দেশজুড়ে

বৃষ্টি-গরমে আগাম শিমের ফলন বিপর্যয়, লোকসানের শঙ্কা

পাবনার ঈশ্বরদীতে ২৬ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে শিমের আবাদ হয়ে আসছে। শিম সাধারণত শীতকালীন সবজি হলেও এ উপজেলার কৃষকরা প্রায় এক যুগ ধরে আগাম শিমের চাষ করছেন। এতে তারা প্রতিবছরই ভালো লাভবান হচ্ছেন। তবে এবার ফলন বিপর্যয়ে পড়েছেন কৃষকরা। লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা। কৃষকরা জানান, জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুতেই আগাম শিমের আবাদ শুরু হয়। সেসময় প্রচণ্ড খরায় শিমের গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পরবর্তীতে ভ্যাপসা গরম ও দফায় দফায় খরায় শিম গাছের ফুল আসতে বিলম্ব হয়। এখন শিমের ক্ষেত ফুলে ফুলে ভরে উঠলেও সাম্প্রতিক কয়েক দফা টানা বৃষ্টিপাতে ফুল ঝরে যাচ্ছে। বিরূপ আবহাওয়ায় পোকা ও ছত্রাকের আক্রমণে ব্যাপক কীটনাশক ব্যবহার করেও শিমের ফুল ঝরে যাওয়া বন্ধ করা যাচ্ছে না।

শ্রাবণের শুরুতেই অন্য বছর আগাম শিম বাজারে বিক্রি শুরু হয়ে যায়। এবার আবহাওয়ার কারণে শিমের ফলন বিলম্বে শুরু হয়েছে। এখন প্রতি বিঘায় ৮-১০ কেজি শিম উঠছে। অথচ গত বছর এসময় প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রতিদিন ৩০-৪০ কেজি শিম তুলা যেত। প্রতিবছর আশ্বিন মাসে এক বিঘার জমির আগাম শিম ৩৫-৪০ হাজার টাকা বেচাকেনা হতো। এবার ৫-৭ হাজার টাকার বেশি কেউ বিক্রি করতে পারেননি।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদীতে গত বছর শিমের আবাদ হয় ১১৩০ হেক্টর জমিতে। এবার শিমের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ১২০০ হেক্টর জমি। এরমধ্যে উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি শিমের আবাদ হয়। এখানকার ৮৫০ হেক্টর জমিতে এবার শিম চাষ হয়েছে।

উপজেলা আগাম শিম চাষের গ্রাম খ্যাত মুলাডুলি, বাঘহাছলা, শেখপাড়া, আটঘরিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আগাম জাতের শিমক্ষেত ফুলে ফুলে ভরে আছে। ফুলের মাঝে মাঝে শিম ঝুলে আছে। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার শিমের ফলন খুব কম চোখে পড়েছে। কৃষকরা কেউ গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত আবার কেউ শিম তোলায় ব্যস্ত।

মুলাডুলি মধ্যপাড়া এলাকার কৃষক আব্দুস ছাত্তার ব্যাপারী বলেন, আমি এক বিঘা জমিতে আগাম শিমের আবাদ করেছি। অন্য বছর আশ্বিন মাস পর্যন্ত আগাম শিম প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা বিক্রি করি। এবার আবাদের শুরুতে খরা ও এখন ফলনের সময় অতিবৃষ্টিতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বাঘহাছলা মধ্যপাড়া গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, গত বছর আশ্বিন মাসে এক বিঘা জমির আগাম শিম ৩০-৪০ হাজার বিক্রি করেছি। এবার আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে শিমের ফলন ভালো হয়নি। শিম চাষের শুরুতেই টানা খরা ছিল আবার এখন প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। অতি খরা ও টানা বৃষ্টির কারণে শিমের ফলন এবার ভালো হয়নি। এখন শিম গাছের পাতা ঝলসে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে, ফুলে ফুলে পচন ধরেছে। এক বিঘা জমিতে আগাম শিমের আবাদে খরচ হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এবার কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ খরচ আরও বেড়েছে। আবহাওয়া খারাপ থাকায় কীটনাশকের পরিমাণও বেশি লাগছে। তাই এবার যারা আগাম শিমের আবাদ করেছিল তাদের লোকসান গুনতে হবে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুমানা পারভীন জাগো নিউজকে বলেন, মুলাডুলি মধ্যপাড়া মাঠ পরিদর্শনে এসে দেখছি প্রতিটি শিমের ক্ষেত ফুলে ফুলে ভরে গেছে। কিন্তু শিমের ফলন অন্যবারের তুলনায় খুব কম। জ্যৈষ্ঠ মাসে আগাম শিম আবাদ শুরুর সময় প্রচণ্ড খরায় শিম গাছের ক্ষতি হয়। এরপর ভ্যাপসা গরমে শিমে পচন ও ছত্রাকের আক্রমণে ক্ষতি হয়েছে। এখন আবার কয়েক দফা টানা বর্ষণে শিম গাছের ফুল ঝরে পড়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে এবার আগাম শিম চাষিরা লাভবান হতে পারছে না। গত বছর আশ্বিন মাস পর্যন্ত প্রতি বিঘা জমির ৩০-৪০ হাজার টাকা শিম বিক্রি হয়। এবার কিন্তু চাষিরা খুব বেশি শিম বিক্রি করতে পারেনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলার ১২০০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়। এরমধ্যে কিছু জমিতে কৃষকরা আগাম শিমের চাষ করেছেন। এবার আগাম শিম মৌসুমের শুরুতে জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রচণ্ড খরা ছিল। এখন আবার আশ্বিন মাসে প্রচণ্ড বৃষ্টি হওয়ায় শিমের ফলন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। আবহাওয়া ভালো হলে কৃষকরা কাঙ্ক্ষিত ফলন পাবে বলে আমি আশাবাদী।

এসজে/এমএস