সাদের বয়স এখন ছয়। প্লে থেকে নার্সারিতে উঠেছে। মা ছাড়াই সাদ দাদা-দাদীর সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে থাকে। বাবা জাহিদুল ইসলাম ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবেননি দ্বিতীয় বিয়ের কথা। গত বছরের ১৩ মে দুপুরে রাজধানীর পল্লবীতে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী সুইটি আক্তার (২৫) ও তার মামা আমিনুল ইসলামকে (৪০) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। খুনের ঘটনার বছর হতে চললেও কারণ নিশ্চিত হতে পারেনি ডিবি পুলিশ। ধরা পড়েনি স্ত্রী ও মামার খুনিরা। এ নিয়ে হতাশ প্রকৌশলী জাহিদুল মামলার তদন্ত ভার সিআইডিকে হস্তান্তরের আবেদন জানিয়েছেন। পল্লবী থানাধীন ২০ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর ‘ক্রিস্টাল ডি আমিন’ নামে একটি বাড়ির ৬ষ্ঠ তলায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছেলে সাদ (৫) মারাত্মকভাবে আহত হন। জোড়া খুনের ঘটনার দিন রাতেই পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা (মামলা নং ৩২) দায়ের করেন নিহত সুইটি আক্তারের স্বামী জাহিদুল ইসলাম। জোড়া খুনের নেপথ্যে চাঁদা ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের ছিল বলে দাবি ছিল পরিবারের। পুলিশও সে অনুযায়ী তদন্ত শুরু করেছিল। তবে মামলা দায়েরের পরদিনই তদন্ত ভার ডিবি পুলিশে হস্তান্তর হয়। কিন্তু এরপর এতো দিনেও তদন্তে অগ্রগতি আসেনি। একই তথ্য জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরাও। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘ক্রিস্টাল ডি আমিন’ নামের ওই বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, প্রকোশলী জাহিদুল ইসলাম বাসায় নেই। ছোট ভাই এম রাশেদ সরওয়ার জুয়েল জানান, ছয় বছরের সাদ এখন নার্সারীতে পড়ে। গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর গান্ধাইলে দাদা-দাদির সঙ্গে থাকে। ঢাকার বাসায় জাহিদুল ও জুয়েল ছাড়াও মেঝো ভাই শহীদ সরওয়ার ও তার স্ত্রী শারমিন এবং খালাতো ভাই রাকিজ উদ্দিন বসবাস করেন। পরে ছোট ভাই জুয়েলের ফোনেই কথা হয় নিহত সুইটি’র স্বামী জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি ডিবি পুলিশের তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘দশ মাসেও ডিবি পুলিশ স্ত্রী খুনের ঘটনার জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারেনি। কে বা কারা খুন করেছে কেন খুন করেছে এর কোনো হদিসই নাকি পায়নি।’ ‘তদন্ত সংশ্লিষ্টরা প্রথমে যোগাযোগও করেছিল। কিন্তু এখন যোগাযোগ করে না। নিজে থেকে ফোনও করলেও কেউ কল রিসিভ করেন না। শুনেছি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পশ্চিমের ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান মিশনে যাচ্ছেন। ট্রেনিংয়ে আছেন। তদন্ত কর্মকর্তাই যদি না থাকেন তবে মামলা ডিটেক্ট হবে কি করে?’ ক্ষুব্ধ প্রকোশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ডিবি পুলিশের তদন্তে সন্তুষ্ট হবার কোনো কারণ দেখি না। ডিবি পুলিশ তদন্ত করুক তাও আর চাই না। আমি গত ২০ ফেব্রুয়ারি পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর চিঠি দিয়েছি। আমার স্ত্রী ও মামা হত্যা মামলা যেন পুলিশের সিআইডি’কে হস্তান্তর করা হয়। যদিও পুলিশ এখনো কিছু জানায়নি। স্ত্রী ও মামা খুনের সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত কোনো শত্রু ছিল না। ট্রান্সফরমার উৎপাদন ও সরবরাহের ‘ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার’ নামে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিল আমার স্ত্রী। আশরাফুল আলম চিশতি ওরফে শাহিন ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছিল। এছাড়া টাকার হিসেব নিয়ে গড়মিল হওয়ায় শাহিনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় সুইটির। স্ত্রী খুনের ঘটনার আগের দিন শাহিন জানায় সে সব হিসেব চুকে দেবে। এরপর দিনই খুনের ঘটনা ঘটে। আমার সন্দেহ শাহিনের দিকেই। তিনি আরো জানান, শাহিন ও সোহেল নামের একজনকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছিল। কিন্তু পরে জামিনে বেরিয়ে যায় তারা।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ডিবি পশ্চিমের সহকারী কমিশনার (এসি) সাইফুল্লাহ নাছির জাগো নিউজকে বলেন, জোড়া খুনের ঘটনায় দায়ের করা অজ্ঞাত মামলার তদন্ত কাজ এখনো শেষ হয়নি। তাই চার্জশিটও দেয়া যাচ্ছে না। এ ঘটনায় কোনো কূল-কিনারাই করা যায়নি। বিশেষ করে তদন্ত কর্মকর্তা মাহফুজর রহমান মিশনে যাওয়ার জন্য ট্রেনিংয়ে থাকায় তদন্তে ধীর গতি চলছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। জেইউ/জেএইচ/একে/আরআইপি