বিনোদন

টিকে থাকলেও দর্শক টানতে পারছে না নবীন

এক সময় মানুষের চিত্তবিনোদনের বড় মাধ্যম ছিল চলচ্চিত্র। তাইতো সিনেমা হলে ভিড় করতে সব বয়সী মানুষ। কিন্তু নানা কারণে মানুষ হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এ কারণে ক্রমশ নিভে যাচ্ছে রুপালী পর্দার রঙ্গিন আলো। গত দুই দশকে বন্ধ হয়ে গেছে মানিকগঞ্জের ১২ সিনেমা হল।

হলের জায়গার চিহৃও নেই অনেকস্থানে। গড়ে ওঠেছে দোকানপাট, শপিং কমপ্লেক্স এবং বাসাবাড়ি। বর্তমানে পুরো জেলায় সিনেমা হল বলতে একমাত্র ‘নবীন সিনেমা’ হল। তাও মূল মালিক থেকে হাত বদল হয়ে কোনমতে সচল রয়েছে।

জানা যায়, নব্বয়ের দশকে মানিকগঞ্জ সদরসহ প্রতিটি উপজেলাতেই একাধিক হল ছিল। জেলায় প্রথম হল প্রতিষ্ঠা হয় স্বাধীনতারও আগে। এ সিনেমা হলের নাম ছিল ‘তৃপ্তি’। স্থানীয় কয়েজন ব্যবসায়ী মিলে হলটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে টাউন নামে শহরে আরেকটি হল প্রতিষ্ঠা হয়। দুটি হলই ব্যাপক ব্যবসা সফল হয়। কিন্তু শেষ পযর্ন্ত জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে না পারায় দুটিই বন্ধ হয়ে যায় দুই দশক আগে।

তৃপ্তি হলের জায়গায় গড়ে ওঠেছে তৃপ্তি শপিং কমপ্লেক্স। টাউন হলটি ব্যবহার করছে শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন নৃত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

জেলার হরিরামপুর উপজেলায় সিনেমা হল ছিল তিনটি। এগুলো হলো-লেছড়াগঞ্জ বাজারে পদ্মা, ঝিটকা বাজারে সুজন এবং ঝিটকা পোদ্দার বাড়ি এলাকায় মায়া সিনেমা হল। তবে সেগুলো এখন বন্ধ। হলের চিহৃটুকুও নেই অনেকস্থানে। হল ভেঙে গড়ে ওঠেছে দোকানপাট।

সিংগাইর উপজেলায় ছিল ‘প্যারাডাইস’ এবং ‘বায়রা’ নামে দুটি হল। এক সময় ব্যবসাসফল এসব সিনেমা হলও বন্ধ হয়েছে প্রায় একই সময়ে। প্যারাডাইসের জায়গায় নির্মাণ হয়েছে বাসা বাড়ি আর বায়রার জায়গায় গড়ে ওঠেছে দোকানপাট।

সাটুরিয়াতেও ‘আনন্দ মহল’ ও পূর্ণিমা নামে দুটি সিনেমা হল ছিল। বন্ধু, বাঘা বাঙালি, কার হাসি কে হাসে সিনেমার হিরো আনন্দ ‘আনন্দ মহল’ সিনেমা হলটি প্রতিষ্ঠা করেন বলে জানা গেছে। তার বাড়ি ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার রাজাপুরে।

আর পূর্ণিমা সিনেমা হলের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ঢাকার ব্যবসায়ী হালিম চৌধুরী। নানা সঙ্কটের মুখে পড়ে এক সময় দুটি হলই বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে হলের জায়গা বিক্রি করে দেয়া হয়। বর্তমানে সেখানে গড়ে ওঠেছে কোল্ড স্টোরেজ এবং দোকানপাট।

ঘিওর সদরে ‘মিলন’ নামে একটি হল ছিল। স্থানীয় কুস্তা গ্রামের মিলন সওদাগর নামে এক ব্যবসায়ী এটি প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু ১০ বছর আগে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। হলের জায়গায় গড়ে ওঠেছে মার্কেট।

সরকারি ভবন ভাড়া নিয়ে হল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল দৌলতপুরে। এটির নামও ছিল ‘মিলন’। সেটিও বন্ধ হয়ে যায় প্রায় দুই দশক আগে।

আশির দশকে সিনেমা হল চালু হয় শিবালয় উপজেলার আরিচা ঘাটে। মৎস্য আড়ৎ সংলগ্ন এ হলের প্রথমে নাম ছিল আনন্দময়ী সিনেমা হল। পরবর্তীতে মালিকানা পরিবর্তন হওযায় হলের নামকরণ হয় ঝিলমিল। দীর্ঘদিন ধরে এই হলটি বন্ধ রয়েছে। হলের ভবন পড়ে রয়েছে পরিত্যক্ত অবস্থায়।

মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গড়ে ওঠা নবীন হলটি এখনো সচল রয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. নবীন মিয়া তার নিজস্ব জায়গায় হলটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুর দিকে তিনি এককভাবে এটি পরিচালনা করলেও কয়েক বছর ধরে ঢাকার এক ব্যবসায়ীর কাছে ভাড়া দিয়েছেন। এটি জেলায় একমাত্র সচল সিনেমা হল। কিন্তু হলের সিট ও পরিবেশ তেমন ভালো নয়।

নবীন হলের সহকারী ম্যানেজার জানান, হলের মান ভালো না হওয়া এবং ছবির পাইরেসি বন্ধ করতে না পারায় দর্শকরা আসে না। ফলে আর্থিক লোকসানে হলের মানও বাড়ানো যাচ্ছে না। তিনি জানান, বর্তমানে সিনেমা হলে দর্শক বলতে অধিকাংশই রিকশাওয়ালা ও গ্রাম থেকে আসা স্কুল-কলজের শিক্ষার্থী।

শহরের বাসিন্দা সাব্বির হোসেন (৬০) জানান, বন্ধুদের নিয়ে নিয়মিত হলে ছবি দেখতাম। বিভিন্ন উৎসবে পরিবারের সদস্যরাও সবাইকে নিয়ে হলে যেতেন। তিনি ১০ আনা (পয়সা) দিয়েও টিকিট কিনেছেন।

তিনি আরও বলেন-সে সময় সবাইকে নিয়ে ছবি দেখা যেত। কিন্তু একটা সময় অশ্লীলতা ভর করলো। বন্ধ হয়ে গেল সামাজিক সিনেমা নির্মাণ। তখনই সবাই হল থেকে দূরে সরতে থাকলো। এ কারণেই হলগুলো আর্থিক সঙ্কেটে পড়ে বন্ধ হয়ে যায়।

মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. গোলাম ছারোয়ার ছানু জাগো নিউজকে বলেন, ভিসিআর, ভিসিডি প্লেয়ার, ডিস এবং সবশেষ ইন্টারনেটের প্রভাব এবং ভালো মানের সিনেমা তৈরি না হওয়ার কারণেই সিনেমা হলের আজ দুরাবস্থা। সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে আবারো দেশের চলচ্চিত্র এবং সিনেমা হলে সুদিন ফিরবে বলে মনে করেন তিনি।

বি.এম খোরশেদ/এএইচ/এমকেএইচ