জাতীয়

প্রথম ইউনিটের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ, দ্বিতীয়টিতে চুল্লি বসছে বুধবার

# শেষ হচ্ছে পারমাণবিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ# প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৫৩ শতাংশ, ভৌত ৫৫# ২০২৩ সালের শেষ দিকে শুরু ফুয়েল লোডিং# ২ ইউনিটে মিলবে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ

পাবনার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের কাজ ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ২০২৩ সালের শেষের দিকে উৎপাদনে যাবে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার (১৯ অক্টোবর) দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল (পারমাণবিক চুল্লিপাত্র) স্থাপন কাজের উদ্বোধন করবেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হবেন তিনি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন রুশ পরমাণু শক্তি সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ। এ উপলক্ষে এরইমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

দ্বিতীয় ইউনিটে চুল্লি বসানোর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী/ছবি: জাগো নিউজ

তারা বলছেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হচ্ছে রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন। এটি স্থাপনের আগে রিঅ্যাক্টর ভবনের বিভিন্ন স্তরের অবকাঠামোসহ সংশ্লিষ্ট পর্যায়গুলো এরইমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।

২০২১ সালের আগস্টে রাশিয়া থেকে দ্বিতীয় ইউনিটের এ রিঅ্যাক্টরটি দেশে এসে পৌঁছায়। রোসাটমের জেএসসি এএম টেকনোলোজির ভল্গোদনস্ক শাখার এটোমম্যাস প্লান্টে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টরসহ ভারী সরঞ্জামগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে।

চুল্লি বসানোর জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন/ছবি: জাগো নিউজ 

৩৩৩ দশমিক ৬ টন ওজনের ভিভিইআর-১২০০ রিঅ্যাক্টর ভেসেল প্রস্তুত করতে দুই বছরের বেশি সময় লাগে। এটোমম্যাসের কারখানা থেকে এ রিঅ্যাক্টর ভেসেল ভল্গোদনস্কের পানির রিজার্ভারে নেওয়া হয়। এরপর বার্জে উঠিয়ে পাঠানো হয় নভোরোসিস্কে।

এটি কৃষ্ণসাগর ও সুয়েজ খাল হয়ে ১৪ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের মোংলা বন্দরে আসে। এ কার্গো পরিবহনে দুই মাসের বেশি সময় লাগে। নির্দিষ্ট ভবনের সার্বিক প্রস্তুতির পর এখন রিঅ্যাক্টরটি স্থাপন হতে যাচ্ছে।

যুদ্ধের প্রভাব নেই রূপপুরেপ্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পুরো বিশ্ব বিপর্যস্ত হলেও এখানে রাশিয়ার কর্মীদের পাশাপাশি একসঙ্গে কাজ করছে ইউক্রেনের কর্মীরাও। জীবিকার প্রশ্নে যুদ্ধ-শান্তি মিলেমিশে একাকার।

স্থানীয় বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, রাশিয়ার অধিবাসী অধ্যুষিত রূপপুরের সাধারণ মানুষও রাশান ভাষায় অভ্যস্ত। রাশানরাও বাংলাদেশি ভাষা কিছুটা জানেন। এ যেন বাংলাদেশ-রাশিয়া-ইউক্রেনের মেলবন্ধস্থল

ঈশ্বরদীতে রাশিয়া-ইউক্রেনের নাগরিকদের জন্য গড়ে উঠেছে মার্কেট-শপিংমল/ছবি: জাগো নিউজ

রূপপুর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় রয়েছে রাশিয়া। জনশক্তি প্রশিক্ষণসহ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। এর ৯০ শতাংশ রাশিয়া অর্থায়ন করছে। বর্তমানে এখানে পাঁচ হাজার ৫০০ বিদেশিসহ প্রায় ৩৩ হাজার মানুষ কাজ করছে।

আরও পড়ুন: রূপপুর মেটাবে বিদ্যুতের চাহিদা, দেবে লাভও

সার্বিক প্রস্তুতি দেখতে এসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়কমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান সাংবাদিকদের বলেন, দ্বিতীয় ইউনিটের ভৌত কাঠামোর ভেতরে রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে প্রায় সব ধরনের পারমাণবিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ শেষ হবে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী চলছে। আশা করি, সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ হবে।

দ্বিতীয় ইউনিটে চুল্লি বসানোর প্রস্তুতি নিয়ে ব্রিফিং/ছবি: জাগো নিউজ

দুই ইউনিট থেকে মিলবে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎপরমাণু বিজ্ঞানী ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর বলেন, ‘প্রকল্পের প্রায় ৫৩ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি এবং ৫৫ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি হয়েছে। তবে প্রথম ইউনিটের সার্বিক অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। যখন চুল্লিগুলো কাজ করে রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল পারমাণবিক জ্বালানি এবং পরিবেশের বাইরে তেজস্ক্রিয় পদার্থকে ধারণ করে।’

আরও পড়ুন: রূপপুরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন রুশ-ইউক্রেনীয়রা

গত বছরের ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী প্রথম ইউনিটে রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। আগামী বছরের শেষ দিকে প্রথম ইউনিটের নিউক্লিয়ার ফুয়েল লোডিং উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রস্তুতিও চলছে। ফুয়েল লোডিংয়ের মধ্য দিয়ে উৎপাদনে যাবে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।

এসইউজে/এএএইচ/এএসএম