দেশজুড়ে

অনাগত সন্তানের মুখটিও দেখা হলো না আউয়ালের

‘আমার ছেলের সঙ্গে গত পরশুদিন শেষ কথা হয়েছে। ওই দিন আমারে বিকাশে আড়াই হাজার টাকা দিয়েছে আর বলেছে আব্বা বেতন পাই নাই। বেতন পাইলে আরও টাকা দিবো, এখন চলেন। আমার ছেলে আমাকে প্রতি মাসে হাত খরচের জন্য ৪ হাজার টাকা দিতো। ওইদিনই ছেলের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছে।’ কথাগুলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ তোফায়েল হাওলাদার।

বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) রাতে পিকনিকের জন্য সিলেটে যাওয়ার পথে ঢাকার সাভারের এস.বি. নিটিং কোম্পানির ৬ কর্মকর্তাসহ সাতজন নিহত হন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর শিবপুর ইউনিয়নের ঘাসিরদিয়া এলাকায় ট্রাক-মাইক্রোবাস মুখোমুখি সংঘর্ষে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার উত্তর কৃষ্ণনগর এলাকার তোফায়ের হাওলাদারের ছেলে আব্দুল আউয়ালও (৪০) নিহত হন। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) নিহতের খবর জানার পর থেকে তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালকিনি উপজেলার উত্তর কৃষ্ণনগর এলাকার আব্দুল আউয়াল প্রায় ২০ বছর ধরে ঢাকার সাভার এলাকার এস.বি. নিটিং কোম্পানিতে ফেব্রিক ইনচার্জ হিসেবে চাকরি করছেন। তার স্ত্রী শামীমা আক্তার সন্তানসম্ভবা। এই মাসেই সন্তান জন্ম দেবেন তিনি। এছাড়াও তার রহিমা (১০) ও হাবিবা (৫) নামে দুই মেয়ে আছে।

চাকরির সুবাদে আউয়াল সাভারে থাকতেন। স্ত্রী ও সন্তানরা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। ছুটি পেলে গ্রামের বাড়িতে আসতেন তিনি। স্ত্রীর সন্তান হবে বলে বর্তমানে তিনি তার বাবার বাড়িতে আছেন।

নিহত আউয়ালে স্ত্রী শামীমা আক্তারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার অনাগত সন্তান তার বাবার মুখটিও দেখতে পেলো না। এখন আমার অনাগত সন্তান ও দুই মেয়ের কী হবে। আমরা তাকে ছাড়া কীভাবে বাঁচবো।

কালকিনির ৪, ৫, ৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর হাচিনা বেগম বলেন, আউয়াল খুব ভালো ছেলে ছিল। সে সবসময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। সড়ক দুর্ঘটনা আউয়াল মারা গেছে শুনে খুব কষ্ট পেয়েছি। ওর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।

কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কায়েসুর রহমান বলেন, আমি আপনার কাছ থেকে জানলাম। তার পরিবারকে সমবেদনা জানাই এবং আউয়ালের মরদেহ ঢাকা থেকে আনতে যদি আমাদের সহযোগিতা লাগে তাহলে আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার ব্যবস্থা করবো।

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এফএ/এএসএম