ত্রিশালের সেই ভাইরাল সোহেল গোমস্তাপুরের ‘প্রতারক’ বকুল

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশিত: ১১:৪৪ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ময়মনসিংহের ত্রিশালের সোহেল মিয়া ও প্রতিবন্ধী রওশন দম্পতিকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর তা দেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের এক নারী সোহেল মিয়াকে তার নিখোঁজ স্বামী বলে দাবি করেছেন। ওই নারীর নাম শুরাতন বেগম। তার বাড়ি উপজেলার বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের সন্তোষপুর গ্রামে।

তিনি দাবি করেন, সোহেল মিয়া নাম বলা হলেও তার স্বামীর নাম মোখলেছুর রহমান (বকুল)। একই ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের বকুলের সঙ্গে তার বিয়ে হয় ১৯৯২ সালে। এরপর ২০০৪-২০০৫ সালের দিকে ঢাকা যাওয়ার কথা বলে তার স্বামী আর ফেরেনি। এরপর থেকেই বিভিন্নভাবে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও আর খোঁজ পাননি শুরাতন বেগম।

শুরাতন বেগম বলেন, তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে তিনি তখন থেকেই অনেক কষ্টে সংসার চালাচ্ছেন। এখনও তার স্বামীকে ফিরে পেতে চান এই নারী।

তিনি বলেন, আর আমার স্বামী যে প্রতারণা করেছে তা সবাই জানুক। বকুল পালানোর সময় বিভিন্ন স্থান থেকে ঋণ নিয়ে আমার জমি জায়গা বিক্রি করে টাকা নিয়ে উধাও হয়েছিল। সেই ঋণের টাকা দিতেই আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি।

শুরাতন বেগমের বড় ছেলে সিহাব উদ্দীন বলেন, আমার বাবাকে টিভিতে দেখে চিনতে পেরেছি। এতদিন জানতাম বাবা নিখোঁজ। এখন গ্রামের সবাই তাকে চিনতে পেরেছে।

jagonews24

সোহেল মিয়া ওরফে মোখলেছুর রহমান বকুলের স্ত্রী দাবি করা শুরাতন বেগম

সিহাব উদ্দীন আরও বলেন, তার বাবা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। কিন্তু বলছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখলেই সত্য বেরিয়ে আসবে। এমনকি তার নাম মোখলেছুর রহমান বকুল। কিভাবে তিনি সোহেল মিয়া হলেন, আইডি কার্ড কিভাবে করলেন সেই বিষয়গুলো দেখতে বলেন সিহাব।

এখন তারা কী চান জানতে চাইলে সিহাব বলেন, আমরা কিছুই চাই না। তবে যে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে দেশবাসীকে সেটাই জানাতে চাই। তিনি আমার বাবা হলেও বলতে হচ্ছে তিনি মিথ্যাবাদি। সবার সঙ্গে প্রতারণা করছেন। তিনি সেবা করতে সেখানে যাননি, লুকিয়ে থাকতে গিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য এনামুল হক বলেন, আমরা ছোট থেকেই মোখলেছুর রহমান বকুলকে চিনি। গতকাল আমি ফেসবুকে দেখে বকুলকে চিনতে পেরেছি। আমরা গত ১৫ বছর আগে থেকে জানতাম বকুল পালিয়ে গিয়ে ঢাকায় আছে। আর এখন এ ঘটনা জানতে পারছি। বকুল অনেক বড় একটা প্রতারক। তার বিচার হওয়া দরকার।

এদিকে এ বিষয়ে সোহেল মিয়ার বর্তমান স্ত্রী ত্রিশালের রওশন জাগো নিউজকে বলেন, স্বামীর প্রথম বিয়ের বিষয়ে আমি জানি। তবে ওই বিয়ে নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমার সংসার নিয়ে আমি সুখী। স্বামীর ভালোবাসায় আমি কৃতজ্ঞ।

তার প্রথম স্ত্রী যদি আসতে চায় তাহলে কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওনার প্রথম স্ত্রী যদি এখানে আসেন, তাহলে দুই বোন মিলে সংসার করবো।

jagonews24

শুরাতন বেগম ও তার দুই ছেলে

প্রথম বিয়ের কথা স্বীকার করে সোহেল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ১৯৯৩ সালে প্রথম বিয়ে করি। আগের স্ত্রীর সঙ্গে পারিবারিক কলহের কারণে তাদের ছেড়ে আসি। ওদের সঙ্গে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোবাইলে যোগাযোগ ছিল। তবে সম্পর্ক ভাল ছিল না। ফোন করলেই ওরা গালাগালি করত। পরে ওই বছর স্ট্রোক করার পর থেকে তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।

মিথ্যা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেললেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০২০ সালে স্ট্রোক করার পর থেকে আমি অন্যরকম হয়ে গেছি। কিছুই মনে থাকে না। তবে এসব কিছুর জন্য আমি দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাতক পাসের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসএসসিও পাস করিনি। সাংবাদিকরা আমার বাড়িতে আসার পর পরিচিত একজন লেখাপড়ার বিষয়টি মিথ্যা বলার জন্য শিখিয়ে দিয়েছিল। তাই আমি মিথ্যা কথা বলেছিলাম। তিনি মিথ্যা কথা বলার জন্য আবারও দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চান।

সোহান মাহমুদ/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।