সিরাজগঞ্জে নতুন ইট উৎপাদন নিয়ে বিপাকে পড়ছেন ইটভাটা মালিকরা। আমদানি বন্ধ থাকায় জ্বালানি (কয়লা) সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু করতে পারছেন না তারা। নতুন ইট উৎপাদন না হওয়ায় বেড়েছে মজুত ইটের দাম। ফলে বেসরকারি আবাসন খাতসহ সরকারি উন্নয়ন কাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে।
জেলায় ইট পোড়ানোর মৌসুমে কয়লা কিনতে না পেরে বেশিরভাগ ইটভাটার মালিকরা এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি। ভাটা মালিকদের দাবি স্বল্প পরিসরে কয়লা আমদানি শুরু হলেও কয়লা ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে মেট্রিক টন প্রতি কয়লার দাম বেড়ে তিনগুণ পর্যন্ত হয়েছে।
বর্তমানে এক মেট্রিক টন কয়লা কিনে ভাটা পর্যন্ত নিয়ে আসতে ৩০ হাজার টাকার উপরে খরচ হচ্ছে। এ অবস্থায় ইটের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে ইটভাটা মালিক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা।
সিরাজগঞ্জ সদরসহ ৯টি উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ১৪১টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে ১২৬টি সচল থাকলেও কয়লার অভাবে ইটকাটা বন্ধ আছে।
রোববার (১৩ নভেম্বর) উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের নয়ন ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, ভাটা জুড়ে শ্রমিকরা কাঁচা ইট তৈরিতে ব্যস্ত। সারি সারি কাঁচা ইট শুকিয়ে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু কয়লার উচ্চমূল্যের কারণে ইট পোড়ানোর কাজ বন্ধ রয়েছে।
রায়গঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা ঘুরে জানা যায়, গত বছরের ইট এরই মধ্যে বিক্রি প্রায় শেষ। কিন্তু নতুন করে উৎপাদনে না যাওয়ায় জেলাজুড়ে ইটের বেশ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারি উন্নয়ন কাজে ঠিকাদাররা ইট কিনে কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। আর নতুন ইট উৎপাদনের পর যে দামে বিক্রি হবে, তা বর্তমান বাজার দরের দ্বিগুণ।
এন এম ব্রিকসের মালিক শাহ আলম জাগো নিউজকে বলেন, আমি ব্যাংক ঋণ ও আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে ইটভাটা করেছি। কিন্তু কয়লার সংকটে ভাটায় আগুন দিতে পারছি না।
এল আর ব্রিকসের মালিক ফারুক হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, প্রতি রাউন্ডে ৭ থেকে ৮ লাখ ইট পোড়ানো হয়। এতে প্রায় ১৩০ টন কয়লা লাগে। তাতে ৮ রাউন্ড পোড়ালে ১ হাজার টনের বেশি কয়লার প্রয়োজন হয়। এক হাজার টন কয়লার দাম ছিল ৮৫ থেকে ৯০ লাখ টাকা। সেই কয়লা এবার কিনতে হবে তিন কোটি টাকার বেশি দিয়ে। আবার টাকা হলেই কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না।
সিরাজগঞ্জ এ্যালবাট হাউজিং প্রকল্পের ম্যানেজার হুমায়ন কবির সোহাগ জাগো নিউজকে বলেন, ইটের মূল্য বৃদ্ধিতে ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাবে। ফলে ফ্ল্যাটের মূল্য গ্রাহকদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে হাউজিং প্রকল্প গুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
রায়গঞ্জ উপজেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম হোসেন শোভন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ঘণ্টায় ঘণ্টায় কয়লার দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে ইট ভাটা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া মালিকদের আর কোনো উপায় নেই। ইট ভাটা শিল্প এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। দ্রুত সরকারি প্রণোদনার মাধ্যমে কয়লার দাম কমিয়ে এই শিল্পকে বাঁচানো জরুরি।
রায়গঞ্জ উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ওমর ফারুক খান জুবায়ের জাগো নিউজকে বলেন, জেলায় প্রায় ১৩০টি ইটভাটা চালু আছে। যেখানে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করে। কয়লার সংকট দ্রুত কাটিয়ে উঠতে না পারলে মালিক পক্ষ ছাড়াও বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবনজীবিকা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।
জেএস/জিকেএস