খুলনায় স্কুলছাত্র নিরব মণ্ডলকে হত্যার পর তার বাবার কাছে ৩০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। ভারতীয় ক্রাইম পেট্রোল সিরিয়াল দেখেই এ হত্যা ও মুক্তিপণের পরিকল্পনা করে পাঁচ হত্যাকারী।
Advertisement
শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে একথা জানায় গ্রেফতার হওয়া সহপাঠীরা। তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-২ আদালতের বিচারক রনক জাহান।
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেখ কনি মিয়া জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালতের সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পাঁচ আসামি পর্যায়ক্রমে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় আসামিদের শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সংশোধানাগারে পাঠানো হবে।
Advertisement
আরও পড়ুন: হিরো আলমকে পরাজিত করতেও কারচুপি: হেলাল
জবানবন্দিতে তারা জানায়, দেড় মাস আগে থেকে ভারতীয় ক্রাইম পেট্রোল দেখে কোনো একজনকে অপহরণের বিষয়ে প্রস্তুতি নেয় গ্রেফতাররা। এসময় থেকে তারা নিবর মণ্ডলকে টার্গেট করে। নিরবকে অপহরণ করতে সুযোগ খুঁজতে থাকে তারা। সেজন্য আগেই পাঁচজনের একটি টিম গঠন করে। সে সময় থেকে তাদের কার কি ভূমিকা থাকবে তা তারা সিদ্ধান্ত নিতে থাকে। আসামি হিরক স্বরসতী পূজার আগে ও পরে নিরবকে অপহরণের টার্গেট নেয়। কিন্তু প্রথম ধাপে সে সফল হতে পারেনি। এরপর দায়িত্ব নেয় পিয়াল কিন্তু সেও ব্যর্থ হয়।
এরপর বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নিরবকে ডেকে নেয় আসামিরা। এর আগে হত্যাকাণ্ডের স্থানে অভিযুক্ত স্কুলছাত্র পিতু বাড়ি থেকে নাইলনের রশি, তালা ও চাবি নিয়ে অবস্থান করতে থাকে। অপেক্ষার পর নিরবকে স্কুলের পাশে ওই পরিত্যক্ত ভবনে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পিতু ও দ্বিপ গলায় রশি পরিয়ে দেয়। কিছু বুঝে ওঠার আগে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করা হয়। মরার আগে নিরব সমস্ত শরীর নাড়া দিলে ভয় পেয়ে যায় আসামিরা। পিতু গলার দড়ি খুলে দেয় আর পিয়াল নিরবকে ধরে রাখে। নিরবের মৃত্যুর পর বাবা শেখর মণ্ডলকে ফোন দেয় পিতু। এসময় পাশে দাঁড়িয়ে ছিল সোহেল। তারা নিরবের বাবার কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এরপর নিরবের বাবা ও আসামিদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়।
আরও পড়ুন: নির্ধারিত সময়ের আগেই খুলনায় বেড়েছে চিনির দাম
Advertisement
একপর্যায়ে আসামি সোহেল ব্যবহৃত ফোনের ইনকামিং কল বন্ধ করে দেয়। তারা ওই ভবনের পেছনের দরজায় তালা দিয়ে রেখে চলে যায়। তাদের ধারণা ছিল, শুক্র, শনি ও রোববার (মাঘী পূর্ণিমা) স্কুল ছুটি। এ তিন দিনের মধ্যে তারা সব আলামত নষ্ট করে ফেলে দেবে। যাতে স্কুলে এমন ঘটনা ঘটেছে, কেউ টের না পায়। কিন্তু তা হয়ে উঠেনি। ঘটনার পর রাত ১১টার দিকে তারা আবারও নিরবের বাবার ব্যবহৃত ফোনে কল করে মুক্তিপণ দাবি করে। আর ওই ফোন কলের সূত্র ধরেই পুলিশের জালে আটকা পড়ে তারা।
পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে প্রথমে সোহেলকে আটক করে। পরবর্তীতে একে একে সবাইকে গ্রেফতার করে। এরপর শুক্রবার রাতে আদালতেও ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেয় অপরাধীরা।
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেখ কনি মিয়া বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আসামিরা। পরবর্তীতে আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার কথা তাদের জানালে তারা রাজি হয়। বিকেল ৪টার দিকে তাদের আদালতে নেওয়া হয়। পরে ক্রমান্বয়ে তারা আদালতে জবানবন্দি দিতে থাকে।
আরও পড়ুন: খুলনায় দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত ১
নিহত সপ্তম শ্রেণির ছাত্র নীরব মণ্ডল খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া পূর্বপাড়া এলাকার পান-সুপারি ব্যবসায়ী শেখর মণ্ডলের ছেলে। বৃহস্পতিবার তাকে দেড়টার দিকে অপহরণ ও বিকেল ৩টার দিকে গুটুদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি পরিত্যক্ত রুমে নিয়ে হত্যা করা হয়।
আলমগীর হান্নান/জেএস/এএসএম