শরীয়তপুরের জাজিরায় ঢাকা-ভাঙ্গা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মরদেহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। এ সময় স্বজনহারাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও যেন ছিল না কারও।
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মরদেহগুলো আনা হয়। পরে বিকেলে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে ভোর ৪টার দিকে পদ্মা সেতুর জাজিরা টোলপ্লাজার কাছে হাইওয়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ভর্তি ট্রাকের পেছনে অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ, স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোলপ্লাজার ৩০০ থেকে ৪০০ মিটার সামনে ভোরে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ট্রাককে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় অ্যাম্বুলেন্সটি। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সটি ট্রাকের নিচে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চালকসহ গাড়িতে থাকা ছয়জন প্রাণ হারান।
চালক রবিউল ইসলাম (২৮) খুলনার দিঘলিয়ার চন্দনিমহল এলাকার কাওসার হাওলাদারের ছেলে। তিনি রোববার দিনগত রাত ২টার দিকে ঢাকা থেকে রোগী নিয়ে ভোলা যান। ভোলা থেকে ঢাকায় ফেরার পথে বরিশাল শহরের বেলভিউ হাসপাতাল থেকে আরেক রোগী নিয়ে সোমবার রাতে ঢাকায় রওয়ানা হন। দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোর কারণে তার শরীর ক্লান্ত ছিল। এই অবস্থায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার পর ট্রাকচালক পালিয়েছেন। তাকে খুঁজছে পুলিশ।
এদিকে মরদেহগুলো জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে পরিবারের লোকজন এসে সেগুলো শনাক্ত করেন। পরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পরিবারের কাছে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হয়।
নিহতদের মধ্যে জাহানারা বেগম (৫৫) ও তার মেয়ে লুৎফুন নাহার লিমার (৩০) বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার আনারসিয়া গ্রামে। জাহানারা বেগমের স্বামী লতিফ মল্লিক যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। স্বাস্থ্যকর্মী ফজলে রাব্বির (২৮) বাড়ি বাউফল উপজেলার আনারসিয়া গ্রামে। সাংবাদিক মাসুদ রানার (৩০) বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাসাইল গ্রামে। আর চালক রবিউলের সহকারী জিলানির (২৬) বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর গ্রামে।
জাহানারা বেগমের মেয়ে শিল্পী আক্তার মা ও বোনকে হারিয়ে বিলাপ করে বলেন, আমরা দুই বোন। আদরের বোন ও মাকে হারালাম। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
অ্যাম্বুলেন্সচালক রবিউলের ভাই ইয়াছিন হাওলাদার জানান, তারা দুই ভাই অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে সংসার চালান। রবিউল রোববার রাত ২টার দিকে ঢাকা থেকে রোগী নিয়ে ভোলা যান। ভোলা থেকে ফেরার পথে তিনি বরিশাল শহর থেকে গতকাল রাতে আরেকজন রোগী নিয়ে ঢাকায় আসছিলেন। পথে পদ্মা সেতু এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। ভাইকে হারিয়ে হতবাগ তিনি।
আহাজারি করতে দেখা গেলো অনেককে। তাদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে আশপাশের পরিবেশ। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও যেন কারও ছিল না তখন।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান সোহেল বলেন, ঘটনাটি আসলেই মর্মান্তিক। দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। মরদেহগুলো শনাক্তের পর বিকেলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ছগির হোসেন/এফএ/এএসএম