মোটরসাইকেলের হেলমেট বিক্রিতে কঠোর হচ্ছে সরকার। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদন ছাড়া হেলমেট বিক্রি করা যাবে না। দুর্ঘটনা রোধ এবং হেলমেটের মান নিশ্চিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি আরও কঠোরভাবে তদারকি করা হবে। বুধবার (১৭ মে) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেন, মোটরসাইকেল চালকরা প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাস-ট্রাক যে পরিমাণ দুর্ঘটনায় পড়ে, তার চেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয় মোটরসাইকেল। এ কারণে আমরা চালক ও আরোহীর হেলমেটের মান নিশ্চিত করতে চাচ্ছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দেশে হেলমেট তৈরি হোক কিংবা বিদেশ থেকে আমদানি করা হোক, চূড়ান্তভাবে বিএসটিআই’র সনদ নিয়ে তা বাজারজাত করতে পারবে। এর আগে পারবে না। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মান নিশ্চিত হয়ে হেলমেট বাজারজাত করার অনুমতি দেবে।
আরও পড়ুন: নিম্নমানের হেলমেটের ছড়াছড়ি, মানা হচ্ছে না বিএসটিআই’র নীতিমালা
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মোটরসাইকেলের হেলমেট যে বিক্রি করবে বিএসটিআই’র কাছ থেকে তার অনুমোদন নিতে হবে। যে কোম্পানি বানাবে বা আমদানি করবে তাদেরও অনুমতি নিতে হবে। বিএসটিআই’র স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী তারা বানাবে, সেটার সার্টিফিকেট দেবে বিএসটিআই।
বিআরটিএ তো আগে থেকেই অননুমোদিত হেলমেটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, আমরা এটাকে আরও ভালোভাবে যাতে বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। বাজারজাত করার আগেই অনুমতি নিতে হবে।
বাজারের মানহীন হেলমেট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। এজন্য আমরা সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিআরটিএ পুলিশি সহযোগিতা চাইলে সহযোগিতা করবে। বিআরটিএ অভিযান চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন: সিএম লাইসেন্স ছাড়া হেলমেট বিক্রি, রামপুরায় মামলা-জরিমানা
আসাদুজ্জামান খান বলেন, টার্মিনাল ছাড়া কোনো স্থান থেকে সার্ভিস চার্জ কিংবা চাঁদা আদায় করা যাবে না। সিটি করপোরেশন নির্ধারিত টার্মিনাল ছাড়া অন্য কোথাও চার্জ, টোল কিংবা ফি আদায় করা যাবে না। সিটি করপোরেশন যেখানে ঠিক করে দেবে, সেখান থেকেই আদায় করতে হবে। বাইরের জেলাগুলো, যেখানে সিটি করপোরেশন নেই, সেখানে পৌরসভা কিংবা জেলাপ্রশাসকের নির্ধারণ করে দেওয়া জায়গা থেকে সার্ভিস চার্জ আদায় করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, মোটরসাইকেল চালকদের যেসব সিটি করপোরেশন সেবা দেয়, তাদের একটি নির্ধারিত জায়গা থাকবে, সেখান থেকে ছাড়া আর কোথাও থেকে ফি আদায় করা যাবে না। রাস্তাঘাটে গাড়ি থামিয়ে কোনো চাঁদা নিলে তাদের নামে নিয়মিত মামলা হবে। আর এ ব্যাপারে মামলা করবে সিটি করপোরেশন।
আরও পড়ুন: মান সনদ ছাড়া হেলমেট বিক্রি, দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুলগুলোকে বিআরটিএ’র লাইসেন্স নিতে হবে উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান খান বলেন, যারা নতুন করে ড্রাইভিং স্কুল তৈরি করবে, তাদের এ অনুমোদন নিতে হবে। কোনো অবৈধ ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুল কেউ করতে পারবে না। বিআরটিএ’র অনুমোদন লাগবে। এমনকি যেগুলো চালু আছে, সেগুলো বিআরটিএ পরীক্ষা করবে, এরপর সনদ পেলেই তারা কেবল প্রতিষ্ঠান চালু করতে পারবে।
চালকদের ডোপ টেস্টে ৯০০ টাকা ফি বেশি হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এটা কমানোর জন্য একটি সুপারিশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে, তারা এটি বিবেচনা করবে। গাড়িচালক, কন্ট্রাক্টর, সুপারভাইজার ও হেলপারদের নিয়োগপত্র দেওয়ার একটি আইন করা হচ্ছে। এটি পাস হওয়ার অপেক্ষায় আছে। নিয়োগপত্র দেওয়ার বিষয়ে সড়ক পরিবহন মালিক, শ্রমিক সংগঠনকে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলায় পুলিশে জনবল বৃদ্ধির জন্য সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা ও মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/জেডএইচ/এএসএম