বিশেষ প্রতিবেদন

মুজিবনগর কমপ্লেক্সে হাজারো দর্শনার্থীর ঢল

শীতকালীন ছুটিসহ বিনোদনের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন স্বাধীনতার সূতিকাগার মেহেরপুরের ঐতিহাসিক মুজিবনগর কমপ্লেক্সে। দূর দূরান্ত থেকে বাস, মিনিবাস, নসিমন, করিমন, আলগামনসহ বিভিন্নভাবে দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন এখানে।    রাজনৈতিক অস্থিরতায় লাগাতার অবরোধ ও থেমে থেমে হরতালের কারণে গত বছর পর্যটক শূন্য হয়ে পড়ে ঐতিহাসিক মুজিবনগর কমপ্লেক্স। দর্শনার্থী না যাওয়ায় কমপ্লেক্সের ছোট ছোট ব্যবসায়ী, ইজারাদারসহ খেটে খাওয়া মানুষদের আয় রোজগারও কমে গিয়েছিল। কিন্তু এ বছরের মৌসুমের শুরু থেকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগরে দর্শনার্থীরা আসা শুরু করায় সবার মুখে হাসি ফুটেছে। কমপ্লেক্সের ইজারাদারসহ ভাসমান ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরের শুরু থেকেই প্রচুর পিকনিকের গাড়িসহ দর্শনার্থীরা মুজিবনগরে বেড়াতে আসা শুরু করায় বেচাকেনাও মোটামুটি ভালো হচ্ছে। তাই গত বছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন কমপ্লেক্সের ইজারাদারসহ ভাসমান ব্যবসায়ীরা।    প্রতি বছরই শীতের এই সময়ে পর্যটনে ভরা মৌসুমে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটকরা ছুটে যায় ঐতিহাসিক মুজিবনগরে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে যায় মুজিবনগর। তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না কমপ্লেক্সটিতে। মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, স্মৃতি কমপ্লেক্স, প্রশাসনিক ভবন, অডিটোরিয়াম ও প্লাজা, ছয় স্তর বিশিষ্ট গোলাপ বাগান, পর্যটন মোটেল, শিশু পরিবার, মসজিদ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক স্মৃতি ভাস্কর্য ঘুরে দেখেন দর্শনার্থীরা। প্রতিদিনই ৪০ থেকে ৫০টি পিকনিকের গাড়ি আসে পিকনিক কর্ণারে। তবে কমপ্লেক্সের কোথাও কোনো বসার ব্যবস্থা না থাকায় এবং শিশুদের বিনোদনের জন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কিছুটা হতাশ হয়েছেন দর্শনার্থীরা।    পরিবার পরিজন নিয়ে পাবনা থেকে পিকনিকে আসা ইয়াসমিন আক্তার, সেলিনা আক্তার স্বর্ণা জানান, আমরা পিকনিকের স্থান হিসেবে এই স্থানটিকে দুই কারণে বেছে নিয়েছি। ঐতিহাসিক জায়গা এবং পিকনিকের জন্য। আমরা মুক্তিযুদ্ধ জানি কিন্তু বর্তমান প্রজন্মকে এর গুরুত্ব বোঝানোর জন্য নিয়ে এসেছি।    যশোর থেকে পিকনিকে আসা ফাহমিদা খানম ও প্লাবন জানান, আমার এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। এখানে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। নেই বাচ্চাদের বিনোদনের কোন ব্যবস্থা। আর যাতায়াত ব্যবস্থা আরো উন্নত হলে ভালো হতো।    খুলনা থেকে পরিবার নিয়ে মুজিবনগর কমপ্লেক্সে বেড়াতে আসা জাকির হোসেন, খাইরুল ইসলাম তপুসহ তার পরিবারের সদস্যরা জানান, আমার স্বপ্ন ছিল মুজিবনগর দেখবো, আমি এখানে এসে গর্বিত। বর্তমান প্রজন্মের জানা উচিৎ কত রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। এখানে প্রথম সরকার গঠিত হয়েছিল। তাই আমার দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। এখানে এসে দেখে অনেক কিছু জানতে পেরেছি।    কমপ্লেক্সের ভাসমান ব্যবসায়ীরা জানান, এখানে শীত মৌসুমে দর্শনার্থী বেশি হয়, বেচাকেনাও ভালো হয়। এ বছর শুরু থেকেই প্রচুর দর্শনার্থী আসায় ব্যবসা ভালো হচ্ছে, বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে।    মেহেরপুর মুজিবনগর পিকনিক কর্ণার ও আমবাগানের ইজারাদার ইসলাম আলী জানান, মুজিবনগরের পিকনিক কর্ণার এবং আমবাগান ইজারা নিয়েছি। গত বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ বছর অনেক দর্শনার্থী আসছে, আশা করি গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো।    মেহেরপুর মুজিবনগর কমপ্লেক্সে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য দ্বায়িত্বরত আনছার কমান্ডার আবুল হোসেন জানান, কোনো দর্শনার্থী যেন কোন ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য আমরা সব সময় তৎপর রয়েছি।এসএস/এমএস