কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আজ গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বদিকে পানাউল্লারচর এবং নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার সররাবাদ ইউনিয়নের আলগড়া এলাকায় এ গণহত্যা সংঘটিত হয়। মানুষ যখন পহেলা বৈশাখ বরণে ব্যস্ত তখন পাক হানাদার বাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালায়। হানাদার বাহিনীর নির্বিচার ব্রাশফায়ারে পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু মারা যায়।
একই দিন ভৈরবের বিভিন্ন স্থানে আরও দুই শতাধিক লোককে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেদিন ব্রহ্মপুত্রের পানি রক্তে লাল হয়ে যায়। দেখা যায় মেঘনা আর ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে শুধু লাশ আর লাশ।
হানাদার বাহিনীর ভয়ে আত্মীয়-স্বজনরা মরদেহগুলো সেদিন দাফন করতে পারেননি। পরে মরদেহগুলো ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের উভয়প্রান্তে গণকবর দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের সময় থেকে শুরু করে দীর্ঘ ৩৫ বছর অবহেলায় থাকার পর ভৈরব প্রান্তের বধ্যভূমিতে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।
সরকারি উদ্যোগে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ হলেও এখনো শহীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা সম্ভব হয়নি। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও তালিকা না হওয়ায় এলাকাবাসীসহ নিহতদের পরিবারে আছে ক্ষোভ। অনেক পরিবারই পায়নি শহীদ পরিবারের মর্যাদা।
আজও অনেক স্বজনহারা পরিবার পানাউল্লারচর আলগড়া তাদের আত্মীয়দের গণ কবরের কাছে গিয়ে চোখের জল ফেলেন। ভৈরবের পানাউল্লারচর আলগড়া খেয়াঘাটে আজ তেমন পানি নেই। কারণ ব্রহ্মপুত্র নদ শুকিয়ে গেছে। এই স্থানে মুক্তিযুদ্ধের ৩৫ বছর পর স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে বধ্যভূমিটি। শুধু স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে ফুল দেওয়া আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া সারা বছর আর কিছুই করার থাকে এখানে।
এ বিষয়ে শহীদের স্বজন বিল্লাল হোসেন মোল্লা জানান, আল্লাহ আমাদের প্রাণে বাঁচিয়েছেন। সেদিনের নির্মম ও পৈচাশিক দৃশ্য মনে হলে আজও গা শিহরে উঠে। পহেলা বৈশাখ এলে দিনটির কথা ঘুরে ফিরে মনে আসে। আজও অনেক স্বজনহারা পরিবার পানাউল্লারচর আলগড়া তাদের আত্মীয়দের গণকবরের কাছে গিয়ে চোখের জল ফেলে।
ভৈরব পৌরসভার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছ বলেন, ১৩ এপ্রিল ছিল বুধবার। ভৈরবের ঐতিহ্যবাহী সাপ্তাহিক হাটের দিন। হাটের দিন ভৈরব বাজারে দেখা যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। রাত পোহালেই পহেলা বৈশাখ। নববর্ষের নতুন সূর্যোদয় তখনো হয়নি। হঠাৎ ভয়াল গর্জনে ধরণি কেঁপে উঠলো। হেলিকপ্টার থেকে নেমে পাকবাহিনী সামরিক কায়দায় পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে থাকে। গ্রাম দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে তারা। বহু পথচারী প্রাণ হারায় তাদের নির্বিচার গুলিতে। মিলিটারি বাহিনী ব্রহ্মপুত্র নদে যায়। ব্রাশফায়ারে পাখির মত গুলি করে মারা হলো কয়েকশ মানুষকে। এভাবেই সংঘটিত হয়েছে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। নিরীহ মানুষের রক্তে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি লাল হয়ে উঠলো।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ জাগো নিউজকে বলেন, ১৪ এপ্রিলে শহীদদের প্রাথমিক একটি তালিকা আমার দপ্তরে আছে। যদিও এটি পুরনো তালিকা। তবে পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির জন্য প্রশাসন তদারকি করছে।
রাজীবুল হাসান/এসজে/জিকেএস