বিশেষ প্রতিবেদন

জোবায়দা-সিঁথি কি রাজনীতিতে আসবেন?

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত। শর্তযুক্ত মুক্তি নিয়ে বলতে গেলে এখন তিনি রাজনীতির বাইরে। লন্ডন থেকে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনিও একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। ঢাকায় দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মহাসচিবসহ অন্য নেতারা। তবে বছরের পর বছর ঝিমিয়ে থাকা বিএনপিকে এই নেতৃত্ব টানতে পারছে না বলে দলের মধ্যেই আলোচনা-সমালোচনা আছে। এ কারণেই বারবার বিএনপিতে নতুন নেতৃত্বের আলোচনা আসছে। সেই আলোচনায় সবচেয়ে বেশি আসছে জিয়া পরিবারের দুই পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান এবং শর্মিলা রহমান সিঁথির নাম। তারেক রহমানের মেয়ে জায়মা রহমানের নামও কখনো কখনো শোনা যায়।

Advertisement

এসব আলোচনায় সরাসরি জিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কিছু শোনা যায়নি। বিএনপির শীর্ষ নেতারাও স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না বা বলতে পারছেন না। তবে ওই তিনজনের কেউ রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

খালেদা জিয়া জেলের বাইরে থাকলেও নিজের শারীরিক অবস্থা এবং সরকারের দেওয়া শর্তের কারণে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারছেন না। অন্যদিকে দেশে ফিরলেই সাজার মুখোমুখি হতে হবে বিধায় তারেক রহমানেরও দেশে ফেরার সংকেত মিলছে না। দুই শীর্ষ নেতার এমন অবস্থার কারণেই আলোচনায় আসতে থাকে জোবায়দা ও সিঁথির নাম।

দল ও পরিবারের কয়েকটি ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস আগেও জোবায়দাকে রাজনীতিতে আনতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সে সময় দেশের রাজনীতি এবং মিডিয়ায় জোরালো আলোচনা ছিল ‘রাজনীতিতে আসছেন জোবায়দা’। কিন্তু তারেক রহমানের অনাগ্রহের কারণে সে আলোচনা বেশি দূর এগোয়নি।

Advertisement

সূত্র মতে, জোবায়দা রহমান রাজনীতিতে না গিয়ে সন্তানদের সময় দিলে পরিবারের জন্য ভালো হবে বলে মত তারেক রহমানের। তার এমন ইচ্ছায় বিষয়টি নিয়ে খালেদা জিয়াও বেশি দূর আগাননি।

এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প বা সহায়ক হিসেবে অন্য কোনো ব্যক্তির কথা নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনায় আসে। সে ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথির নাম আসে আলোচনায়।

বিএনপির একাধিক নেতার মতে, শর্মিলা রহমান সিঁথি নিজে রাজনীতির ব্যাপারে আগ্রহ না দেখালেও সময়ের প্রয়োজনে এবং হাইকমান্ডের নির্দেশে দলের নানা কর্মকাণ্ডে তাকে সম্পৃক্ত হতে দেখা যেতে পারে। সম্প্রতি সিঁথির লন্ডন থেকে দেশে আসা, খালেদা জিয়ার সঙ্গে কয়েকবার কারাগারে সাক্ষাৎ, খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলোচনাসহ তার নানা কর্মকাণ্ড ওই সম্ভাবনা জোরালো করেছে।

বিএনপির ওই নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার অবর্তমানে তারেক রহমানই দলের পথনির্দেশক। তাকে সহায়তা করার জন্য যে কেউ কাজ করতে পারেন। তিনি পরিবারের সদস্য হলে আরও ভালো।

Advertisement

দলীয় সূত্রে জানা যায়, সিঁথি দেশে আসার পর ফিরোজায় তার সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সে সময় তিনি তাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কিছু বার্তা পৌঁছে দেন। এছাড়া গত সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে তার প্রভাব ছিল বলে গুঞ্জন রয়েছে।

দলের অন্য নেতারা বলছেন, বিএনপির একটি অংশ এই মুহূর্তে জিয়া পরিবারের কারও রাজনীতিতে আসাকে মানতে চায় না। তাদের আশঙ্কা, রাজনীতিতে পারিবারিক উত্তরসূরির প্রাধান্য ঘটলে দীর্ঘদিন ধরে যারা রাজনীতি করছেন তারা বঞ্চিত হন। তবে বিষয়টি নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না।

খালেদা জিয়ার দুই পুত্রবধূর রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কি না এবং তাদের রাজনীতিতে আগমনে নেতাকর্মীদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে জানতে চাইলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, স্বামীর সঙ্গে আলাপ করেই বাঙালি বধূরা সিদ্ধান্ত নেন। এটা বাঙালি সংস্কৃতি। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যদি সিদ্ধান্ত দেন, নিশ্চয়ই দলের সবাই এটা মেনে নেবে। তবে এই মুহূর্তে এ ধরনের কোনো আলোচনা নেই।

সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, আমরা এগুলো নিয়ে ভাবছি না। যদি দলের প্রয়োজন হয় আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সিদ্ধান্ত দেবেন।

সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যদি চান, তারা যদি আসেন, তাতে অখুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং সবাই খুশি হবো। বাংলাদেশের মানুষ তাদের স্বাগত জানাবে।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও জিয়া পরিবারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেন, এই মুহূর্তে এ ধরনের কোনো আলোচনা শুনিনি। ডা. জোবায়দা রহমানের যে পারিবারিক ঐতিহ্য, তাতে তিনি যদি রাজনীতিতে আসেন বাংলাদেশের মানুষ সেটা খুবই ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবে। সরকার তার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে বানোয়াট, ভিত্তিহীন মামলা দিয়েছে। ভবিষ্যতে তিনি রাজনীতি করতে পারেন এই ভয়ে ভীত হয়ে সরকার এটা করছে।

রাজনীতি বিশ্লেষক মহিউদ্দিন খান মোহন বলেন, খালেদা জিয়ার দুই পুত্রবধূর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে অসংখ্যবার কথা বলার সুযোগ হয়েছে। ডা. জোবায়দা রহমান যদি রাজনীতিতে আসেন তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাইক্লোন তৈরি হবে। তবে তারেক রহমানের ইচ্ছার বাইরে তিনি আসবেন বলে মনে হয় না। অন্যদিকে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথিকে রাজনীতিতে আগ্রহী মনে হয়নি।

কেএইচ/এমএইচআর/এসএইচএস/জেআইএম