বিশ্বকাপের যাত্রাটা বেশ দুর্দান্তভাবেই শুরু করেছে বাংলাদেশ। প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। ওই ম্যাচে ছিলেন না নাজমুল হোসেন শান্ত, অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান। তবে তানজিদ তামিম, লিটন দাস ও মেহেদি হাসান মিরাজের দাপুটে ব্যাটিংয়ে অসাধারণ জয় পায় বাংলাদেশ।
Advertisement
প্রস্তুতি ম্যাচে না থাকলেও বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে নাজমুল হোসেন শান্ত এখন অন্যতম ভরসার নাম। বিশ্বকাপে তাই ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণে নিজেকে প্রস্তুত করছেন বাঁহাতি টপঅর্ডার ব্যাটার। পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় প্রতিপক্ষের বোলারকে কিভাবে সামলাবেন, সেটি নিয়েই ভাবছেন তিনি।
সম্প্রতি ক্রিকেট বিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট 'ক্রিকবাজ'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিশ্বকাপের ব্যাটিং নৈপুণ্যে বৈচিত্র্য আনার কথা জানিয়েছেন তারকা ব্যাটার। সাক্ষাৎকারে একজন নির্ভরযোগ্য ব্যাটার হিসেবে কীভাবে গড়ে উঠা যায় সে পরিকল্পনা শুনিয়েছেন তিনি।
নিচে তার দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিয়দাংশ তুলে ধরা হলো জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য...
Advertisement
প্রশ্ন: আপনি ২০২২ সালের অক্টোবরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৭১ রান করেছিলেন। এরপর থেকেই আপনার ক্যারিয়ারে একটি ভালো সময় পার করেছেন। এই সময়ের মধ্যে আপনি ১৭ টি ওয়ানডে খেলেছেন এবং ৪০ এর উপরে গড়ে দুটি সেঞ্চুরি এবং চারটি ফিফটি করেছেন। আপনি কি আপনার পরিবর্তন সম্পর্কে বলতে পারেন?উত্তর: পরিবর্তন বলে কিছু নেই। আমি মনে করি, এই পর্যায়ে আসতে আমাকে অনেক অনুশীলন করতে হয়েছে। কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং নির্দিষ্ট দুর্বলতার জায়গায় কাজ করেছি। এর আগে আমি ভালো করিনি। কিন্তু খেলায় দক্ষতা এবং মানসিক বিকাশের দিকে মনোনিবেশ করেছি। আমার বিশ্বাস ছিল এবং সেই অনুযায়ী কাজ করেছি। কারণ আমি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করেছি, এখন আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতে কিছুটা সাফল্য পাচ্ছি।
প্রশ্ন: এই সময়ের মধ্যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজের সময় আপনি প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই ধরনের পরিস্থিতি আপনি কীভাবে মোকাবেলা করেন?উত্তর: আমি এমন পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মাঝে মাঝে হতাশাজনক পারফর্ম করেছি। এ পরিস্থিতি থেকে কিভাবে উত্তরণ করা যায় সেটা আমি জানি। সেই সিরিজে আমার ভুল ছিল। কোথায় ভুল করেছি, তা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি। আমি মনে করি, প্রতিটি খেলোয়াড় প্রতিটি খেলায় রান করবে না এবং কেউ দুই-একটি খেলা মিস করতে পারে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আপনি কত দ্রুত নিজেকে ছন্দে ফিরে পাচ্ছেন। যেখানে আমার দুর্বলতা ছিল আমি শুধুমাত্র সেখানে ফোকাস করেছি এবং ওই জায়গায় বিশেষভাবে কাজ করেছি।
প্রশ্ন: অনেকেই মনে করছেন ব্যাটিংয়ের ধরন বদলেছে, এ বিষয়ে আপনি কি একমত?উত্তর: দেখুন, খেলার ধরন তখনই পরিবর্তিত হবে, যখন আপনার কাছে অনেকগুলো বিকল্প থাকে। আমি মনে করি আমার দক্ষতা বৃদ্ধির কারণে আমার খেলার ধরনও পরিবর্তন হয়েছে। আমি যদি আগের মতো এক প্যাটার্নে ব্যাটিং করতাম, তাহলে উন্নতি করতে পারতাম না। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি সামলানোর জন্য আমার কাছে আলাদা বিকল্প রয়েছে।
সে কারণে সবাই মনে করে, ব্যাটিংয়ে আমার কৌশল বদলে গেছে। আমি শট খেলায় পরিবর্তন এনেছি। খেলায় নিজের সামর্থ্যে বদল এনেছি। কোন ধরনের উইকেটে আমি কী ধরনের শট খেলব, সে বিকল্প আমার কাছে আছে। যেমন, ভালো উইকেটে কী ধরনের শট খেলব এবং টিকে থাকার জন্য কঠিন উইকেটে কীভাবে আমার খেলা পরিবর্তন করব।
Advertisement
