দেশজুড়ে

পঞ্চগড়ে কেজিতে দুই টাকা কমে গেল কাঁচা চা পাতার মূল্য

পঞ্চগড়ে কাঁচা চা পাতার মূল্য কমার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। রোববার দুপুরে পঞ্চগড় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সন্তোষজনক মূল্য নির্ধারণ করা না হলে দূর্বার আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হয়।

পঞ্চগড়ের চা শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য এ ঘোষণা দেন বলে দাবি করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ক্ষুদ্র চা চাষি আমিরুল হক খোকন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নিলাম বাজারের গড় মূল্যের উপর ভিত্তি করে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত কাঁচা চা পাতার মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভায় প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৪ টাকা। পরবর্তী সভা না হওয়া পর্যন্ত ধার্য্যকৃত মূল্যে কাঁচা চা পাতা ক্রয় অব্যাহত থাকবে। কিন্তু ১৫টি নিলাম সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই মূল্য নির্ধারণ কমিটিকে অগ্রাহ্য করে চা কারখানা মালিকরা সিন্ডিকেট করে একতরফাভাবে ১৫ জুন থেকে ১২ টাকা কেজি দরে ক্রয় শুরু করেন। এ সিন্ডিকেট মূল্য হ্রাসের পাশাপাশি নানা অজুহাতে মনগড়া ও মর্জিমাফিক চা চাষিদের সরবরাহকৃত কাঁচা চা পাতার ওজন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর্তন করে মূল্য প্রদান করছেন।

ফলে চা বাগান মালিক/ চা চাষিরা উৎপাদন খরচের অনেক কম মূল্যে কাঁচা চা পাতা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে করে চাষিরা বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ অশুভ তৎপরতা পঞ্চগড়ের সম্ভাবনাময় চা শিল্পকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র।

সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চা চাষি আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, পঞ্চগড়ের চা শিল্পের সংকট নিরসন ও পঞ্চগড়ে চায়ের নিলাম মার্কেট চালু করতে শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী বরাবরে আবেদন করা হবে। কারখানায় সরবরাহকৃত নিজের উৎপাদিত কাঁচা চা পাতা কর্তন করার অভিযোগ রয়েছে। চা বোর্ডের মতে এক কেজি কাঁচা চা পাতা উৎপাদন করতে খরচ পড়ে ১৭ টাকা। সেখানে কর্তন করে মূল্য দাঁড়ায় ৫ থেকে ৭ টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এবিএম আখতারুজ্জামান শাহজাহান এবং আবু বকর ছিদ্দিকসহ চা বাগান মালিক ও ক্ষুদ্র চা চাষিরা উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে চা কারখানা মালিকদের সংগঠনের সভাপতি মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, নিলাম মার্কেটে চায়ের মূল্য কমে গেছে। বাগান মালিক ও চা চাষিরা বয়স্ক ও ভেজা কাঁচা চা পাতা সরবরাহ করছেন। কারখানা মালিকরা বাধ্য হয়ে কাঁচা চা পাতার মূল্য কমিয়েছেন এবং কর্তন করছেন।

চা পাতা মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আকস্মিক চায়ের কাঁচা পাতার দাম কমানোর বিষয়টি জেনেছি। এ নিয়ে সোমবার সভার আহ্বান করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত সংকট কেটে যাবে।

বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে পঞ্চগড়ে চা চাষ শুরু হয়। জেলায় বর্তমানে ৭ হাজার ৫৯৮ একর জমিতে চায়ের আবাদ হচ্ছে। প্রতিবছর চা চাষ বাড়ছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধিত বড় চা-বাগান ৮টি ও অনিবন্ধিত বড় চা-বাগান ১৮টি। ক্ষুদ্র চা-বাগান ৮৯১টি, অনিবন্ধিত পাঁচ হাজার ৮শ চা বাগান রয়েছে। চা প্রক্রিয়াজাতের জন্য কারখানা চালু রয়েছে ১৮টি। গত মৌসুমে জেলায় ৯২ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৫ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে।

সফিকুল আলম/এমএএস/এমকেএইচ