জাতীয়

ডেঙ্গু রোগীর বাসার আশপাশে মশার কীটনাশক প্রয়োগ জোরদার হচ্ছে

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী এ মুহূর্তে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ১২ জন ডেঙ্গু রোগী আছে বলে তথ্য পেয়েছে ডিএনসিসি। সম্প্রতি ডিএনসিসি এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরবাসীকে মশা থেকে সুরক্ষা দিতে আগামী সোমবার (২ নভেম্বর) থেকে মাঠে নামার উদ্যোগ নিয়েছে উত্তর সিটি করপোরেশন।

সে লক্ষ্যে ১০ দিনব্যাপী বিশেষ মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম (চিরুনি অভিযান) শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। চিরুনি অভিযানের পাশাপাশি মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হবে। তবে এবার মশা বা ডেঙ্গু থেকে নগরবাসীকে সুরক্ষা দিতে ভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে ডিএনসিসি।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, ডিএনসিসি এলাকার পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতালে এ পর্যন্ত ১২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করছে। ইতোমধ্যে এই ১২ জন রোগীর ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়েছে। ডিএনসিসি মেয়রের নির্দেশনা অনুযায়ী ডেঙ্গু রোগীর বাসার আশপাশে মশার কীটনাশক প্রয়োগ জোরদার করা হবে। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা যে সকল হাসপাতালে অবস্থান করছেন সে সকল হাসপাতালের আশপাশেও মশার কীটনাশক প্রয়োগ জোরদার করা হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান জসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন জানিয়েছেন, নগরবাসীকে মশা থেকে সুরক্ষা দিতে এবং সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগামী ২ নভেম্বর থেকে ডিএনসিসি এলাকায় ১০ দিনব্যাপী বিশেষ মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম (চিরুনি অভিযান) শুরু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। চিরুনি অভিযানের পাশাপাশি মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হবে।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনলাইনে এই বিষয়ে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনলাইনে এই জরুরি সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় মেয়র আতিকুল ইসলাম ডিএনসিসি এলাকায় অবস্থিত যে সকল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী রয়েছে সে সকল হাসপাতালের আশপাশে নিবিড়ভাবে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী থেকে এডিস মশার মাধ্যমে সংক্রমণ যাতে না ঘটে সেজন্য মেয়র এই নির্দেশ দেন।

এছাড়া হাসপাতালে অবস্থানরত ডেঙ্গু রোগীদের ঠিকানা সংগ্রহ করে তাদের বাসার আশপাশে মশক নিধন কার্যক্রম আরও জোরদার করাতে বলেন মেয়র।

আতিকুল ইসলাম বলেন, যেকোনো মূল্যে নগরবাসীকে মশা এবং মশাবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে হবে। এ জন্য আমরা চতুর্থ প্রজন্মের কীটনাশক আমদানি করেছি। ইতোমধ্যে কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে এবং আরও আনা হচ্ছে।

জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন জানান, গত জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে ডিএনসিসি এলাকায় তিনটি চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। চিরুনি অভিযানে প্রাপ্ত তথ্য একটি অ্যাপসে সংরক্ষণ করা হয়। অ্যাপসে সংরক্ষিত তথ্য অনুযায়ী মশার কীটনাশক প্রয়োগ জোরদার করা হয়েছে। এ সকল স্থানে সম্প্রতি যুক্তরাজ্য থেকে আনা চতুর্থ প্রজন্মের কীটনাশক নোভালিউরন প্রয়োগ করা হচ্ছে। এছাড়া ডিএনসিসির সর্বত্র নিয়মিত লার্ভিসাইডিং (মশার ডিম ও লার্ভা নিধনের কীটনাশক) ও এডাল্টিসাইডিং (উড়ন্ত মশা নিধনের কীটনাশক) অব্যাহত রয়েছে।

জানা গেছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদের তত্ত্বাবধানে এবং ডিএনসিসির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পৃথকভাবে তিন মাসব্যাপী সফল পরীক্ষা চালানোর পর এই কীটনাশকটি মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ করা হচ্ছে। এই দানাদার কীটনাশকটি একবার ব্যবহার করলে প্রায় ৯০ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে। এটি অত্যন্ত নিরাপদ কীটনাশক, যা শুধুমাত্র লার্ভা থেকে সৃষ্টি হয় এমন কীট ব্যতীত মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদেহে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে না বলে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

গবেষণাগারে পরীক্ষায় ভালো ফল পাওয়ায় ডিএনসিসি এলাকায় মশক নিধনে নতুন ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে। ডিএনসিসি আওতাধীন ৬২৯টি হট স্পটের মধ্যে ৪৬৮টি স্পটে ‘নোভা লিউরন’ নামের এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে। এটি সাধারণত ট্যাবলেট জাতীয় কীটনাশক। ১০ লিটার পরিষ্কার পানিতে একটি ট্যাবলেট এবং এটি ডোবা বা নালার পানিতে একই পরিমাণ পানিতে দুটো ট্যাবলেট মিশিয়ে দিলে প্রায় ৩ তিন মাস সেখানে মশার বংশবিস্তার বন্ধ হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই ওষুধে মশা মারে না। এটি শুধুমাত্র মশার বংশ বৃদ্ধি রোধ করে।

এএস/এফআর