দেশজুড়ে

টানা বর্ষণে ঝালকাঠি শহরে হাঁটুজল

বর্জ্য অপসারণে অব্যবস্থাপনা ও অপরিকল্পিতভাবে ড্রেন নির্মাণের কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই ঝালকাঠি পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। গত পাঁচ দিনের ভারী বর্ষণে শহরের বড় মাছবাজার, কাপুড়িয়াপট্টি, টিনপট্টিসহ একাধিক এলাকায় পানি জমেছে।

সোমবারের (৭ আগস্ট) ভারী বর্ষণে জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বর, আদালত প্রাঙ্গণ, বার লাইব্রেরি প্রাঙ্গণ, ডিসি অফিসের সামনের সড়ক তলিয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন পেশাজীবীসহ সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়ছেন।

বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এ জলাবদ্ধতা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন পৌরবাসী। তবে পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, শহরবাসী যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে ড্রেন ও জলাশয় ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে।

পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠি পৌর শহরের ৯টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ১০০ টন বর্জ্য তৈরি হয়। এরমধ্যে পলিথিন ও প্লাস্টিকজাত বর্জ্য থাকে প্রায় ২৫ টন। ঝালকাঠিতে কোনো ময়লার ভাগাড় না থাকায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সুগন্ধা ও বাসন্ডা নদীতে আবর্জনা ফেলছেন। এছাড়া আরও কয়েক টন গৃহস্থালি বর্জ্য বিচ্ছিন্নভাবে নালা-খালে ফেলা হচ্ছে। এতে শহরের প্রবহমান সাতটি খাল ও অধিকাংশ নালা ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।

এদিকে, পৌর কর্তৃপক্ষ জলবায়ু প্রকল্পের আওতায় প্রবহমান সাতটি খালের মধ্যে নালা তৈরির কাজ শুরু করছে। এর মধ্যে কোনো নালা ২০০ মিটার আবার কোনোটি ৩০০ মিটার নির্মাণের পর বরাদ্দের অভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। চলমান প্রকল্পের অধিকাংশ খালের মধ্যে বাঁধ দেওয়ার কারণেও পানি প্রবাহিত হতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন।

শহরের বাসিন্দা ও বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর দাবি, ড্রেনগুলো অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ধরনের ড্রেন নির্মাণ না করে নিয়মিত খাল পরিষ্কারের পাশাপাশি নতুন করে খনন করে খালের গভীরতা বাড়ানোর দাবি জানান তারা।

ঝালকাঠি সদরের সহকারী ভূমি কার্যালয় ও পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশ আমল থেকে ঝালকাঠি পৌর শহরের প্রবহমান সরকারি ছোট–বড় সাতটি খালের প্রস্থ রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ ফুট। জলবায়ু প্রকল্পের আওতায় এ খালগুলোর মধ্যে গত বছর শুরু হওয়া নির্মাণাধীন নালাগুলোর প্রস্থ ধরা হয়েছে ১০ ফুট প্রস্থ ও সাত ফুট গভীর। জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের পাশের খাল, গোরস্থানের সামনের খাল, ফকিরবাড়ির খালের প্রায় ৫০০ মিটার নালার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এসব খালের ১০ ফুট প্রস্থ বাদ দিয়ে দুইপাশের বাসিন্দারা অবশিষ্ট জমি দখল করে নিয়েছেন।

বড় মাছবাজারের মাছ ব্যবসায়ী খবির হোসেন বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই বাজারে পানি জমে যায়। পানি জমলে নালাগুলো থেকেও পানি সরানো যায় না। জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা স্থায়ী সমাধান চাই।

কাপুড়িয়াপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন বলেন, কাপুড়িয়াপট্টি এলাকার প্রবহমান খালটি সারাবছরই ময়লা-আবর্জনায় ভরে থাকে। এজন্য বর্ষা মৌসুম এলেই বাজারে পানি ওঠে। এতে বাজারে বেচাকেনাও কমে যায়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জানে আলম বলেন, ড্রেন নির্মাণ না করে খালগুলো পুনরুদ্ধার করা কার্যকর হবে। ড্রেন নির্মাণ করা হলেও সেগুলো যদি নিয়মিত পরিষ্কার না করা হয়, তাহলে জলাবদ্ধতার কোনো স্থায়ী সমাধান হবে না।

তবে খাল ও ড্রেন পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে পৌরবাসীকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা বিভাগের পরিদর্শক জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের ৫০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রতিদিন সড়ক ও নালা থেকে প্রায় এক টন বর্জ্য সংগ্রহ করে। নিজস্ব ভাগাড় নির্মাণ হলেই সুগন্ধা ও বাসন্ডা নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা হবে। তবে পৌর বাসিন্দারা সচেতন না হলে খাল-নালা পরিষ্কার রাখা কঠিন হবে।

পৌর মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার বলেন, প্রতি সপ্তাহে খাল-নালা পরিষ্কার করার পরও পৌরসভার বাসিন্দারা যত্রতত্র পলিথিন বর্জ্য ফেলে সেগুলো ভরে ফেলছেন। এদিকে অর্থ বরাদ্দের অভাবে জলবায়ু প্রকল্পের কাজ থেমে আছে। বরাদ্দ থাকলে চলতি বছরই কাজ শেষ হয়ে যেত। নালাগুলোর কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। খালগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। অনুমোদন এবং বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা হবে।

মো. আতিকুর রহমান/এমআরআর/এএসএম