আল্লাহ তাআলা শুধু পৃথিবীই নয় বরং সমগ্র সৃষ্টি শুধু মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। ঠিক আগের আয়াতেই মহান আল্লাহ মানুষের মাঝে নিহিত বিষয় দিয়ে আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ দিয়েছেন। এ আয়াতে মানুষের কল্যাণে সমগ্র সৃষ্টি তথা জমিন ও আসমানকে তিনি স্তরে স্তরে সুবিন্যস্ত করেছেন। এ প্রমাণই এসেছে কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে। ধাপে ধাপে বর্ণিত হয়েছে মানুষের কল্যাণে ধারা। কী সেই সব? মহান আল্লাহ বলেন-هُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ لَکُمۡ مَّا فِی الۡاَرۡضِ جَمِیۡعًا ٭ ثُمَّ اسۡتَوٰۤی اِلَی السَّمَآءِ فَسَوّٰىهُنَّ سَبۡعَ سَمٰوٰتٍ ؕ وَ هُوَ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ ‘তিনি পৃথিবীর সব কিছু তোমাদের (মানুষের) জন্য সৃষ্টি করেছেন; তারপর তিনি আকাশের দিকে মনোসংযোগ করেন এবং তাকে (আকাশকে) সাত আকাশে বিন্যস্ত করেছেন; তিনি সব বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ২৯)
আল্লাহ তাআলাই সেই সত্ত্বা যিনি মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন সব কিছু; যা জমিনে বিদ্যমান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তিনি আকাশের প্রতি মনোসংযোগ করেছেন। ধারাবাহিকভাবে তিনি তৈরি করেছেন সাত আসমান। আর এসব বিষয় মহান আল্লাহ ভালোভাবেই অবহিত আছেন।
এ আয়াতটি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মহান আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতিস্বরূপ তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন-‘হে রাসুল! আপনি বলুন, তোমরা কি সেই আল্লাহকে অস্বীকার কর যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দু’দিনে এবং তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ স্থির কর? তিনি তো সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা। তিনি পৃথিবীতে উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন-পূর্ণ হল জিজ্ঞাসুদের জন্যে। অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম। অতঃপর তিনি আকাশমণ্ডলীকে দু’দিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ প্রেরণ করলেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা। (সুরা হা মীম সিজদাহ : আয়াত ৯-১২)
মানুষের কাজসুতরাং বান্দার করণীয় হলো, আল্লাহর ইবাদত করা। যেহেতু মহান আল্লাহ সবকিছু বান্দার জন্য সৃষ্টি করেছেন। তাই মানুষ চোখের সামনে জমিন এবং আসমানের দৃশ্যমান আল্লাহর সব অস্তিত্বের প্রমাণ দেখে তাঁর শুকরিয়া আদায়ে দিন-রাত তাঁরই ইবাদাত করবে। আর এটি বান্দার জন্য একান্ত আবশ্যকীয় কাজ। আল্লাহ তাআলা বলেন-وَ مَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَ الْاِنْسَ اِلَّا لِیَعْبُدُوْنِ‘জিন ও মানুষকে আমার ইবাদত জন্য ছাড়া অন্য কোনো কাজে সৃষ্টি করিনি।’ (সুরা যারিয়াত : আয়াত ৫৬)
ইবাদতেই অর্জিত হবে তাকওয়াযে মানুষের জন্য আল্লাহ সমগ্র জগৎ সৃষ্টি করেছেন। সে মানুষ আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে তাকওয়া অর্জন করবে। এ তাকওয়াই মানুষকে পৌঁছে দেবে অর্জনের সর্বোচ্চ চূড়ায়। মহান আল্লাহ বলেন-یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِیْ خَلَقَكُمْ وَ الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَۙ‘হে মানুষ! তোমাদের রবের ইবাদাত করো , যিনি তোমাদের ও তোমাদের আগের সবােইকে সৃষ্টি করেছেন। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২১)
তাকওয়াবানদের জন্য সর্বোচ্চ জান্নাতবান্দাদের মধ্যে যারাই তাকওয়া অর্জনে সক্ষম হবে; তারা পাবেন চিরস্থায়ী শান্তির স্থান জান্নাত। আর জান্নাত তৈরি করা হয়েছে তাকওয়া অর্জনকারীদের জন্যই। মহান আল্লাহ বলেন-وَ سَارِعُوْۤا اِلٰى مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَ جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمٰوٰتُ وَ الْاَرْضُۙ اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِیْنَۙ‘তোমরা দৌঁড়ে চলো! তোমাদের রবের ক্ষমার পথে এবং মহাকাশ ও পৃথিবীর সমান প্রশস্ত সেই জান্নাতের দিকে, যা তাকওয়া অর্জনকারীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৩)
সুতরাং জগৎ যাদের জন্য সৃষ্টি; সে মানুষের উচিত, মহান আল্লাহর একত্ববাদে আত্মসর্ম্পন করা। কোরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত পন্থায় জীবন পরিচালনা করা। এটাই ঈমানের দাবি।
আল্লাহ তাআলা মানুষের তার সৃষ্টির গুরুত্ব বোঝার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর একত্ববাদের ইবাদতকারী ও তাকওয়ার অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। সমগ্র সৃষ্টিতে আল্লাহর অস্তিত্ব ও প্রমাণ খুঁজে নিজেদের তৈরি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস