দুপুর ১টা। রাজধানীর চাঁনখারপুলের হোসেনি দালান থেকে সকাল ১০টায় শুরু হওয়া মহররমের তাজিয়া মিছিলে মানুষের স্রোত তখন নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত ঠেকেছে। কেউ একজন চেঁচিয়ে উঠে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘মিছিলের শেষ মাথা এখন কোথায়?’ জবাবে জানা গেল, মিছিলের লেজ এখনও আজিমপুর এতিমখানার সামনে।
এ সময় আজিমপুর থেকে নীলক্ষেতমুখী রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে শোকের মাতম গীত গাইতে গাইতে ধানমন্ডির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। মিছিলকে সুশৃঙ্খলভাবে এগিয়ে যেতে সহায়তা করছিলেন শতশত পুলিশ, র্যাব ও ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
হঠাৎ করে পুলিশের একজন কর্মকর্তাকে মধ্যবয়সী খালি গায়ের এক লোককে টানতে টানতে সামনে নিয়ে যেতে দেখা গেল। যুবকের বুক ও পেট রক্তাক্ত। যে কর্মকর্তা তাকে থাবা দিয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন তার হাতও রক্তে রঞ্জিত। জানা গেল, লোকটি ছুরি দিয়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ মাতম করে বুক ও পিঠ রক্তাক্ত করেছে। পুলিশের নিষেধাজ্ঞা আদেশ অমান্য করে এ কাজ করায় তাকে আটক করা হয়েছে। তবে মিছিলের অন্যদের অনুরোধে একপর্যায়ে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়।
বিচ্ছিন্ন এই একটি ছোট্ট দুর্ঘটনা ছাড়া মহররমের তাজিয়া মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়। কয়েক বছর আগেও মহররমের মিছিলে শতশত আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা ছুরি-চাকু হাতে মিছিলে অংশগ্রহণ করতেন। ‘হায় হোসেন’, ‘হায় হোসেন’ বলে বুকে ও পিঠে এক ধরনের ছোঁড়া চালিয়ে রক্তাক্ত করতেন। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে পুলিশের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত কয়েক বছর যাবত মহররমের মিছিলে সেই রক্তরঞ্জিত দেহ আর দেখা যায় না। হাজার হাজার মানুষকে খুবই মার্জিত উপায়ে নিচুস্বরে মাতম করতে দেখা যায়। এবারও এর ব্যতিক্রম হলো না।
আজ এ প্রতিবেদক নীলক্ষেত মোড় ও আজিমপুর এলাকায় আড়াই ঘণ্টা অবস্থানকালে কাউকে উগ্রভাবে মাতম করতে দেখেননি। শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করতে পুলিশকে গলদঘর্ম হতে হয়েছে। তাদেরকে মিছিলের সঙ্গে হেঁটে নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে।
আজ সরকারি ছুটির দিন হলেও মহররমের মিছিলের কারণে আজিমপুর, নীলক্ষেতসহ আশপাশের মানুষকে সকাল থেকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ অনেক রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে রাখায় তিন ঘণ্টা পর্যন্ত অনেককে রাস্তায় বসে থাকতে দেখা গেছে।
এমইউ/এসআর/এমএস