দেশজুড়ে

সিএনজি চালকদের অবরোধের মুখে দুই ট্রাফিক পুলিশ প্রত্যাহার

নেত্রকোণায় ঘন ঘন মামলা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ সিএনজি চালকরা দ্বিতীয় দিনের মতো কয়েক ঘণ্টা শহরের মুক্তারপাড়া পৌরসভার সামনের সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এসময় জেলা শহরের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাভিক করতে অভিযুক্ত পুলিশ পরিদর্শক মৃদুল রঞ্জন দাস ও পরিদর্শক আকবর হোসেনকে পুলিশলাইনে প্রত্যাহার করেন জেলা পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ।

জেলা অটোটেম্পু, অটোরিকশা ও সিএনজি চালক শ্রমিক ইউনিয়নের চালকরা অভিযোগ করে বলেন, জেলার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মৃদুল রঞ্জন দাস দায়িত্বে আসার পর থেকেই চাঁদা না দিলে ট্রাফিক পুলিশ জেলা শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাড়ি থামিয়ে নানা অজুহাতে একই গাড়ির বিরুদ্ধে মাসে ৩-৪ বার মামলা দিচ্ছে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে সিএনজি চালকরা পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন চালাতে যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়ায় এসব মামলা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক নেতা বলেন, ট্রাফিক পুলিশ মামলা দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি, অনেক সময় তারা শ্রমিকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, বাবা-মা তুলেও গালিগালাজ করে।

সোমবার (২২ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে কুড়পাড়ের সিএনজি স্ট্যান্ডে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশ আকবর হোসেন মামলা দিলে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। এ সময় ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মৃদুল রঞ্জন দাসের অপসারণ দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন অটোটেম্পু, অটোরিকশা ও সিএনজি চালকরা। কুড়পাড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের এএসআই আকবর হোসেন জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা সোমবার কুড়পাড় এলকায় তিনটি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেই। এ সময় শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুইটি গাড়ি জোর করে ছাড়িয়ে নেয়। আমরা তাদেরকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানালে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের সঙ্গে হাতাহাতি করে।

বিষয়টি জানতে চাইলে জেলা অটোটেম্পু, অটোরিকশা ও সিএনজি চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. বিল্লাল শেখ বিল্লাল জানান, পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে আমরা অতিষ্ঠ। নিয়মিত তাদের চাঁদা না দিলেই তারা ড্রাইভারদের আটকে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। শ্রমিকরা অতিষ্ঠ হয়ে এখন অবরোধে নেমেছে। প্রশাসনের আশ্বাসে আমরা মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করি। নেত্রকোনা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও (প্যানেল মেয়র-২) হেলাল উদ্দিন শেখ বলেন, বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। শ্রমিকদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ রয়েছে। শ্রমিকদের দাবি টিআইকে প্রত্যাহারের। বিয়ষটি নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলা হবে। আর কোনো নিরপরাধ শ্রমিক যেন হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে কথা বলা হবে। শ্রমিকদের হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মৃদুল রঞ্জন দাস ও আকবর হোসেনের মুঠোফোনে কল করে রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শিবলী সাদিকও কথা বলতে রাজি হননি।

তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বলেন, পুলিশের সঙ্গে সিএনজি শ্রমিকদের ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পরে তারা সড়ক অবরোধ তুলে নেন। মঙ্গলবার দেড়টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে নেত্রকোণার পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম খান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শিবলী সাদিক পৌরসভার মোড়ে উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়।

এইচ এম কামাল/এফএ/জিকেএস