অতিমারি করোনা সংকটের কারণে বিলম্বিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার সিলেট শিক্ষা বোর্ডে ৯৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৮৩৪ জন শিক্ষার্থী।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাসের হার এবং জিপিএ-৫ এই দুই সূচকেই ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে।
পাসের হারে সারাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। আর ৯৭ দশমিক ৫২ শতাংশ পাস করে দেশসেরা ফলাফল করেছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করায় বোর্ডের পাসের হার সর্বোচ্চ হারে বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক মো. কবির আহমদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে কাস্টমাইজ সিলেবাসের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি নিয়মিত ক্লাসের কারণে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা এবার ভালো ফলাফল করেছে। এবার মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করায় বোর্ডে পাসের হারও বেড়েছে। এজন্য আমরা সবাই খুশি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জিপিএ-৫ অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় একটু কম এসেছে ঠিক। তবে আগামীতে আমরা জিপিএ-৫ কিভাবে বাড়ানো যায় সে ব্যাপারেও উদ্যোগ নেবো।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ৯১৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে শতভাগ পাস করেছে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৮৫টি।
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলে দেখা যায়, এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় সিলেট শিক্ষাবোর্ডে ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৩ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭০০ জন। সিলেট জেলায় পাসের হার ৯৭ দশমিক ৪২ শতাংশ, মৌলভীবাজারে ৯৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং হবিগঞ্জে পাসের ৯৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
সিলেটে দুই সুচকেই এগিয়ে মেয়েরা
সিলেটে এসএসি পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হারে ছেলেদের টপকে গেছে মেয়েরা। জিপিএ-৫ এর দিক দিয়েও গেল বছরের মতো এ বছরও এগিয়ে আছে মেয়েরা।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ বছর ৫৩ হাজার ৩৩২ জন ছেলে শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৫১ হাজার ৩৮৬ জন। ছেলেদের পাসের হার ৯৬.৩৫।
৬৬ হাজার ২২১ জন মেয়ে শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে এবার পাস করেছে ৬৪ হাজার ৩১৪ জন। তাদের পাসের হার ৯৭.১২।
গত বছর পাসের হারে ছেলেরা এগিয়ে ছিল। সে বছর ছেলেদের পাসের হার ছিল ৭৯.২৩ এবং মেয়েদের পাসের হার ছিল ৭৮.৪৬।
এদিকে জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক দিয়ে গেল বছরের মতো এবারও মেয়েরা এগিয়ে আছে। গেল বছর ২০৮১ জন ছেলে ও ২১৮২ জন মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিল।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছর সিলেট বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। গেল বছরের চেয়ে এ বছর পাসের হার বেড়েছে ১৭.৯৯ ভাগ।
গত বছর সিলেট বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪ হাজার ২৬৩ জন শিক্ষার্থী। এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৮৩৪ জন শিক্ষার্থী।
এবার সিলেট শিক্ষা বোর্ডে সবচেয়ে ভালো ফলাফল করেছে মানবিক বিভাগ। এ বিভাগে এবার ৯৭ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। যা গত বছর ছিল ৭৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বিজ্ঞান বিভাগও ফলাফলে উন্নতি করেছে। এবার বিজ্ঞান বিভাগে ৯৫ দশমিক ২৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। যা গত বছর ছিল ৯০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এবার ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এবার ৯৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। যা গত বছর ছিল ৮৭ দশমিক ৪০ শতাংশ।
গত বছর শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিলো মাত্র ৪৩টি। এবার এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৫টি।
পাসের হারে সুনামগঞ্জ, জিপিএ-৫ এ এগিয়ে সিলেট
সিলেট শিক্ষা বোর্ডে এবার পাসের হারে বেশ চমক দেখিয়েছে সুনামগঞ্জ জেলার শিক্ষার্থীরা। বিভাগের চারটি জেলার মধ্যে এ জেলার শিক্ষার্থীরাই এগিয়ে আছেন। তবে জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক দিয়ে শীর্ষে আছে সিলেট জেলার শিক্ষার্থীরা।
সিলেট বোর্ডের জেলাভিত্তিক ফলাফলে দেখা গেছে, সিলেট বিভাগের মধ্যে পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে সুনামগঞ্জ। সুনামগঞ্জ জেলায় পাসের হার ৯৭.৫৩। সিলেট জেলায় পাসের হার ৯৭.৪২, মৌলভীবাজারে ৯৬.৭৯ এবং হবিগঞ্জে পাসের ৯৬.৫৫।
তবে জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে সিলেট জেলা। মোট জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে সিলেটের ২২৯৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এ ছাড়া মৌলভীবাজারের ১০৪০ জন, হবিগঞ্জের ৮৬৯ জন এবং সুনামগঞ্জের ৬২৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এ বছর সিলেট জেলায় ৪৩ হাজার ৫৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৪১ হাজার ৮৩২ জন পাস করেছে। সুনামগঞ্জে ২৬ হাজার ৪৯ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ২৫ হাজার ৩৪৩ জন।
মৌলভীবাজারে পরীক্ষায় বসেছিল ২৬ হাজার ৩৯৪ জন। এর মধ্যে পাসকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৪০৬। এ ছাড়া হবিগঞ্জ জেলায় ২৪ হাজার ৫৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে ২৩ হাজার ১১৯ জন পাস করেছে।
ছামির মাহমুদ/এফএ/এএসএম