ময়মনসিংহের ত্রিশালের শারীরিক প্রতিবন্ধী রওশন ও সোহেল মিয়া দম্পতির ১৪ বছরের ভালোবাসার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। কিন্তু এরপরই জাগো নিউজের কাছে আছে ভিন্ন তথ্য। জানা যায়, সোহেল মিয়ার প্রকৃত নাম মোখলেছুর রহমান বকুল। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের উপজেলার বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের সন্তোষপুর গ্রামে তার বাড়ি।
১৯৯২ সালে শুরাতন বেগম নামে একজনকে বিয়ে করেন বকুল। তাদের সংসারে চার সন্তানের জন্ম হয়। অভাব-অনটনে দিন দিন ঋণগ্রস্ত হতে থাকায় ১৫ বছর আগে কাজের কথা বলে ঢাকায় চলে যান তিনি। আর ফেরেননি। এমনকি তিন বছর আগে তার মা মারা যাওয়ার কথা জানালেও তিনি দাফন করতে আসেননি।
বকুলের প্রথম স্ত্রী দাবি করা শুরাতন বেগম বলেন, ‘বকুলের সঙ্গে বিয়ের পর ভালোই চলছিল সংসার। ২০০৭ সালে হঠাৎ আমাকে ঢাকা যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরেনি স্বামী। এমনকি গত তিন বছর আগে আমার শাশুড়ি মারা গেছেন। তবুও তার মন গলেনি। ভেবেছিলাম শাশুড়ি মারা গেছেন এবার হয়তো স্বামী আসবে। কিন্তু আসেনি নিষ্ঠুর বকুল। স্বামীকে ছেড়ে এতদিন থাকার যন্ত্রণা একমাত্র আমি জানি।’
বকুলের বড় ছেলে সিহাব উদ্দীন বলেন, ‘ছোট থাকতেই বাবা ঢাকায় চলে গেছেন। সেই থেকে অনেক কষ্টে একটি চায়ের দোকান করে সংসার চালিয়ে আসছিলাম। পড়াশোনা করতে পারিনি টাকার অভাবে। পাইনি বাবার স্নেহ আদর। ২০২০ সাল পর্যন্ত বাবা মাঝে মধ্যে ফোন দিতেন। তাকে বাড়ি আসতে বললে আসতেন না। তিন বছর আগে দাদি মারা যান। এ খবর দিলেও বাবা আসেননি। এখন ফেসবুকে দেখছি ময়মনসিংহে এক প্রতিবন্ধী নারীকে বিয়ে করে সংসার করেছেন। তিনি আমাদের সঙ্গে অনেক প্রতারণা করেছেন।’
এখন তারা কী চান জানতে চাইলে সিহাব বলেন, ‘আমরা কিছুই চাই না। তবে যে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে দেশবাসীকে সেটাই জানাতে চাই। তিনি আমার বাবা হলেও বলতে হচ্ছে তিনি মিথ্যাবাদী। সবার সঙ্গে প্রতারণা করছেন।’
মোখলেছুর রহমান বকুলের স্ত্রী শুরাতন বেগম
সোহেল মিয়ার বড় ভাই শাহজাহান মিয়া বলেন, অনেক বছর আগে এলাকায় টাকা-পয়সা ঋণ করে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল। এরপর সে আর ফিরে আসেনি।
সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য এনামুল হক বলেন, ‘আমরা ছোট থেকেই মোখলেছুর রহমান বকুলকে চিনি। গতকাল আমি ফেসবুকে দেখে বকুলকে চিনতে পেরেছি। আমরা গত ১৫ বছর আগে থেকে জানতাম বকুল পালিয়ে গিয়ে ঢাকায় আছে। আর এখন এ ঘটনা জানতে পারছি। বকুল অনেক বড় একটা প্রতারক। তার বিচার হওয়া দরকার।’
এদিকে এ বিষয়ে সোহেল মিয়ার বর্তমান স্ত্রী ত্রিশালের রওশন জাগো নিউজকে বলেন, স্বামীর প্রথম বিয়ের বিষয়ে আমি জানি। তবে ওই বিয়ে নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমার সংসার নিয়ে আমি সুখী। স্বামীর ভালোবাসায় আমি কৃতজ্ঞ।
তার প্রথম স্ত্রী যদি আসতে চায় তাহলে কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওনার প্রথম স্ত্রী যদি এখানে আসেন, তাহলে দুই বোন মিলে সংসার করবো।
মোখলেছুর রহমান বকুলের স্ত্রী শুরাতন বেগমের পাশে তার দুই ছেলে
প্রথম বিয়ের কথা স্বীকার করে সোহেল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ১৯৯২ সালে প্রথম বিয়ে করি। আগের স্ত্রীর সঙ্গে পারিবারিক কলহের কারণে তাদের ছেড়ে আসি। ওদের সঙ্গে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোবাইলে যোগাযোগ ছিল। তবে সম্পর্ক ভালো ছিল না। ফোন করলেই ওরা গালাগালি করতো। পরে ওই বছর স্ট্রোক করার পর থেকে তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।
মিথ্যা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেললেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০২০ সালে স্ট্রোক করার পর থেকে আমি অন্যরকম হয়ে গেছি। কিছুই মনে থাকে না। তবে এসব কিছুর জন্য আমি দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাসের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসএসসিও পাস করিনি। সাংবাদিকরা আমার বাড়িতে আসার পর পরিচিত একজন লেখাপড়ার বিষয়টি মিথ্যা বলার জন্য শিখিয়ে দিয়েছিল। তাই আমি মিথ্যা কথা বলেছিলাম। তিনি মিথ্যা কথা বলার জন্য আবারও দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চান।
এর আগে রওশন-সোহেল দম্পতির ভালোবাসার গল্প ভাইরাল হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জেলা প্রশাসককে তাদের সহায়তা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে।
গত বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তারুজ্জামান সোহেল ও রওশন দম্পত্তির বাড়িতে গিয়ে তাদের খোঁজখবর নেন এবং তাদের সহায়তা করা হবে বলে জানান।
সোহান মাহমুদ/এসজে/জেআইএম