কোরবানির ঈদে পশ্চিমাঞ্চল রেলে চলাচলকারী ট্রেনে যাত্রীরা স্বস্তিতে চলাচল করেছেন। ভোগান্তির কোনো অভিযোগ নেই। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) সকাল থেকে ঈশ্বরদী জংশন ও ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন হয়ে চলাচলকারী ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে। ঈশ্বরদী বাইপাস হয়ে দু-একটি আন্তঃনগর ট্রেন ২০-৩০ মিনিট বিলম্ব হলেও ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে।
পাকশী বিভাগীয় কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, আন্তঃদেশীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ও মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন বাদে পশ্চিমাঞ্চল রেলপথে ৫২টি আন্তঃনগর, ছয়টি লোকাল ও ৩১টি মেইল ট্রেন চলাচল করে। এবার ঈদযাত্রায় দু-একটি ছাড়া বেশিরভাগ ট্রেন নির্ধারিত সময়ে চলাচল করেছে। ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন সূত্রে জানা যায়, এ স্টেশনে তিনটি আন্তঃনগর ও একটি মেইল ট্রেন নির্ধারিত সময়ে চলাচল করেছে। কোনো ট্রেনের বিলম্ব ছিল না। এছাড়া ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন হয়ে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে চলাচলকারী ৩২টি আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল ট্রেন নির্ধারিত সময়ে চলাচল করছে। ঈদের আগে শুধুমাত্র খুলনা-চিলাহাটি রুটের রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেন দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের মাস্টার মাহাবুবা শাহিনুর জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময় রাত সোয়া ২টায় ও চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন দুপুর ১টা ২০ মিনিটে ছেড়ে গেছে। বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন নির্ধারিত সময় সাড়ে ৪টায় ছেড়ে যাবে। এছাড়া উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে চলাচলকারী ট্রেনগুলো সঠিক সময়ে চলাচল করছে। শুধুমাত্র রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেন ১৫-২০ মিনিট বিলম্বে চলাচল করছে।
ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন মাস্টার প্রহলাদ বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন হয়ে ঢাকা-উত্তরাঞ্চলের মধ্যে চলাচলকারী দুটি স্পেশাল ট্রেনসহ ২৪টি আন্তঃনগর ট্রেন (আপ-ডাউন) চলাচল করছে। এরমধ্যে দুটি ট্রেন ঈদের আগে এক থেকে দুই ঘণ্টা কিছুটা বিলম্বে চলাচল করেছে। ঈদের পর নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চলাচল করছে। অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় এবার ঈদে ট্রেন নির্ধারিত সময়ে চলাচল করছে। এবার সবকিছু অনলাইনে হওয়ায় যাত্রীরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদযাত্রার টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছেন। ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) আব্দুল আলিম মিঠু জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের আগে ও পরে সিল্কসিটি, পদ্মা, বনলতাসহ বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনে টিকিট পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছি। প্রতিটি ট্রেনই এবার নির্ধারিত সময়ে চলাচল করছে। অন্য বছর ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হলেও এবার স্বস্তিতে যাত্রীরা যাতায়াত করেছে।
ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী আফসার আলী বলেন, ঢাকা থেকে ঈদে ট্রেনে বাড়ি এসেছিলাম, যাচ্ছিও ট্রেনে। এবার ট্রেন নির্ধারিত সময়ে চলাচল করছে। আসার সময় ট্রেন ৩০ মিনিট দেরিতে পৌঁছেছে। এটি তো ঈদযাত্রায় স্বাভাবিক। কারণ ঈদে ট্রেনে প্রচুর যাত্রী থাকে তাদের ওঠানামা করতে স্বাভাবিকভাবে সময় বেশি লাগে। অন্য বছর এ রুটে দুঘণ্টা থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্ব ছিল। এবার ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হয়েছে। আমরা রেলওয়ের কাছে এমন স্বস্তিদায়ক সেবা প্রত্যাশা করি।
ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে কথা হয় ফিরোজ হোসেনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ঈশ্বরদীতে এসেছে। ট্রেনের বিলম্ব না থাকায় যাত্রীরা স্বস্তিতে যাত্রা করতে পারবে। এবার ঈদে ঢাকা থেকে আসার সময় ট্রেনে কোনো ভোগান্তি হয়নি। নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চলাচল করেছে।
ঢাকাগামী যাত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করছি। ট্রেন নির্ধারিত সময়ে এসেছে। বিলম্বে যাতায়াত না করায় কোনো ধরনের ভোগান্তি ও দুর্ভোগ নেই।
চিলাহাটি গামী রূপসা ট্রেনের যাত্রী আনিসুর রহমান বলেন, রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেন ১৫ মিনিট বিলম্বে স্টেশনে এসেছে। ট্রেন যাত্রায় এটা স্বাভাবিক। ট্রেনে ভ্রমণ নিরাপদ ও আরামদায়ক। তাই সবসময় ট্রেনে চলাচলের চেষ্টা করি। কিন্তু কিছু কিছু সময় ট্রেন বিলম্বের কারণে অস্বস্তিবোধ করি। এবার ঈদে ট্রেনে বিলম্ব ছিল না। স্বস্তিতে বাড়িতে এসেছি এবং স্বস্তিতে ফিরে যাচ্ছি। পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহ সূফি নূর মোহাম্মদ জাগো নিউজকে বলেন, এবার যাত্রীদের স্বস্তিদায়ক ভ্রমণের জন্য আন্তঃনগর ট্রেনে ৪০টি অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হয়। এছাড়াও ঢাকা-উত্তরাঞ্চলের মধ্যে দুটি ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলাচল করে। প্রতিটি ট্রেন যেন নির্ধারিত সময়ে চলাচল করতে পারে এ জন্য সার্বক্ষণিক রেলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সচেষ্ট ছিল। এবার কোনো ট্রেন তেমন একটা বিলম্বে চলাচল করেনি। এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও স্বস্তিদায়ক হয়েছে। এবার কোনো যাত্রী বিলম্ব বা ভ্রমণ নিয়ে অভিযোগ করেননি।
এর আগে ১৪ জুন থেকে আন্তঃনগর ট্রেনের ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়। ফিরতি অগ্রিম টিকিট দেওয়া হয় ২২ জুন থেকে। ৬ জুলাই পর্যন্ত ঈদযাত্রার ফিরতি টিকিটে যাতায়াত করবেন কর্মস্থলমুখী যাত্রীরা।
এসজে/এএসএম