াই ও কালি নদী দখল করে বাড়ি, মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। সরকারি খাস জমি দেখিয়ে ফলজ বাগান আর প্লট বিক্রি করা হচ্ছে নদী পাড়ের জমি। নদী দখল করে পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ চলছে। এতে এক সময়ের প্রবল খরস্রোতা গড়াই-কালি নদী শুকিয়ে এখন খালে পরিণত হচ্ছে। দখলমুক্ত করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা না হলে হুমকির মুখে পড়বে খুলনার সুন্দরবনের কোটি কোটি টাকার বনজ সম্পদ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পদ্মা-গড়াই, কালি নদী, মাথা ভাঙা, কুমার, হিসনা ও সাগরখালি নদী কুষ্টিয়ার বুক চিরে বয়ে গেছে। অথচ গড়াই নদীর দুপাশ দখল করে বসতবাড়ি, পাকা দোকান ঘর, ফলজ বাগান, মসজিদ, বাজারসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করায় নদী এখন খালে পরিণত হয়েছে। দখলের শীর্ষে রয়েছেন স্থানীয় বিএনপির ছাত্রদল ও যুবলীগ নেতাসহ অন্তত ১০-১৫ জনের একটি চক্র। প্লট বানিয়ে ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা নিয়ে দরিদ্র মানুষের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে নদীর জমি। কেউ আবার নদীর চরেই নির্মাণ করেছে অট্টলিকা।
এ দিকে এসব অভিযোগ প্রমাণ দিতে পারলেই ডবল টাকা দেয়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন দখলকারী পৌর কাউন্সিলর রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, এটা দখলদারী নয়। ভূমিহীনদের পূর্ণবাসন করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া শহরের কোল ঘেঁষে বাউল সম্রাট লালন সাঁইর মাজারের সামনে দিয়ে বয়ে গেছে কালী নদী। আজ সেই নদীটি দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে দ্বিতল থেকে চারতলা মার্কেট, বাড়ি, বাজারসহ নানা স্থাপনা। এতোভাবে দখলে নিয়েও শান্ত থাকেনি। এর মধ্যে আবার নদীতে বাধ দিয়ে চলছে মাছ চাষ। আর এসব দখলের শীর্ষে আছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জিয়া ও বিএনপির স্থানীয় পোকাড়ি মেম্বার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভয়ে সাংবাদিকদের কাছে দখলকারীদের নাম বলতে রাজী হননি কেউই।
স্থানীয় নদী রক্ষা আন্দোলনকারীরা জানান, ২০১৩ সালের নদী কমিশন আইনে নদীকে কোনোভাবেই দখল বা ভরাট করে কোনো স্থাপনা করা যাবে না। সেই সঙ্গে নদীর পাড় থেকে ১শ ৫৯ মিটার দূরে থাকার কথা বলা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে কুষ্টিয়া জেলা এক সময় নদী শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হবে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো.জহির রায়হান বলেন, নদীর শ্রেণির জমি লিজ দেয়ার কোনো বিধান নেই। কেউ যদি অবৈধ দখলদার থাকে তবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আল-মামুন সাগর/আরএ/জেআইএম