নোয়াখালীর ভাসানচরের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার ছেড়েছেন আরও ৭০৫ রোহিঙ্গা। এদের সঙ্গে আরও ৮০ জনের একটি দল বেড়াতেও যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে ৪১৪ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে আটটি বাস এবং বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ২৯১ জনকে নিয়ে সাতটি বাস উখিয়া ডিগ্রি কলেজের মাঠ থেকে চট্টগ্রামের নেভাল ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
গত এপ্রিলে বর্ষায় যাত্রা স্থগিত করার পর ইউএনএইচসিআর ও সরকারের মাঝে ভাসানচরে শরণার্থী ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) হওয়ার পর ২৪ নভেম্বর প্রথমবার এবং ১৭ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বার রোহিঙ্গাদের শুরু যাত্রা হয়। তৃতীয় দফায় সাত শতাধিক রোহিঙ্গা কক্সবাজার ত্যাগ করলো আজ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাসানচরে যাওয়া উদ্দেশ্যে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে মঙ্গলবার বিকেল থেকে সরঞ্জামসহ সপরিবারে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আসতে থাকেন রোহিঙ্গারা। বুধবার সকালেও আসেন অনেকে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাসে ওঠা শুরু করেন রোহিঙ্গারা। এরপর ১টার দিকে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে প্রথম বহর চট্টগ্রামের পথে রওনা দেয়। আর দ্বিতীয় বহর যাত্রা করে বিকেল সাড়ে ৪টায়। আগের নিয়মে রাতে চট্টগ্রামের বিএন শাহীন কলেজের ট্রানজিট ক্যাম্পে অবস্থান করবেন তারা। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় ভাসানচরে যাবেন।
রোহিঙ্গা স্থানান্তরে যুক্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, ভাসানচরে থাকার উদ্দেশ্যে যারা যাচ্ছে তারা ছাড়াও ৭০-৮০ রোহিঙ্গা সেখানে বেড়াতে যাচ্ছেন। তাদের আলাদা দুটি বাসে করে নেওয়া হচ্ছে। ভাসানচরের ব্যবস্থাপনা দেখে তারা ফিরে আসার পর কক্সবাজারের আরও রোহিঙ্গা সেখানে যেতে উৎসাহ পাবে।
কক্সবাজার ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত জাগো নিউজকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তে উখিয়া-টেকনাফ ক্যাম্প থেকে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা ভাসানচর স্থানান্তর হবে। কাউকে জোর করে নয়, সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানানোর পর যারা স্বেচ্ছায় যেতে রাজি হচ্ছেন তাদের জড়ো করে নির্ধারিত একটি দিনে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ যাত্রা চলমান থাকবে। নবম দফায় ৭০৫ রোহিঙ্গা ভাসানচর যাওয়ার পথে আছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝিদের মতে, ভাসানচর যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গারা স্ব-স্ব ক্যাম্প ইনচার্জ কার্যালয়ে নাম জমা দেন। ভাসানচরের পরিবেশ, থাকা খাওয়ার সুবিধা সম্পর্কে ব্রিফিং করার পর যারা যেতে রাজি হচ্ছে তাদের নিবন্ধনের মাধ্যমে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
তাদের মতে, বাস্তুহারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয়ের জীবন। যেখানেই থাক সেটা মানবিক সহায়তা। তবে ভাসানচরে বন্দি জীবন মনে করে অনেকে যেতে চান না। কিন্তু সম্প্রতি ভাসানচরের রোহিঙ্গারা চাইলে উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পে থাকা স্বজনদের দেখতে আসতে পারবে, সরকারের এ ঘোষণার পর ভাসানচরমুখী মানুষের সংখ্যা আবারও বাড়ছে। বুধবার ৭০-৮০ জন রোহিঙ্গা বেড়ানোর উদ্দেশ্যে ভাসানচর যাচ্ছে।
কক্সবাজার-১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) নাইমুল হক নাইম জাগো নিউজকে বলেন, দুভাবে বিভক্ত হয়ে রোহিঙ্গাদের আরও একটি দল বুধবার ভাসানচরের উদ্দেশ্যে উখিয়া ত্যাগ করেছে।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি সময় পর্যন্ত আট দফায় প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরের অধিবাসী হয়েছেন। এরা ছাড়াও গত বছরের মে মাসে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টাকালে ৩০৬ রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে সেখানে নিয়ে রাখা হয়।
সায়ীদ আলমগীর/এসজে/এএসএম