ক্যাম্পাস

ছাত্রী ধর্ষণ: উত্তাল বশেমুরবিপ্রবি এলাকা, ধাওয়া-ভাঙচুর

গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

আহতদের মধ্যে দুজনকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন-রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জেরিন জাহান ইশিতা, একই বর্ষের নুসরাত জাহান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের গাড়িসহ বেশকিছু দোকান ও যানবাহন ভাঙচুর করেছেন স্থানীয়রা। বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত সাড়ে ৮টা) শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সকাল থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঘোনাপাড়া মোড়ে ধর্ষকদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে শত শত শিক্ষার্থী অংশ নেন। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড হাতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন বলেন ঘোষণা দেন। পরে বিকেল ৩টার দিকে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা ও পুলিশ সুপার আয়শা সিদ্দিকা ঘোনাপাড়া মোড়ে গিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।

এসময় জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, ‘আজ তোমরা যে আন্দোলন করছে সেটা যৌক্তিক। তবে একটা ঘটনা ঘটলে দুই ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। একটা হলো—এটা থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পেতে পারি। আর এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে। আমরা তোমাদের কথা দিচ্ছি আগামী তিনদিনের মধ্যে ধর্ষকদের শনাক্ত করা হবে। তোমরা এবার হলে, বাসার ফিরে যাও।’

শিক্ষার্থীরা এসময় ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেন। পরে পুলিশ সুপার আয়শা সিদ্দিকা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষকদের শনাক্ত করা হবে বলে আশ্বাস দেন।

তবে শিক্ষার্থীরা সময়সীমা বেঁধে দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান। পরে স্থানীয়রা আন্দোলনকারীদের ফিরে যেতে বললে দুই পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের গাড়ি ভাঙচুর করেন স্থানীয়রা।

অন্যদিকে, সড়ক অবরোধের কারণে ঢাকা ও খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা শত শত বাস, মালবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন মহাসড়কে আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। পরে বিকেল ৫টায় গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জেরিন জাহান ইশিতা বলেন, ‘আমরা রাস্তায় শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলাম। এমন সময় ছাত্রলীগ ও স্থানীয়রা আমাদের ওপর হামলা করে।’

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা বলেন, ‘জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন এবং তাদের সরঙ্গ চলে আসেন। পরে স্থানীয়দের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়।’

বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী তার এক বন্ধুর সঙ্গে গোপালগঞ্জ শহরের হেলিপ্যাড থেকে নবীনবাগের তার মেসে ফিরছিলেন। এসময় চার-পাঁচজন দুর্বৃত্ত তাদের গতিরোধ করেন। পরে সঙ্গে থাকা বন্ধুকে মারপিট করে ওই ছাত্রীকে পার্শ্ববর্তী নবনির্মিত জেলা প্রশাসন স্কুল ও কলেজ ভবনের মধ্যে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন

রাতে ছাত্রী ধর্ষণের খবর ক্যাম্পাসে পৌঁছালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গোপালগঞ্জ থানা ঘেরাও করেন। পরদিন ভোর ৬টায় ঘোনাপাড়ায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলে ওই রাতেই দুজনকে আসামি করে আমি বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা করেছি। পুলিশ এরই মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে।’

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিকটিম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

মেহেদী হাসান/এসআর/জেআইএম