বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে সুগারমিল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঠাকুরগাঁওয়ের আখ চাষিদের সার, বীজ, কিটনাশক ও ঋণ সহায়তা প্রদান করা হলেও দিন দিন আখের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন চাষিরা। ফলে জেলার একমাত্র সুগারমিল আগামী মৌসুমে চরম আখ সঙ্কটে পরবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।ঠাকুরগাঁও সুগারমিল চিনি উৎপাদনের মাধ্যমে সারাদেশের চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখলেও এ জেলায় দিন দিন আখের আবাদ কমে যাওয়ায় প্রতি বছর মিল চালু করার পর আখ সংকটের কারণে অল্প দিনের মধ্যে মিল আবার বন্ধ হয়ে যায়।পুরাতন যন্ত্রপাতির কারণে অনেক সময় মিল দুই তিন দিন বন্ধ থাকায় আখ সরবরাহের ক্ষেত্রে চাষিরা ভোগান্তি ও হয়রানির পাশাপাশি লোকসানের শিকার হয়।আবার দেখা যায়, সুগার মিলের যে ফার্মগুলো আছে আখ চাষের জন্য সেগুলোতে সুগার মিল আখ চাষ করছে না। সেগুলোকে টেন্ডার দিয়ে জনগণের কাছে বাৎসরিক বিক্রয় করা হয়েছে। ওইসব জমিতে আখের পরিবর্তে অন্য ফসল আবাদ করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন মিলটিকে আধুনিকায়ন ও আখ চাষে সার্বিক সুবিধাসহ এখনি চাষিদের আগ্রহী করা না হলে বিপাকে পরতে হবে মিল কর্তৃপক্ষকে। এর ফলে দিন দিন কমবে আখ চাষ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার খোঁচাবাড়ি গ্রামের আখ চাষি আব্দুল্লা জানান, সাধারণভাবে এক একর জমিতে আখ চাষ করতে সময় লাগে ১২-১৪ মাস। প্রতি একরে খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা। সাধারণভাবে আখ চাষ করে প্রতি একরে আখ উৎপাদন হয় সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ মণ। আঁকচা গ্রামের শামসুল আলম জানান, ভালোভাবে আখ চাষ করতে প্রতি একরে সময় লাগে ১৮ মাস পর্যন্ত। আর খরচ হয় ৩৫-৪০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে একরে এক হাজার মণ আখ পাওয়া যায়। কিন্তু আখ চাষে দীর্ঘ সময় ব্যয়ের কারণে হারাতে হয় ৩টি রবিশস্য ও এক মৌসুমের আমন চাষ। আবার হয়রানির শিকার হতে হয় মিলে আখ সরবরাহ করতে গিয়ে। এমন অবস্থায় আখ চাষ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা মিল কর্তৃপক্ষের কাছে সার, বীজ, কিটনাশক ও ঋণ সহায়তা পেলেও আখ নিয়ে বিপাকে পরতে হয় সবসময়। তাই দিন দিন আখের আবাদ কমছে। এ বিষয়ে জেলা আখ চাষি সমিতির সভাপতি রুহুল আমিন জানান, আমরা আশা করছি মিলটি দ্রুত আধুনিকায়ন করা হলে চাষিরা লাভবান হবে চাষাবাদও বাড়বে। জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক আরশেদ আলী জানান, গেল মৌসুমে ৬ হাজার ৫শ একর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৫ একর জমিতে। আর চলতি মৌসুমে ৭ হাজার ৮০ একর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এর মধ্যে অর্জিত হয়েছে ৩ হাজার একর জমির আখ চাষ। এ জেলার চাষিরা সকল প্রকার ফসল উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। তবে চাষিদের উদ্বুদ্ধ ও আখ সরবরাহে হয়রানি না হলে আখ চাষ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন এই উপ-পরিচালক। আর এ বিষয়ে সুগারমিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এনায়েতুল্লাহ খাঁন জানান, সরকারের প্রচেষ্টায় আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত মিলটিকে আধুনিকায়ন করার জন্য। আর মিলটি আধুনিকায়ন করা গেলে এসব সমস্যা থাকবে না। তারপরও আমরা চাষিদের সঙ্গে সমন্বয় করছি যেন আখ চাষ বৃদ্ধি পায়। রবিউল এহ্সান রিপন/ এমএএস/পিআর