দেশজুড়ে

জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে বেলালের সেলুন পাঠাগার

মানুষের শখ বিচিত্র রকমের। যদি শখের বিষয় হয় বই, তাহলে তো আর কথাই নেই। কেউ পছন্দ করে বই সংগ্রহ করতে, কেউ পড়তে কেউ বা নিজে পড়ার পাশাপাশি অন্যকেও পড়তে উৎসাহিত করেন। এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার রসুলপুরের বেলাল হোসেন। নিজের বাড়িতে পাঠাগার তৈরির পাশাপাশি গ্রামের ৯টি সেলুনে প্রতিষ্ঠা করেছেন সেলুন পাঠাগার।

বেলালের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বইপ্রেমীরা। বিনামূল্যে বই পড়তে পেরে খুশি এলাকাবাসী। এই উদ্যোগকে প্রশংসনীয় বলছেন জেলা প্রশাসক।

জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে ছান্দিয়াপুর গ্রামে বেলাল তার নিজ বাড়িতে পাঠাগার তৈরির পাশাপাশি গ্রামের নয়টি সেলুনে প্রতিষ্ঠা করেছেন সেলুন পাঠাগার। সেলুনের দেওয়ালে তৈরি করা হয়েছে বইয়ের সেলফ। যারা চুল-দাড়ি কাটাতে আসছেন, তারা সেলফ থেকে বই নামিয়ে পড়ছেন। ইন্টারনেটের এই যুগে বইয়ের প্রতি মানুষের উদাসীনতা সত্ত্বেও অনেকেই চুল কাটাতে এসে অপেক্ষার সময়টা এখানে বই পড়ে কাটান।

আরও পড়ুন: পঞ্চগড় আদালতের হাজতখানায় বই পড়ার সুযোগ

কথা হয় সেলুনে চুল কাটাতে আসা স্কুলশিক্ষক আমজাদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বইপ্রেমী মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘সেলুন পাঠাগার’। সেলুনে চুল কাটাতে এসে বই পড়ে সময় কাটানো যায়, বিরক্তি লাগে না। এটা একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

ছন্দিয়াপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রকিবুল ইসলাম বলে, এমন উদ্যোগ সত্যিই অনেক ভালো লাগার বিষয়। সময়টা কাটানোর পাশাপাশি জ্ঞান আহরণ করা যাচ্ছে। সেলুনে অনেক সময় ভিড় থাকে। সেই সময়টা কাটাতে পারছি বই পড়ে।

ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র লিমন মিয়া বলে, অবসর সময়ে এখানে এসে বই পড়ি আমরা। এই এলাকায় যেখানে যাবেন সেলুনে বই পাওয়া যায়। এতে আমাদের সুবিধা হয়েছে। মোবাইলে ছবি না দেখে বই পড়তে পাড়ি আমরা।

আরও পড়ুন: পাঠক নেই ভোলা সরকারি পাঠাগারে

ভাই ভাই সেলুনের স্বত্বাধিকারী নির্মল চন্দ্র রায় বলেন, সেলুনে বই থাকায় উপকারই হয়েছে। কাস্টমাররা এসে আর তাড়া দেন না। কতক্ষণ লাগবে জিজ্ঞেস করেই বই হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করে। এতে কাস্টমারেরও সময় কাটে, আমরাও হাতে থাকা কাজ শেষ করতে পারি।

সেলুন পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা বেলাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে ২০১৬ সালে পরিবার ও বন্ধুদের সহযোগিতায় এলাকায় সুলতানা রাজিয়া নামে একটি পাঠাগার স্থাপন করি। মানুষ চুল কাটাতে গিয়ে অনেকেই সেলুনে বা বাইরে অলস সময় পার করে। সেক্ষেত্রে যদি সেলুনে বই রাখা হয় মানুষ বই পড়ে সময় কাটাতে পারবে। এমন চিন্তা থেকে সেলুন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করি। এ পর্যন্ত গ্রামের নয়টি সেলুনে বই রাখা হয়েছে। সেলুনে বসে বই পড়ে সময় পার করছে মানুষ। এই দৃশ্য দেখতে সত্যিই ভালো লাগে আমার।

আরও পড়ুন: পাবনায় সাড়া ফেলেছে তিন বন্ধুর ‘পথ পাঠাগার’

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক অলিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সেলুন পাঠাগার প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ। জেলায় এই পাঠাগার ছড়িয়ে দিতে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

রসুলপুর ইউনিয়নের ছান্দিয়াপুর গ্রামে নয়টি সেলুনে রয়েছে বিনামূল্যে বই পড়ার ব্যবস্থা। যেখানে আশপাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে চুল কাটাতে আসে বিভিন্ন বয়সী মানুষ। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা না করে তারা সেলুনের ভেতরে বসে বই পড়ছেন। অনেকেই আবার শুধু বই পড়ার উদ্দেশ্যেই এখানে আসেন। খাতায় নাম লিখিয়ে নিয়ে যেতে পারে বাড়িতেও। লাইব্রেরিটিতে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন লেখকের আড়াই হাজারেরও বেশি বই।

এসএইচএস/এএসএম