জাতীয়

নিজ এলাকায় রাজনীতিবিদ-ঠিকাদার, ঢাকায় দুর্ধর্ষ ডাকাত

রফিকুল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী। রাজধানীর তাঁতিবাজার এলাকা থেকে ব্যবসায়িক ৪১ লাখ টাকা উত্তোলন করে বাবুবাজার থেকে বাসে উঠেন তিনি। গন্তব্য পদ্মা সেতু দিয়ে শরীয়তপুরের নড়িয়া। বাসটি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার চুনকুটিয়া এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ দুইটি মোটরসাইকেল গতিরোধ করে। পরে মোটরসাইকেল থেকে চারজন ‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয়ে বাসে উঠেন। তারা ৪০ জন যাত্রীর সামনে রফিকুলকে মারতে মারতে বাস থেকে নিচে নামান। একপর্যায়ে রফিকুলের ব্যাগভর্তি ৪১ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।

Advertisement

এ ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করা হলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম গত জানুয়ারি মাসব্যাপী তদন্ত করে ভয়ংকর ডাকাত চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতাররা হলেন- মুজিবুর রহমান ওরফে নলা মুজিবর, জামাল হোসেন, কাউসার আহমেদ ও মাহতাব উদ্দিন। এসময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল, ১১ লাখ টাকা ও চারটি মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, গত বছরের ৬ অক্টোবর মোবাইলফোন ও কম্পিউটার এক্সেসরিজ সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত ব্যবসায়িক ৪১ লাখ টাকা তাঁতিবাজার এলাকা থেকে উত্তোলন করি। এরপর বাবুবাজার থেকে একটি বাসে উঠে পদ্মা সেতু হয়ে শরীয়তপুরের নড়িয়াতে যাচ্ছিলাম।

আরও পড়ুন: দালাল ধরতে চট্টগ্রাম কাস্টমসে দুদকের অভিযান

Advertisement

তিনি বলেন, টাকা উত্তোলনের সময় ডাকাত চক্র আমাকে অনুসরণ করে। যাওয়ার সময় হঠাৎ দুইটি মোটরসাইকেল বাসের গতিরোধ করে। পরে ডাকাতরা প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে ৪০ জন যাত্রীর সামনে আমাকে মারতে মারতে নিচে নামায়। পরে ৪১ লাখ টাকা ভর্তি ব্যাগটিকে নিয়ে আমাকে লাথি দিয়ে রাস্তায় ফেলে তারা পালিয়ে যায়।

ডিবি জানায়, গ্রেফাতার কাউসার ডাকাতির ঘটনা ও জড়িতদের সম্পর্কে স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ডাকাত চক্রের সদস্য সংখ্যা ছয় থেকে সাতজন। চারজনকে গ্রেফতার করা হলেও এখনো দুইজনকে গ্রেফতার হয়নি। পলাতকরা হলেন- রাসেল কবির ও মনিরুজ্জামান ওরফে সবুজ মনির।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পলাতক আসামি রাসেল কবির বরগুনা জেলার আমতলী থানার হলদিয়া ইউনিয়নের যুবদলের সভাপতি। গ্রেফতার কাউসার আহমেদ পটুয়াখালী জেলা সদর সার্কেল এলাকায় স্থানীয় যুবলীগের দাতা সদস্য ও প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার। এলাকায় তাদের রাজনৈতিক ও ঠিকানাদার হিসেবে চিনলেও ঢাকায় বসে করতেন বড় বড় ডাকাতি। গত কয়েক বছরে চক্রটি ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে কয়েকটি বড় ডাকাতির ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয়। ডাকাত সদস্য কাউসার ডাকাতির টাকায় জেলা সদরে জমি কিনে বানাচ্ছেন বহুতল ভবন।

আরও পড়ুন: রাজশাহীতে চুরির অপবাদে দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা

Advertisement

মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর সুত্রাপুর থানাধীন একটি ফাস্টফুডের দোকানে ডাকাতির আগে খোঁজ-খবর নিতে যায়। খবর পেয়ে গোয়েন্দা পুলিশ সেখানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতরা অস্ত্র দেখিয়ে দোকানি ও পুলিশকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় একটি মামলা করা হয়। গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ দুটি মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে গোয়েন্দা পুলিশ ডাকাত দলের দুই সদস্য মজিবুর রহমান ও জামাল হোসেনকে গ্রেফতার করে।

এ বিষয়ে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে বাস থেকে নামিয়ে ৪১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাটি আমাদের নজরে আসে। দীর্ঘ তদন্তের পর চারজন ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে কাউসার আদালতে ডাকাতির ঘটনা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি দুই ডাকাতকে গ্রেফতারে ডিবির লালবাগ বিভাগের সবগুলো টিম এখনো মাঠে কাজ করছে।

আরও পড়ুন: সৌদিতে মানবপাচারকারী চক্রের ৫ সদস্য ঢাকায় গ্রেফতার

তিনি বলেন, নিয়মিত অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকা আসামি কাউসারকে পটুয়াখালী থেকে ও মাহতাবকে খুলনা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল, চারটি মোবাইলফোন ও নগদ ১১ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, পলাতকদের মধ্যে রাসেল কবির বরগুনা জেলার আমতলী থানার হলদিয়া ইউনিয়নের যুবদলের সভাপতি। আর গ্রেফতার কাউসার আহমেদ পটুয়াখালী জেলা সদর সার্কেল এলাকায় স্থানীয় যুবলীগের দাতা সদস্য ও প্রথম শ্রেণির ঠিকানাদার। এলাকায় তাদের রাজনৈতিক ও ঠিকানাদার হিসেবে চিনলেও ঢাকায় বসে করতেন বড় বড় ডাকাতি। ডাকাত সদস্য কাউসার ডাকাতির টাকায় জেলা সদরে জমি কিনে বানাচ্ছেন বহুতল ভবন।

তিনি বলেন, গ্রেফতার প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে অর্ধ ডজন থেকে শুরু করে একাধিক ডাকাতি, দস্যুতার মামলার রয়েছে।

টিটি/আরএডি