দিন যতই বাড়ছে খাবারের তালিকায় ততই জনপ্রিয় হচ্ছে শুঁটকি মাছ। শুধু দেশেই নয় বিদেশেও বাড়ছে এর চাহিদা। ফলে বাড়ছে শুঁটকি সরবরাহ। তবে মাঝে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা নানা প্রেক্ষাপটে লোকসান গুনতে হচ্ছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা শুঁটকি পল্লীর ব্যবসায়ীদের।
মূলত সাগরের মাছ দিয়েই কুয়াকাটায় শুঁটকি করা হয়। তাই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষের পরপরই শুরু হয়েছে তাদের প্রাথমিক কার্যক্রম। অর্থাৎ বছরের কার্তিক থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত কলাপাড়ায় প্রায় ৪০ প্রতিষ্ঠান শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত থাকে।
ব্যবসায়ীরা জানান, শুঁটকির সিংহভাগ চলে যায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা, জামালপুর, টাঙ্গাইলসহ দেশ ও দেশের বাহিরে। গত বছর সুনামগঞ্জের বন্যায় লোকসান গুনতে হয়েছে অনেক ব্যবসায়ীকে। ফলে সেই লোকসান কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় রয়েছেন তারা।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা শুঁটকি পল্লীতে প্রায় ছয় শতাধিক নারী কাজ করছেন। এখন তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
মাছ ভেদে ৩৫০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা কেজি পর্যন্ত দামে বিক্রি হয় এ শুঁটকি। চাহিদা অনুযায়ী শুঁটকি সরবরাহ করতে মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুর থেকে সংগ্রহ করা হয় মাছ।
লইট্টা, সুরমা, ছুরি, রুপচাদা, সুন্দরি, চ্যাপা, চাপিলা, কাচকি, চ্যালা, বাইলা, বাঁশপাতা, মলা, বড় চিংড়ি, ছোট চিংড়ি, পোয়া, টোনা, ফাইস্যা, নোনা ইলিশ, ইলিশের ডিম, কাকিলা, কোরাল, লাখ্যা, রইস্যাসহ ৩৫-৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ শুঁটকি করা হয়।
উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, গতবছর প্রায় তিন হাজার ৬০০ টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছে কুয়াকাটায়। এছাড়া স্থানীয় মার্কেটে বেশকিছু শুঁটকি খুচরা বিক্রি হয়েছে। তবে সরকার ২০২৩ সালের মার্চের পরই শুঁটকি ব্যবসায়ীদের জন্য একটি জায়গা তৈরির কাজ হাতে নিচ্ছে। যেখানে সব ব্যবসায়ী এক ছাদের নিচে বসবেন।
কুয়াকাটা শুঁটকি ব্যবসায়ী মোশাররফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘জেলেদের কাছ থেকে মাছ কেনার পর বাছাই করা হয়। কয়েক ভাগে আলাদা করে মাছ থেকে ময়লা ছাড়ানো, লবণ দেওয়া, কেটে শুকাতে দেওয়া হয়। এভাবেই শুরু হয় শুঁটকির কার্যক্রম।’
ব্যবসায়ী বেল্লাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত বছর কয়েকটি বন্যায় আমরা ঠিক মতো শুঁটকি উৎপাদন ও বাজারজাত করতে পারিনি। এতে আমার প্রায় আট লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাই এবার শুরু থেকেই মরিয়া হয়ে কাজ করছি। যাতে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়।’
দিনমজুর হিসেবে কাজ করা লাকী বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে আসি, মাছ শুঁকানো, উল্টানো, প্যাকেজিং করি। বিকেল পর্যন্ত কাজ চলে। জনপ্রতি ৩৫০ টাকা করে দেয়। পুরো মৌসুমেই এখানে কাজ করি।’
কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জাগো নিউজকে বলেন, কুয়াকাটায় যারা শুঁটকি করে তারা বেশ অভিজ্ঞ। তাদের একটি স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরও উন্নত মানের শুঁটকি তৈরিতে ট্রেনিংয়েরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামী মার্চে সেই কাজ শুরুর কথা রয়েছে। তাদের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সরকারেরও একটি পরিকল্পনা আছে।
এসজে/এএইচ/এমএস