দেশজুড়ে

উদ্ধার তিন বগি পাহারা দেওয়ার কেউ নেই, চুরি হচ্ছে যন্ত্রাংশ

ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত তিনটি বগি গত দুইমাস ধরে রেললাইনের পাশে খাদে পড়ে আছে। এতে প্রতিদিনই বগির মূল্যমান যন্ত্রাংশসহ দরজা- জানালা, সিট কভার চুরি হয়ে যাচ্ছে। বগিগুলো উদ্ধারে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের।

গত ২৩ অক্টোবর ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে আউটার সিগন্যালের কাছে কিশোরগঞ্জ-ঢাকাগামী এগারো সিন্ধু আন্তঃনগর ট্রেনটি লাইন ক্রসিংয়ের সময় একটি কমিউটার ট্রেনের পেছনের কয়েকটি বগিতে ধাক্কা দেয়। এ ঘটনায় ১৯ যাত্রী মারা যান, আহত হন শতাধিক।

ঘটনার দিন রাতেই রিলিফ ট্রেন এসে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের লাইন থেকে দুর্ঘটনাকবলিত তিনটি বগি উদ্ধার করে। এগুলো লাইনের দক্ষিণ দিকে খাদে ফেলে রাখে। এরপর থেকে এগুলো সেখানেই পড়ে আছে। প্রতিদিন ছিনতাইকারী, মাদকসেবীসহ চোরের দল বগিগুলোর মূল্যমান যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন: ‘এমন ট্রেন দুর্ঘটনা আগে দেখেনি ভৈরববাসী’

গত ২৮ অক্টোবর দুই মাদকসেবী ট্রেনের বগির একটি দরজা চুরি করে। পরে রিকশায় করে নেওয়ার পথে জনতা একজনকে আটক করে রেলওয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।

জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রেন দুর্ঘটনার দুই মাস পার হয়ে গেলেও বিধ্বস্ত তিনটি বগি পড়ে আছে। এগুলো দেখভাল করার কেউ নেই। এতে প্রতিদিনই চুরির ঘটনা ঘটছে।’

আরেক বাসিন্দা আসাদ মিয়া বলেন, এ সড়ক দিয়ে স্টেশনের পাশে পৌর কবরস্থান রয়েছে। আমাদের গ্রামের কেউ মারা গেলে সেখানে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু দুই মাস ধরে দুর্ঘটনাকবলিত তিনটি বগি সড়কে পড়ে থাকায় মরদেহ কবরস্থানে নিয়ে যেতে হলে অন্তত দুই গ্রাম ঘুরে যেতে হয়। এতে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।

আরও পড়ুন: বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরা এক পরিবারের সবাই নিহত

ব্যবসায়ী মানিক মিয়া বলেন, রাত হলেই সড়কটিতে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। সন্ধ্যার পর এ সড়ক দিয়ে চলাচল করলে ছিনতাইকারীরা টাকা-পয়সাসহ মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলিম শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরিত্যক্ত বগি তিনটি পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের নয়। দিনরাত পাহারা দেওয়ার মতো পুলিশ আমার থানায় নেই। তারপরও রেলওয়ে পুলিশ দিনের বেলায় পাহারা দিচ্ছে। রাতে চুরি হলে আমরা কী করতে পারি?’

ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের নিরাপত্তা ইন্সপেক্টর তাজবির আহমেদ বলেন, আমার জনবল মাত্র ৮-১০ জন। তার মধ্যে সবাই একসঙ্গে ডিউটি করেন না। আমি অরক্ষিত বগিগুলো দিনের বেলা পাহারা দিলেও রাতের অন্ধকারে এত দূরে নিরাপত্তাকর্মীরা পাহারা দেওয়া সম্ভব না। বগিগুলো খাদ থেকে উদ্ধার করে দ্রুত সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

জানতে চাইলে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. ইউসুফ বলেন, স্টেশনের ট্রেন চলাচলসহ টিকিট বা অন্য সমস্যাগুলো দেখার দায়িত্ব আমার; অরক্ষিত বগিগুলো পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব আমার নয়। তবে চুরির বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এসআর/জিকেএস