সপ্তাহের ব্যবধানে নওগাঁ বাজারে বেড়েছে পেঁয়াজ, মাছ, কাঁচা মরিচ ও ডিমের দাম। তবে কিছুটা কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। নিত্যপণ্যর এমন দামে হিসেব মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষের। নওগাঁ শহরের পৌর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও ছিল ৭৫ টাকা। ভারতীয় পিয়াজ ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। কাঁচা মরিচ কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব ধরণের মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০-৫০ টাকা এবং হালিপ্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ৪-৬ টাকা। কাঁচা বাজরে ঘুরে দেখা যায়, হলেন্ডার আলু কিনতে হচ্ছে ৪০টাকা দরে। দেশি জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এছাড়াও পটল ৪০ টাকা কেজি, লাউ প্রতি পিস ৩০-৩৫ টাকা, কচু ৮০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৪০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, কলা ২০টাকা হালি, ফুলকপি ছোট ৪০ টাকা, টমেটো ২০০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, শশা ৮০ টাকা, সজনে ২০০, ঝিঙে ৬০ টাকা, আদা ২৪০, দেশি রসুন ২৬০ আর ভারতীয় রসুন ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বেড়েছে উৎপাদন খরচ, এক ডিমের দামই ১৪ টাকা
ডিমের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এক হালি ফার্মের মুরগির ডিম ৫০ টাকা। যা আগে ছিল ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা। হাঁসের ডিম ৬৫-৭০, দেশি মুরগির ডিম ৮০টাকা। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। এছাড়া সব ধরণের মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। কাতল ৩২০ টাক, রুই ৩৫০ টাকা, সিলভার ১৮০ টাকা, পাঙ্গাস ১৭০ টাকা, টেংরা ৫৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৮০০, এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৬০০ টাকা, পাবদা ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বাজারের সবজি কিনতে আসা দিনমজুর ইদ্রিস মিয়া বলেন, বাজারে মাছের দাম যে পরিমাণে বেড়েছে এখন দেখছি মাছও কিনে খেতে পারবো না। ডিমের দামও বেড়েছে। এছাড়াও সবকিছুর দাম আগের চেয়ে বেশি হয়ে যাচ্ছে। সারাদিন কাজ করে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কামাই করি। কিন্তু বাজারে গিয়ে এই টাকায় কিছুই হয় না।
আরও পড়ুন: সুখবর নেই মাছ-মুরগির বাজারে, বিপাকে ক্রেতারা স্কুলশিক্ষক আজিজুল ইসলাম বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে প্রতিদিন কোনো না কোনো জিনিসের দাম বেড়ে যায়। এখন নিজের ছেলে-মেয়েদের নিয়েই চলতে হিমশিম খেতে হয়। অনেক জিনিসের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কিনছি না। আর বাধ্য হয়ে কিনতে হলেও কম কিনছি।
মাছ কিনতে আসা আলতাফ হোসেন বলেন, যে হারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, তাতে পরিবার নিয়ে চলা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ সিলভার মাছ কিছুদিন আগে ১৫০ টাকা কেজিতে নিয়েছিলাম সেই মাছ আজকে ১৮০ টাকা কেজি চায়। হিসেবের বাইরে গিয়ে কিনলে, অন্য খরচে টান পড়ছে।
মেসের বাজার করতে আসা শিক্ষার্থী আল-আমিন হোসেন বলেন, কোনো রকম টিউশনি করে পড়াশোনা ও মেসের খরচ চালাই। আগে দুই হাজার থেকে ২২০০ টাকা হলে থাকা খাওয়া হয়ে যেত। এখন ৪ হাজার টাকা দিয়েও হয় না। সব জিনিসের দাম বেড়েছে। এখন টিউশনি করে পড়াশোনা ও মেসে থাকা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ডিম নিয়ে কারসাজি, মাঠে নেমেছে প্রশাসন
পৌর খুচরা বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. রাশেদ বলেন, বাজারে দুই-একটা জিনিসের দাম ওঠানামা করছে। স্বাভাবিক কারণেই কাঁচামালের ক্ষেত্রে এটা হয়ে থাকে। তবে সবজির দাম স্থিতিশীল আছে। আমদানি কম থাকার পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। মাছ ব্যবসায়ী আফাজ উদ্দিন বলেন, মাছের আমদানি কম, চাহিদা বেশি থাকায় কেজিতে সব ধরনের মাছের দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।
নওগাঁ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক রুবেল আহমেদ বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে থাকি, যেন কোনো বিক্রেতা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য না নেয়। কোনো অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বেশি রাখলে জরিমানা করা হচ্ছে।
জেএস/এমএস