আজ ৭ জুলাই, শোলাকিয়া জঙ্গি হামলার সাত বছর। ২০১৬ সালের এ দিনে ঈদুল ফিতরের জামাতের আগে মাঠে প্রবেশপথের সবুজবাগ সংযোগ সড়কে মুফতি মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদের সামনের তল্লাশি চৌকিতে ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলা হয়। জঙ্গিদের ছোড়া গ্রেনেড, গুলি ও চাপাতির আঘাতে দুজন পুলিশ কনস্টেবল, একজন গৃহবধূ ও এক জঙ্গি নিহত হন। এছাড়া জঙ্গি, পুলিশ ও মুসল্লিসহ অন্তত ১৬ জন গুরুতর আহত হন।
সেদিনের স্বজন হারানোর দুঃসহ স্মৃতি আর দেশ কাঁপানো বীভৎস ঘটনা আজও তাড়িয়ে বেড়ায় এ এলাকার মানুষকে। এ ধরনের নৃশংস ও বর্বরোচিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি কিশোরগঞ্জবাসীর। বর্তমানে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানি প্রায় শেষ পর্যায়ে।
পুলিশ জানায়, ঘটনাটি সফলভাবে তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এ মামলার সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছে পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল আনছারুল হক ও জহিরুল ইসলাম এবং সবুজবাগ এলাকার গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিক ও আবির হোসেন নামে এক জঙ্গি ঘটনাস্থলে নিহত হন। এছাড়া ১২ পুলিশ সদস্য এবং চার মুসল্লি গুরুতর আহত হন।
এ সময় পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে গুরুতর আহত অবস্থায় শফিউল ইসলাম ডন নামে এক সশস্ত্র জঙ্গি এবং তানিম নামে স্থানীয় এক সন্দেহভাজন যুবক আটক হয়। আর এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় করা মামলায় সর্বশেষ মোট ২৪ জঙ্গিকে আসামি করা হয়। এদের প্রায় সবাই হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলারও আসামি। এসব আসামির মধ্যে ১৯ জনই বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
এ কারণে বেঁচে থাকা পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়। তারা হলেন- কিশোরগঞ্জ পৌরশহরের পশ্চিম তারাপাশা গ্রামের জাহিদুল হক তানিম, গাইবান্ধার রাঘবপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর চলম ওরফে রাজীব গান্ধী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাজারদীঘা গ্রামের মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, গাইবান্ধার গান্ধারপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও কুষ্টিয়ার সাদীপুর কাবলীপাড়া গ্রামের আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহফুজ।
এ ঘটনায় নিহত দুই পুলিশ সদস্যের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা এবং নিহত গৃহবধূর সন্তানকে ব্যাংকে চাকরি দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে সরকার।
নিহত ঝর্ণা রানী ভৌমিকের স্বামী গৌরাঙ্গ ভৌমিক বলেন, শোলাকিয়া জঙ্গি হামলায় আমার স্ত্রী নিহত হয়েছে। জীবিত থাকা অবস্থায় স্ত্রী হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে মামলাটি আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আছে। ন্যায়বিচার পাবো বলে আশা রাখি। ঘটনার পর থেকে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। শহরের যেকোনো প্রোগ্রামে শোলাকিয়া জঙ্গি হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নিহত পুলিশ সদস্য আনছারুল হক, জহিরুল ইসলাম ও গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিকের স্মরণে প্রতিবছর ৭ জুলাই ঘটনাস্থলে অস্থায়ী বেদিতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
কিশোরগঞ্জ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট আবু নাসের মো. ফারুক সঞ্জু জাগো নিউজকে বলেন, জঙ্গি হামলার ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা হয়। বর্তমানে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে পাঁচজন আসামির বিচার চলছে। ৬ জুন সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ছিল। সেদিন মামলার বাদীসহ মোট ১৭ জন সাক্ষী উপস্থিত ছিলেন। ঢাকার হলি আর্টিসান মামলায় তিনজন আসামির মৃত্যুদণ্ড সাজা হওয়ায় এ মামলার বিচারকার্য বিলম্বিত হচ্ছে।
পিপি আবু নাসের আরও বলেন, আসামিদের মধ্যে মিজান ওরফে বড় মিজান, জাহাঙ্গীর, জাহেদুল ও আনোয়ারকে আদালতে উপস্থিত করা হয়। তবে মো. সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল আরেক জঙ্গি মামলায় রাজশাহী কারাগারে থাকায় আদালতে হাজির হতে পারেননি। ২৫ জুলাই আবারও সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে। আশা করছি আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের পর আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে।
এসজে/এমএস