দেশজুড়ে

হবিগঞ্জের শতবর্ষী মরিয়মের দেখভালের দায়িত্ব নিলেন এসপি

মরিয়ম চান। বয়স ১০৫ বছর। থাকেন সদর হাসপাতাল সংলগ্ন অনন্তপুর এলাকায়। বয়সের ভারে অনেক কিছুই মনে করতে পারেন না। এমনকি নিজের বাবার বাড়ি পর্যন্ত মনে করতে পারছিলেন না। ২০ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন। কোনো সন্তানাদি নেই। নেই নিজের কোনো বাড়িঘরও। তাই স্বামীর মৃত্যুর পরই চলে আসেন জেলা সদরে।

শুরু থেকেই সদর হাসপাতালের সামনে দিনভর ভিক্ষা করেন তিনি। আর তখন থেকেই বৃদ্ধার কষ্ট দেখে নিজে গৃহপরিচারিকার কাজ করে তাকে লালন করছেন আয়েশা খাতুন। মায়ের মমতায় তিনি আগলে রেখেছেন এ বৃদ্ধাকে। অবশেষে এ বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ালেন পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ উল্ল্যা ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী।

বুধবার (২৮ এপ্রিল) বৃদ্ধা মরিয়মকে দেয়া হয়েছে রমজান মাসের খাবার, চলাচলের জন্য হুইল চেয়ার। আর তাকে সবসময় খাবার দেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তারা।

বৃদ্ধা মরিয়ম চান জানান, তার বাড়ি কোথায় ভুলে গেছেন। মনে করতে পারছেন না। বাবার বাড়িও মনে নেই। তিনি বলেন, ‘আয়েশা আমার মা, আমার মেয়ে।’ এসময় পুলিশ সুপারের হাত টেনে ধরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বাবা। আপনাদের ভাল করুন আল্লাহ।’

আয়েশা খাতুন জানান, তার স্বামী মতি মিয়া তাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন। তিনি একাই থাকেন। ২০ বছর আগে হাসপাতালের সামনে তকে ভিক্ষা করতে দেখে মায়া লাগে। এরপর নিজের ঘরে তুলে নেন। তিনি নিজে অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। তারপরও ওই বৃদ্ধার দেখাশুনা করেন। আয়েশা খাতুন বলেন, ‘এতে আমি আনন্দ পাই। তার দেখভাল করে আমার ভালো লাগে। মনের তৃপ্তি পাই।’

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাসুক আলী বলেন, ওই বৃদ্ধা যেন আর্থিক অনটনে না পড়েন, খাবার অভাবে যেন তাকে না থাকতে হয় সে বিষয়টি আমরা দেখব। সময়ে সময়ে তার জন্য খাদ্যদ্রব্য পাঠাব। যেহেতু তিনি সদর হাসপাতালের সামনেই ভিক্ষা করেন তাই তার দেখাশোনা করাও আমাদের জন্য বেশ সুবিধা হবে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, তাকে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ডাক্তার দেখিয়ে তাকে ওষুধ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি যেন দ্রুত বয়স্ক ভাতার কার্ড পান সে ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি বলেন, ‘আমি যতদিন এখানে আছি ততদিন তার দেখভাল করব। সহযোগিতা করে যাব। তাকে চলাচলের জন্য হুইল চেয়ার দিয়েছি। রমজানের জন্য বাজার দিয়েছি।’ এসময় বৃদ্ধা মরিয়ম চানের দেখভাল করার জন্য আয়েশা খাতুনকে ধন্যবাদ জানান পুলিশ সুপার।

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এসআর/জেআইএম