জাতীয়

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে আঘাত মানে স্বাধীনতার ওপর আঘাত

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর আঘাত করা মানে দেশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত করা, জাতির পিতার স্বপ্নের ওপর আঘাত করা।

মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) সকালে, যশোর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিচালিত ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতামূলক আন্তঃধর্মীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের অসারতা বুঝতে পেরেছিলেন। অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি জীবন উৎসর্গ করেছেন। বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা তথা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের নীতি সন্নিবেশ করে গেছেন।

তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়, ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হচ্ছে প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অনুসারীরা স্বাধীনভাবে নির্বিঘ্নে নিরাপদে এদেশে ধর্ম পালন করতে পারবে। প্রতিটি ধর্মের প্রতি রাষ্ট্র ও সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রাখতে সকল ধর্মের প্রতি নজর রেখে সকল ধর্মীয় সম্প্রদায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কল্যাণে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছেন।

ফরিদুল হক খান বলেন, গুজব ছড়িয়ে ফেসবুক-ইউটিউবে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে মানুষের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকরা হচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ওয়াজ মাহফিলে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা করতে হবে। এখানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোনো দলের পক্ষে প্রচারণা কিংবা হিংসাত্মক বক্তব্য রাখা যাবে না। এরূপ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় মসজিদ, মন্দির ও প্যাগোডা ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মাধ্যমে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও নৈতিকতা তথা অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা, মানবিকতা ও সহনশীলতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষাদান করা হচ্ছে।

সংলাপে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৪৭ সাল হতে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। ধাপে ধাপে তিনি জাতির মুক্তির জন্য পথ পরিক্রমা তৈরি করে চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জাতিকে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। এদেশ আমাদের সকলের।

তিনি বলেন, সকল ধর্মের মানুষের নিরাপদ সহাবস্থান নিশ্চিত করা গেলেই জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল ধর্মের মানুষের কল্যাণে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। অশুভ কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকতে হবে।

জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম, যশোর পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান (পলাশ), সাবেক সংসদ সদস্য ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম, মনিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম, যশোর আমিনিয়া আলীয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. সাখাওয়াত হোসেন, যশোর প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান, দৈনিক প্রথম আলোর যশোর প্রতিনিধি, রামকৃষ্ণ মিশন ও আশ্রম যশোরের অধ্যক্ষ জ্ঞান প্রকাশানন্দ, ইমাম পরিষদ যশোর জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা আনোয়ারুল করিম, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা বেলায়েত হোসেন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ যশোর জেলা শাখার সভাপতি অসীম কুণ্ডু, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ যশোর জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ দত্ত প্রমুখ।

এরপর বিকেলে প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এবং স্বপন ভট্টাচার্য্য যশোর শহরের বেজপাড়া পূজা সমিতি মন্দির এবং রামকৃষ্ণ মিশন ও আশ্রম পরিদর্শন করেন।

এমইউ/ইএ/এমএস