চিকিৎসক মোহাম্মদ সোহেল-উজ্জামান। কোনো গরীব অসহায় রোগী তার চেম্বারে গেলে খালি হাতে ফেরেন না। বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবাসহ ওষুধও পান। পাশাপাশি রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা কিংবা ফরিদপুর নিতে হলে তারও ব্যবস্থা করে দেন এ চিকিৎসক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোহেল-উজ্জামান মাদারীপুর পৌরশহরের কুকরাইল এলাকার মোহাম্মদ মজিবুর রহমান ব্যাপারী ও নুরজাহান বেগমের ছেলে। ২০১২ সালে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পড়াশোনা শেষ করেন। সর্বপ্রথম গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরি করেন। নিজ জেলা মাদারীপুর সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় চাকরির পর বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে সার্জারি চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন।
স্ত্রী মাইশা তাসনিম মৌরিও একজন চিকিৎসক। মোহাম্মদ আরসান বিন জামান নামে চার বছরের একটি ছেলে আছে তাদের সংসারে। মা নুরজাহান বেগমের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর সাহস পেয়েছেন তিনি।
স্কুলজীবন থেকেই তার ও তার মায়ের ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হয়ে সব সময় গরীবের পাশে থাকবেন। সেই চিন্তা থেকেই প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার মাদারীপুরে আসেন। নিজ বাড়িতে বসেও সোহেল-উজ্জামান অসহায় রোগীদের সেবা দেন। পাশাপাশি মাদারীপুরের আচমত আলী খান সেন্ট্রাল হাসপাতালেও বসেন। সেখানেও অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেন।
কোনো রোগীর ওষুধের দরকার হলে, তাও কিনে দেন। এছাড়া কোনো গরীব রোগীর ঢাকা বা ফরিদপুর যেতে হলে তাকে প্রয়োজন অনুযায়ী সেই সেবাও দেন চিকিৎসক। এজন্য অল্প দিনেই তিনি সবার প্রিয় ডাক্তার হয়ে ওঠেন। অল্প বয়সেই তিনি মাদারীপুরের বেশ সুনাম অর্জন করেছেন।
মাদারীপুরের কালকিনির খাসেরহাট এলাকার পঙ্গু মোকলেস উদ্দিন একটি সড়ক দুর্ঘটনার পর বিছানা থেকে উঠতেই পারেন না। সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় ঘা থেকে গর্ত হয়ে যায়। টাকার জন্য ভালো কোনো ডাক্তার দেখাতে পারেননি। পরে খবর পেয়ে তিনি ডাক্তার সোহেল-উজ্জামানের কাছে ছুটে আসেন। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় উঠতে সমস্যা হওয়ায় ডাক্তার নিচে নেমে তাকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। তাকে ওষুধও কিনে দেন তিনি। এতে খুশি পঙ্গু মোকলেস উদ্দিন। তিনি বলেন, টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিলাম না। তখন ডাক্তার সোহেল-উজ্জামান আমাকে পরামর্শসহ ওষুধ কিনে দেন। এতে করে আমার গায়ের ঘাগুলো থেকে আমি মুক্তি পেয়েছিলাম।
আরেক রোগী মাদারীপুর শহরের হাজির হাওলা গ্রামের নুরানী বেগম বলেন, একটা দুর্ঘটনায় আমার এক কানের পর্দা ফেটে যায়। এতে আমার নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। টাকার অভাবে ভালো কোনো ডাক্তারের কাছে যেতে পারিনি। পরে ডাক্তার সোহেল-উজ্জামানের কাছে গেলে তার এক বন্ধু নাক-কান গলার ডাক্তারের কাছে পাঠান। সেখানে বিনা টাকায় চিকিৎসা পেয়েছি।
মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের হাজীর হাওলা গ্রামের নুরজাহান বেগম বলেন, স্বামী আনোয়ার হোসেন মারা গেলে আমি অসহায় হয়ে পড়ি। ঠিকমতো খেতেই পারতাম না। এই অভাবের মধ্যে আমার নানা অসুখ বাধে। মুখের মধ্যে টিউমার হয়। মাদারীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে, আমাকে ফরিদপুর বা ঢাকা গিয়ে টিউমার অপারেশনের কথা বলা হয়। এরপর দীর্ঘদিন আমি টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। ফলে মুখের মধ্যে টিউমার আরও বড় হয়। এক সময় আমার খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তখন ডাক্তার সোহেল-উজ্জামানের কথা শুনে তার কাছে যাই। তিনি বিনা টাকায় আমার অপারেশনের ব্যবস্থা করেন। এমনকি আমার হাসপাতালের বেড ভাড়াসহ কোনো খরচ দিতে হয়নি। অপারেশন শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি আসার সময় আমার সম্পূর্ণ ওষুধের ব্যবস্থাসহ অনেক ফলও কিনে দিয়েছিলেন। তিনি আসলেই গরীবের ডাক্তার।
ডাক্তার মোহাম্মদ সোহেল-উজ্জামান বলেন, আমার বাড়ি মাদারীপুর। তাই নিজ জেলার মানুষজনের জন্য আমি কিছু করতে চাই। তাদের পাশে থাকতে চাই। সেই চিন্তা থেকেই আমি যতটুকু পারি নিজ জেলার মানুষদের সহযোগিতা করি। আর এ কাজটি করতে পারলে আত্মতৃপ্তি পাই।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সাংবাদিক শাহজাহান খান বলেন, আমি নিজেও অসুস্থতার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হতে প্রায় এক মাসের মতো থাকতে হয়েছে। সেই সময় আমাদের মাদারীপুরের ছেলে ডা. মোহাম্মদ সোহেল-উজ্জামান আমার খোঁজ-খবর নিয়েছেন এবং নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। আসলে তিনি অল্প বয়সেই তার সুন্দর ব্যবহার ও গরীব রোগীদের নানাভাবে সহযোগিতার জন্য জেলায় বেশ সুনাম অর্জন করেছেন।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এসজে/এএসএম