জাতীয়

শ্রমিকের রক্ত চুষছে এজেন্সি, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের অন্যতম বৃহৎ উৎস প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। প্রতি বছর অসংখ্য বাংলাদেশি কর্মী সুন্দর জীবন গড়ার স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার আগে দেশেই তাদের পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। পদে পদে গুনতে হয় অতিরিক্ত অর্থ। অথচ সেই টাকা জোগাড় করতে অনেকে বিক্রি করেন পরিবারের শেষ সম্বলটুকুও। অনুসন্ধান বলছে, বিদেশে শ্রমিক পাঠাতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কর্মীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়েও কয়েকগুণ বেশি টাকা নেয়। এমনকি শ্রমিকদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স দেশে না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হয় বিদেশে। এতে শ্রমিকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন, সরকারও হারায় বিপুল অংকের রেমিট্যান্স। এই পুরো প্রক্রিয়াটির সঙ্গে জড়িত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সিন্ডিকেট।

Advertisement

 

সিন্ডিকেটের কারণে নির্ধারিত খরচে কর্মীরা বিদেশে যেতে পারছেন না। এতে বিদেশ গমনেচ্ছুরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, সরকারও হারাচ্ছে বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা। ফলে সরকারের পুরো উদ্যোগটিই ভেস্তে যাচ্ছে। শ্রমিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দেশীয় কিছু রিক্রুটিং এজেন্সির কারণে কর্মীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন

 

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে তিন লাখ ৫০ হাজার কর্মীর কাছ থেকে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ২৫ প্রতিষ্ঠানের একটি সিন্ডিকেট। ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই সিন্ডিকেট সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা নিয়ে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠিয়েছে। শ্রমশক্তি রপ্তানি সিন্ডিকেটের এমন দৌরাত্ম্য নিয়ে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে সংস্থাটি।

যদিও অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তারা নিয়ম মেনেই শ্রমিক পাঠিয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়মিত আসা-যাওয়া থাকলেও বর্তমানে নতুন করে কোনো ভিসা ইস্যু হচ্ছে না। তবে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে অনিয়ম নিয়ে একগুচ্ছ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি গোপন অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক।

Advertisement

এর আগে বিভিন্ন অনিয়ম ও সিন্ডিকেটের কারণে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেওয়া বন্ধ করেছিল মালয়েশিয়া৷ ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর ফের বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রমিক নেওয়ার চুক্তি করে দেশটি৷ তখন শ্রমিক ভিসায় দেশটিতে যেতে সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার ৫৪০ টাকা ফি নির্ধারণ করে সরকার। ২০২২ সালে এক অফিস আদেশে এ খরচ নির্ধারণ করেছিল প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তবে মন্ত্রণালয়ের আদেশ মানছে না রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো।

আরও পড়ুনমালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সুযোগ চায় সব রিক্রুটিং এজেন্সিসব প্রটোকল মেনে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীরমালয়েশিয়ায় কর্মী যাবে, সর্বনিম্ন বেতন ৩০ হাজার

ভুক্তভোগীরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় গমনেচ্ছু একেকজনের কাছ থেকে এজেন্সিগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে ৪-৫ লাখ টাকা। সিন্ডিকেটে জড়িত অনেক প্রতিষ্ঠানেরই আবার নাম-ঠিকানায় রয়েছে গলদ। অনিয়ম-দুর্নীতির এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে কিংবা রাষ্ট্রীয় কোনো সংস্থার মাধ্যমে অপরাধ প্রমাণিত হলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) যে কোনো প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ বাতিল করতে পারে। এমন বিধান রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দার চৌধুরী।

দুদকের কাছে আসা অভিযোগগুলো অনুসন্ধান করছে সংস্থাটির উপপরিচালক মো. আবু সাঈদ। জানা গেছে, অনুসন্ধান শুরুর পর তথ্য চেয়ে অভিযোগে নাম আসা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে এরই মধ্যে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, কারও কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়েছে, এমন অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Advertisement

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়া সরকারের চুক্তির আওতায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১০টি নির্ধারিত রিক্রুটিং এজেন্সি দেশটিতে শ্রমিক পাঠাত। তবে পরবর্তীকালে ২০২১ সালে নতুন একটি সমঝোতা স্মারকে সই করে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া। ওই সমঝোতায় রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা বাড়িয়ে ১০০টি করা হয়। ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেট ভেঙে ১০০ এজেন্সিকে দায়িত্ব দেওয়া হলে সেখানেও তৈরি হয় নতুন সিন্ডিকেট। তাদের মধ্যে ২০-২৫টি এজেন্সির একটি সিন্ডিকেটই নিয়ন্ত্রণ করছে মালয়েশিয়ার কর্মী পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াটি।

এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটডে, প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম লিমিটেড, রাব্বি ইন্টারন্যাশনাল, আল ইসলাম ওভারসিজ কনসালটেন্টস লিমিটেড, আইএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটস ও শানজারি ইন্টারন্যাশনাল।

