জয়পুরহাট জেলার ২২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। সরকারি তহবিলের অভাব ও সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালীপনার কারণে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থাপন করা হয়নি শহীদ মিনার। ফলে ২১ ফেব্রুয়ারি আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস স্বীকৃতি পেলেও এর ইতিহাস ও গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা নেয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রাম পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। শহীদ মিনার না থাকা কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২১ ফেব্রুয়ারি এলেই নিজেদের উদ্যোগে কলা গাছ পুঁতে, বাঁশ, কাঠ ও কাগজ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। এছাড়া জেলা ও উপজেলা সদরের কিছু প্রতিষ্ঠানে মাতৃভাষা দিবসের কর্মসূচি পালিত হলেও অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই মাতৃভাষা দিবসের কোনো কর্মসূচি পালন করা হয় না। জয়পুরহাট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার ৫টি উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি মোট ২৬২টি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা রয়েছে। এর মধ্যে ২২১টিতেই শহীদ মিনার নেই। সূত্র জানায়, সদর উপজেলার ৮১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭০টিতে, পাঁচবিবি উপজেলার ৭৩টির মধ্যে ৭১টিতে, কালাই উপজেলার ৪২টির মধ্যে ৩৪টিতে, ক্ষেতলাল উপজেলার ৩৬টির মধ্যে ২৯টিতে, আক্কেলপুর উপজেলার ৩০টির মধ্যে ১৭টিতে কোনো শহীদ মিনার নেই। সূত্র আরও জানায়, জয়পুরহাট পৌরসভার স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার মধ্যে জয়পুরহাট শহীদ জিয়া কলেজ, জয়পুরহাট মহিলা ডিগ্রি কলেজ, জেলার একমাত্র মডেল মাদরাসা জয়পুরহাট সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা ও জেলা প্রশাসন দ্বারা পরিচালিত কালেক্টরেট বালিকা বিদ্যা নিকেতন, জয়পুরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ পৌরসভার ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো শহীদ মিনার নেই। তবে খঞ্জনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণাধীন রয়েছে।জেলায় শহীদ মিনার নির্মাণে সব চেয়ে উপেক্ষিত মাদরাসাগুলো। ১০১টি মাদরাসার মধ্যে শুধু ৪টি মাদরাসায় শহীদ মিনার আছে অথচ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই সরকারিভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করার নির্দেশ রয়েছে। জয়পুরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আমজাদ হোসেন জানান, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনের উদ্যোগে মাতৃভাষা দিবসসহ জাতীয় দিবসগুলো গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়। সেখানে কেবল শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দিলেও দূরত্বের কারণে গ্রামের শিক্ষার্থীদের আসা সম্ভব হয় না। ফলে তারা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস ও গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা নেয়া থেকে বঞ্চিত হয়। এজন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার স্থাপন জরুরি। জয়পুরহাট মহিলা ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমন কুমার সাহা বলেন, শহীদ মিনার না থাকার কারণে গ্রামের প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই বন্ধ থাকে। ফলে নীরবে নিভৃতেই পেরিয়ে যায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মতো তাৎপর্যপূর্ণ একটি মহান দিন। জয়পুরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, শহীদ মিনার নির্মাণে সব প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া আছে। সরকারি অনুদানের অজুহাত দেখিয়ে অনেকেই এখন পর্যন্ত নির্মাণ করেনি তবে বিষয়টিকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।রাশেদুজ্জামান/এসএস/পিআর