আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন ভোলার খামারিরা। তবে বাজারে গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু মোটাতাজাকরণে খরচ গুনতে হচ্ছে আগের চেয়ে অধিক। তাই এ বছর অনেক খামারি গরু মোটাতাজাকরণ সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন।
করোনা পরিস্থিতিতে গত দুবছর কোরবানির হাটে গরু বিক্রি করে লোকসান গুনেছেন অনেক খামারি। কিন্তু এ বছর খাদ্যে দাম বেশি হলেও হাটে বিদেশি গরু না উঠলে লোকসান পুষিয়ে উঠতে পারবেন বলে দাবি তাদের।
ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া, দক্ষিণ দিঘলদী, ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়া ও দৌলতখান উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি খামারে গিয়ে দেখা গেছে, কোরবানির হাটে গরু বিক্রির জন্য দেশীয় পদ্ধতিতে কাঁচা ঘাস, ভুট্টার গুঁড়া, সয়াবিন মিল, গমের ভুসি, চালের খুদ, চালের কুড়া, খৈল ও খেশারি খাইয়ে মোটাতাজাকরণ করছেন খামারিরা। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অনেকটাই ব্যস্ত সময় পারছেন তারা। কিন্তু দেশীয় গো-খাদ্যের দাম গত বছরের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় গরু মোটাতাজাকরণের সংখ্যা কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন।
ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের তুলাতুলি গ্রামের খামারি মো. ইব্রাহীম ও আরজু বেগম বলেন, ‘কোরবানির দু-তিন মাস আগে ভোলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু কিনে দেশীয় পদ্ধতিতে খাবার খাইয়ে মোটাতাজাকরণ করি। গত দুবছর করোনার কারণে ভালো লাভ করতে পারেনি। এ বছর করোনা না থাকায় আশা করছি কোরবানির হাটে গরু বিক্রি করে ভালো দাম পাবো।’
দৌলতখান উপজেলায় উত্তর জয়নগর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইয়াসিন লিটন বলেন, ‘গো-খাদ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে বেশি দামে কিনে গরু মোটাতাজাকরণ করছি। এতে এক একটি গরু মোটাতাজাকরণে অধিক পরিমাণ খরচ গুনতে হয়েছে। তবে কোরবানির হাটে আমরা বেশি টাকায় গরু বিক্রি করতে পারবো কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি কোরবানির হাটে বিদেশি গরু না আসে, তাহলে খরচ বাদ দিয়ে লাভ করতে পারবো।’
ভোলা জেলা ডেইরি ফার্মস অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের খামারি মো. কামরুল হাসান খোকন বলেন, ‘ভোলার সাত উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ২ হাজার ৪৪৫টি খামার রয়েছে। প্রতি বছর এসব খামারিরা কোরবানির আগে দেশীও পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করে কোরবানির হাটে বিক্রি করেন। কিন্তু এ বছর গো-খাদ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। তাই গত বছরের চেয়ে এ বছর ১০ হাজার গরু মোটাতাজাকরণ কম হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দু-তিন মাস আগে গরু কিনেছি। বেশি দামে খাবার খাওয়ানো এবং শ্রমিকের বেতনসহ যে খরচ হয়েছে তাতে কোরবানির হাটে বেশি দামে বিক্রি করতে পারবো কি না চিন্তায় আছি।’
ভোলা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মন্ডল জানান, ‘ভোলার সাত উপজেলায় ২১টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম খামারে গিয়ে অবৈধভাবে গরু মোটাতাজাকরণ হচ্ছে কি না, তা মনিটরিং করছে। এবছর ভোলার সাত উপজেলায় গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার চাহিদা ৯৭ হাজার ১৮০টি থাকলেও মজুত রয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৭৯০টি। তবে এ বছর গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় ১০ হাজার গরু মোটাতাজাকরণ কম হয়েছে।
জুয়েল সাহা বিকাশ/এসজে/এমএস