দেশজুড়ে

একমাসেই ৪৮ সাপে কাটা রোগী হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু ৪

চুয়াডাঙ্গায় সাপের উপদ্রব বেড়েছে। গতমাসে সাপের কামড়ে আহত হয়ে শুধু চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালেই চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৮ জন। এদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে চারজনের। একই সময়ে বাকি তিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও অন্তত ২০ জন সাপে কাটা রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সাপের কামড়ের আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন ৪৮ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ২৫ জন ও নারী ২৩ জন। এদের মধ্যে মারা গেছেন চারজন। জেলার আলমডাঙ্গা, জীবননগর ও দামুড়হুদা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ২০-এর অধিক সাপে কাটা রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে মৃত্যুর ঘটনা নেই। কারণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রায় সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ রোগীকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়।

আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় সাপের কামড়ে গৃহবধূর মৃত্যু, আহত শিশু

গত ৪ জুলাই সাপের কামড়ে আহত হন মহেশপুরের কুশোডাঙ্গা গ্রামের শওকতের ছেলে হালিম। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এরপর ৮ জুলাই পৌর এলাকার নুরনগর গ্রামের চান্দু ফকিরের ছেলে নাজমুলকে সাপে কামড়ায়। তাকে আলমডাঙ্গার এক কবিরাজের কাছে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

২৪ জুলাই সাপে কামড়ায় আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের নওলামারী গ্রামের জোসনা বেগমকে (৪৫)। পরিবারের সদস্যরা তার শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সবশেষ ২৮ জুলাই দামুড়হুদা উপজেলার আকন্দবাড়ীয়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে আব্দুর রাজ্জাককে সাপে কামড়ায়। পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতালে না নিয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলার এক কবিরাজের কাছে নিয়ে যান। কবিরাজ চিকিৎসার নামে সময়ক্ষেপণ করলে তার অবস্থার অবনতি হয়। পরে সেখান থেকে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় রাজ্জাকের।

আরও পড়ুন: নিজঘরে সাপে কাটার পর রাতভর ওঝার ঝাড়ফুঁক, অতঃপর কলেজছাত্রের মৃত্যু

এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন পানকৌড়ির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বখতিয়ার হামিদ জাগো নিউজকে বলেন, দেশের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহে সাপের উপদ্রব বেশি। জুলাই থেকে আগস্ট সময়টাতে মানুষ সবচেয়ে বেশি সাপের কামড়ের শিকার হন। এসময় বর্ষার পানিতে চারদিক ভরে যায়। সাপ একটু উঁচু ও উষ্ণ জায়গা খুঁজে বেড়ায় এবং লোকালয়ে প্রবেশ করে। এছাড়া দিনদিন ঝোপঝাড় উজাড় হয়ে যাচ্ছে। তাদের আবাসস্থল হারিয়ে যাচ্ছে। এ কারণেও তারা লোকালয়ে প্রবেশ করছে এবং মানুষের সংস্পর্শে এসে তাদের দংশন করছে।

তিনি বলেন, সাপে কামড়ানোর পর সবচেয়ে বড় যে ভুলটি হয়, সেটি হচ্ছে হাসপাতালে না নিয়ে এসে ওঝা বা কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া। ওঝারা কখনোই রোগীকে ভালো করতে পারে না। অবশ্যই সাপে কামড়ানোর প্রথম ঘণ্টায় হাসপাতালে পৌঁছাতে হবে। সাপে কামড়ানোর পর অনেক রোগী ভয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। এজন্য রোগীকে সাহস দিতে হবে। রাতে টর্চ জ্বালিয়ে চলতে হবে। ঘুমানোর সময় মশারি টানাতে হবে।

চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান জাগো নিউজকে বলেন, সাপের কামড়ে মৃত্যু কমাতে জনগণের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। সাপে দংশনের পর রোগীকে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে আসতে হবে। চিকিৎসক যদি মনে করেন বিষধর সাপ, স্থানীয় সব হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত পরিমাণ আছে, সেটা রোগীকে দিতে হবে।

এসআর/জেআইএম