প্রশ্ন: এখন আপনি খুব ভালো পুল শট খেলেন। কিভাবে আপনি এই দক্ষতা বাড়িয়েছেন? আপনি সবসময় স্কয়ার অঞ্চলে ভালো খেলেন। কিন্তু আমরা যদি আপনার স্কোরিং গ্রাফ দেখি, দেখা যায়, আপনি লেগ সাইডে অনেক রান করছেন। এটা কি সচেতনভাবেই করছেন?উত্তর: সত্যি বলতে, আমি কখনই স্কয়ার অঞ্চলে ভালো খেলি না। এখানে আমার ঘাটতি ছিল। যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে সূক্ষ্মভাবে অনুসরণ করতে শুরু করি, তখন স্কয়ার অঞ্চলে সফল ক্রিকেটাররা ভালো রান করতো। পরে কঠোর পরিশ্রম করে সেটা অর্জন করেছি। যার কারণে আমি শর্ট বলে রান করছি। বল লেগ সাইডে রেখে রান করেছি অথবা স্কয়ার অঞ্চলে অফ-স্টাম্পে হার্ড লেন্থ বল খেলছি। ইয়র্কার বলেও আমি রান করার জন্য বিকল্প খুঁজে পাচ্ছি। তবে আমাকে আরও উন্নতি করতে হবে।
প্রশ্ন: বর্তমানে আপনি স্পিন বল ভালো খেলছেন। এই দক্ষতা আপনি কীভাবে বাড়িয়েছেন? আপনি কি মনে করেন যে মন্থর গতির বোলারদের বিরুদ্ধে ঘন ঘন স্ট্রাইক পরিবর্তন জরুরি এবং এটি আপনাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে?উত্তর: আমি এ বিষয়ে শতভাগ একমত। আমি মনে করি এই স্ট্রাইক পরিবর্তন স্পিন এবং পেস উভয় ক্ষেত্রেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্পিন বলে যত বেশি স্ট্রাইক বদল করা যায়, ততই ভালো। ১১ থেকে ৪০ ওভারের মধ্যে বাউন্ডারিতে চারজন ফিল্ডার থাকে, তাই একটি ফাঁক থাকায় আপনার কাছে সবসময় বাউন্ডারি মারার বিকল্প থাকতে পারে।
আমি মনে করি, এই সময় প্রতি এক থেকে দুই ওভারে আমি কীভাবে একটি বাউন্ডারি মারতে পারি। আমি আমার অনুশীলনে রেঞ্জ হিটিং করার চেষ্টা করেছি। যখন আমি ম্যাচে সহজ বল পাই তখন বাউন্ডারি মারার চেষ্টা করি। তারপরও আমি মনে করি, আমার উন্নতি করা দরকার। কারণ আমি যখন মানসম্পন্ন দলের বিপক্ষে খেলব, তখন আমাকে আরও পরীক্ষা করা হবে। আমি বলছি না আমি মানসম্পন্ন দলের বিপক্ষে খেলছি না; যেমন আমি ইংল্যান্ড, আফগানিস্তান বা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রান করেছি। তবুও আরও বেশি প্রস্তুত হতে হবে।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী? অনেকেই মনে করেন সব উইকেটে ৩০০-এর অধিক রান হবে না। ব্যাটারদের তখন উইকেটের আচরণ অনুযায়ী তাদের খেলা পরিবর্তন করতে হবে। আপনি কী মনে করেন?উত্তর: বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ প্রতিটি খেলাই হবে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং প্রতিটি দলই জিততে চাইবে এবং চাপ সামলে ভালো পারফর্ম করাই হবে মূল বিষয়। আমি মনে করি, বিশ্বকাপে যে বিষয়টি নিয়ে সবাই চিন্তিত, আমি সেটি পার করে এসেছি। আমি যখন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলাম, তখন আমাকে যেভাবে ব্যাট করার দরকার ছিল আমি সেভাবেই করেছিলাম। এশিয়া কাপে যখন আমি কঠিন উইকেটে রান করেছি এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে যেখানে আমি রান করেছিলাম; সেখানে ফ্লাট উইকেটে সেঞ্চুরি করেছিলাম এবং উইকেটের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাট করেছি।
আমি যখন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে খেলেছি, তখন প্রতিটি খেলায় উইকেট আলাদা ছিল এবং তাই আমি অনুভব করি, আমার ১০-১২টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। যেখানে আমি ভালো এবং খারাপ উভয় উইকেটেই খেলেছি। তাই কীভাবে মানিয়ে নিতে হবে তা বেশ পরিষ্কারভাবেই জানি। যেমন উইকেট কী ধরনের এবং কত রান হবে, তা মূল্যায়ন করার পর আমার ব্যাট করা উচিত। আমি মনে করি না এটি আমার জন্য খুব কঠিন হবে। কিন্তু খেলার মাঠে কীভাবে ব্যাট করব, তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি আমি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, এটা একটা ভালো টুর্নামেন্ট হতে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপে ড্রেসিংরুমের ভেতরে এবং বাইরে অনেক শোরগোল হবে। সেটি আপনি কীভাবে মোকাবেলা করবেন?উত্তর: কে ভালো বলছে আর কে মন্দ বলছে, সেটি বিষয় নয়। আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি কিনা এবং দলের উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে কিনা সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি অনুভব করি, সেই মুহূর্তে কেবল আপনার দক্ষতার উপর বিশ্বাস রাখেন এবং খেলায় প্রতিটি বলে আপনার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। আমার জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, সবকিছু সামলে নিয়ে আমি কিভাবে আমার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারি।
এমএমআর/জিকেএস