দেশজুড়ে

বৃদ্ধার মৃত্যু নিয়ে আ.লীগের দুই নেতার সমর্থকদের রাজনীতি

দুই আওয়ামী লীগ নেতার দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হওয়া বৃদ্ধার গলা কেটে দিয়েছেন গ্রাম্য মাতব্বর ও স্বজনরা। এ ঘটনায় মৃত বৃদ্ধার স্বজনসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নরসিংদী সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের আলীপুরা গ্রামের মধ্যপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত বৃদ্ধার নাম শহর বানু (৬০)। আলীপুরা গ্রামের মধ্যপাড়া এলাকার সিরাজুদ্দীনের স্ত্রী তিনি।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে গ্রেফতার চারজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মৃত্যুর পর বৃদ্ধার গলা কাটার বিষয়টি স্বীকার করেন গ্রেফতাররা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় হার্ট অ্যাটাকে শহর বানুর মৃত্যু হয়। কিন্তু দুই আওয়ামী লীগ নেতার সমর্থকদের টেঁটাযুদ্ধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে শহর বানুর গলা কেটে দেন স্বজনরা। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নজরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাজাহান মনা ও আওয়ামী লীগ নেতা কামাল মিয়া ওরফে কামাল মেম্বারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছিল। দ্বন্দ্বের জেরে গত ৯ ডিসেম্বর তাদের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও টেঁটাযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

এতে কয়েকজন হতাহতসহ বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ঘটনার পর থেকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাজাহান মনা গ্রামছাড়া। এ ঘটনায় আলীপুরা গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা কামাল মেম্বারের বাড়ি থেকে ৫০০ টেঁটা উদ্ধার করে পুলিশ। একই সঙ্গে ১৩ জনকে আটক করা হয়।

এ ঘটনা তদন্তে শুক্রবার বিকেলে আলীপুরা গ্রামে যায় পুলিশ। তখন টেঁটাযুদ্ধের বিষয়ে ওই গ্রামের বৃদ্ধা শহর বানুর সঙ্গে কথা হয় পুলিশের। বৃদ্ধা শহর বানু শাজাহান মনার সমর্থক। পুলিশ চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় হার্ট অ্যাটাক করেন বৃদ্ধা শহর বানু। এ অবস্থায় তাকে পল্লীচিকিৎসক নজরুল ইসলামের কাছে নিলে মৃত ঘোষণা করেন।

পরে বৃদ্ধার স্বজন ও আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান মনার সমর্থকরা মৃত শহর বানুর গলা কেটে দেন। সেই সঙ্গে গলা কাটা অবস্থায় বৃদ্ধাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান তারা। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক জানান, অনেক আগেই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর-সার্কেল) শাহেদ আহাম্মেদ, থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) আতাউর রহমানসহ পুলিশের একটি টিম হাসপাতালে যান। পরে পুলিশ জানতে পারে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে শহর বানুর স্বাভাবিক মৃত্যুকে হত্যায় রূপ দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন স্বজন ও শাজাহান মনার সমর্থকরা।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর-সার্কেল) শাহেদ আহাম্মেদ বলেন, স্বাভাবিক মৃত্যুর পর শহর বানুর গলা কেটে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি গ্রেফতাররা স্বীকার করেন। হাসপাতালে আনার পথে বৃদ্ধার দুই স্বজন ও শাজাহান মনার দুই সমর্থক এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। গ্রেফতারদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

শাহেদ আহাম্মেদ আরও বলেন, ওই গ্রামের পল্লীচিকিৎসক কাজীমুদ্দিন ও নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছি আমরা। তারা আমাদের জানিয়েছেন, মৃত্যুর পর বৃদ্ধাকে তাদের কাছে আনা হয়। তখন মৃত ঘোষণা করেন তারা। ওই সময় বৃদ্ধার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না। পরে মৃত বৃদ্ধার গলা কেটে দেয়া হয়েছে।

সঞ্জিত সাহা/এএম/এমকেএইচ