দেশজুড়ে

জামালপুরে ফসলি জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের দাবি

জামালপুরের মাদারগঞ্জে ফসলি জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। এতে আতামারি, কুকুরমারি, ফুলজুর, ধারাবর্ষা, কামারপাড়া ও বারইপাড়া এলাকার সহস্রাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন।

বুধবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে ‘৭৫২ একর কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’র উদ্যোগে উপজেলার জোড়খালী ইউনিয়নের কাইজ্জার চরে এ বিক্ষোভ মিছিল হয়। পরে প্রকল্পের প্রস্তাবিত জমিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স। সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ক্ষেতমজুর সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন রেজা, জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোজহারুল হক, নাট্যকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আক্কাস, ‘নদী ভাঙলে জমি খাস’ আইন বাতিল বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক কবি আলতাফ হোসেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রাজু শেখ, আশরাফ হোসেন, আঈন উদ্দিন প্রমুখ।

প্রতিবাদ সভায় এলাকাবাসী অভিযোগ করে, তাদের বাপ-দাদার আমলের মালিকানাধীন জমি খাস খতিয়ানভুক্ত করে ও অনাবাদী দেখিয়ে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের পাঁয়তারা করা হচ্ছে। নদী সিকস্তি অঞ্চলের ডিএস, সিএস, এসএ রেকর্ড ও জমিদারি আমলের পয়স্তি মালিকানা হরণ করে কাইজ্জার চর এলাকায় প্রায় ৭৫২ একর জমি ভুল ব্যাখ্যা করে বিআরএস অন্তর্ভুক্তি থেকে বাদ দেওয়া হয়। এতে জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে চরাঞ্চলের ১০ সহস্রাধিক মানুষ।

সমাবেশে স্থানীয় কৃষকরা জানান, এ অঞ্চলের প্রতি বিঘা জমিতে ৫০-৬০ মণ ভুট্টা, ৪০-৪৫ মণ মরিচ, ৩০-৩৫ মণ ধান ও ৭-৮ মণ সরিষাসহ প্রতি মৌসুমে বিভিন্ন প্রজাতির ফসল উৎপন্ন হয়। অথচ এই জমিতে করা হচ্ছে এমন প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী এবং ভূমিমন্ত্রী বলেছেন, আবাদি জমি নষ্ট করে শিল্পকারখানা করা যাবে না; কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন জমিগুলো অনাবাদি দেখিয়েছে। কৃষকদের দাবি, হয় এ প্রকল্প স্থানান্তর করুক, নয় তাদের মেরে ফেলুক।

জানা গেছে, ২০২১ সালের জুন মাসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে জামালপুরের মাদারগঞ্জে দেশের সবচেয়ে বড় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা করে সরকার। ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন মাদারগঞ্জ সোলার পার্কটি নির্মাণ করবে রাষ্ট্রায়ত্ত রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল)। তখন ২০২৩ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা বলা হয়েছিল।

একনেক সভায় ‘সোলারপার্ক, মাদারগঞ্জ, জামালপুর’ নামে ৩১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেন একনেক সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২১ সালের ১০ আগস্ট ঢাকায় এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এই প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভা পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে, প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জামালপুর জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায় জাগো নিউজকে বলেন, এই মুহূর্তে এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। বিস্তারিত পরে জানানো যাবে।

এছাড়া ফসলি জমিতে সোলার পার্ক করার প্রতিবাদে কাফনের কাপড় পরে এলাকাবাসীর বিক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টিও এখনই প্রথম শুনলাম।

মো. নাসিম উদ্দিন/এমআরআর/এএসএম