দুদকের অনুসন্ধান বলছে, শ্রমিকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায়ের পাশাপাশি বিদেশেও অর্থপাচার করছে এ এজেন্সিগুলো। এছাড়া শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশে পাঠানোর পরিবর্তে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করছে তারা। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিষ্ঠানটির অফিস রাজধানীর শান্তিনগরে। যার মালিক এম এ সোবহান ভূঁইয়া। যিনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চেয়ারম্যানও। শুধু কর্মী পাঠানো নয়, বিদেশগামীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আল গোফিলি মেডিকেল সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে তার।

 

তিন লাখ ৫০ হাজার কর্মীর কাছ থেকে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ২৫ প্রতিষ্ঠানের একটি সিন্ডিকেট। ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই সিন্ডিকেট সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা নিয়ে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠিয়েছে। শ্রমশক্তি রপ্তানি সিন্ডিকেটের এমন দৌরাত্ম্য নিয়ে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে সংস্থাটি

 

দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী বিদেশগামী কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা সাত হাজার টাকায় করার কথা থাকলেও বিনিময় ইন্টারন্যাশনালের মেডিকেল সেন্টারটি ১২ থেকে ৩৬ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ ব্যক্তি ওই মেডিকেল সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। কিছু ক্ষেত্রে একেকজনের একাধিকবারও পরীক্ষা করানো হয়।

তবে বিনিময় ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার এম এ সোবহান ভূঁইয়ার দাবি, তাদের প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কোনো অর্থ আদায় করে না। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এ ধরনের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। সবার টাকা জমার রসিদ রয়েছে। নিয়ম মেনেই টাকা নেওয়া হয়।

সোবহান ভূঁইয়ার ম্যাক হ্যাচারি, লায়ন ফিডস লিমিটেড, হাসান ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও অনুসন্ধানে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। জানা যায়, বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল এবং আল গোফিলি মেডিকেল সেন্টারের আদায় করা অতিরিক্ত অর্থ সাদা করার জন্য নামসবর্স্ব ওইসব প্রতিষ্ঠান সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল ও আইএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের অফিসে গিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাওয়া যায়নি। ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মালিক রুহুল আমিন স্বপন বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়। আইএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের অফিস সহকারী শাওন জানান, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরিফুল ইসলামও আছেন বিদেশে।

মালয়েশিয়ায় গমনেচ্ছু একাধিক ব্যক্তি ও দেশটিতে বর্তমানে অবস্থান করা একাধিক শ্রমিক এবং বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এজেন্সিগুলো কমিশনের ভিত্তিতে আদম ব্যাপারীর মাধ্যমে শ্রমিক সংগ্রহ করে। বিদেশগামী কর্মীরা প্রথম ধাপে মেডিকেল ফি ১২ হাজার টাকা, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে দ্বিতীয় ধাপে ৫০ হাজার টাকা আর তৃতীয় ধাপে ভিসা আসার পরে ৩ লাখ ৬০ হাজার থেকে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত এজেন্সিকে দেন।

শ্রমিকরা জানান, সরকার নির্ধারিত ফি’তে কোনো এজেন্সি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠায় না। যার কাছ থেকে যত বেশি নিতে পারে সেভাবেই নিয়ে থাকে এজেন্সিগুলো।

রাজবাড়ীর বাসিন্দা ইউনুস গত বছরের মাঝামাঝি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে শ্রমিক ভিসায় মালয়েশিয়ায় যান। এজন্য কয়েক ধাপে তাকে গুনতে হয় সাড়ে চার লাখ টাকারও বেশি। রাজধানীর মতিঝিলের একটি রিক্রুটিং এজেন্সিতে গিয়ে কথা হয় মগবাজারের বাসিন্দা আবদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে জানান, মালয়েশিয়ায় যেতে তিনি গত বছরের ডিসেম্বর থেকে বিভিন্ন এজেন্সিতে ঘুরেছেন। প্রায় সব এজেন্সি তার কাছে সাড়ে চার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত চেয়েছে।

আরও পড়ুনজনশক্তি-শিল্প খাতে কর্মসংস্থানে ৩২৮০ কোটি টাকা দেবে এডিবি৫ বছরে ৬০ লাখ কর্মী বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা সরকারেরবিশেষ ব্যবস্থায় সরাসরি পাসপোর্ট পাবেন মালয়েশিয়া প্রবাসীরা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এজেন্সি মালিক জাগো নিউজকে বলেন, সরকার মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুদের উদ্ধুদ্ধ করতে ৭৮ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ টাকায় বিমান ভাড়া ও মেডিকেলও উঠানো সম্ভব নয়। এছাড়া ভিসাগুলো মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আমাদের কিনে আনতে হয়। শ্রমিকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করা হয় না। এখন ভিসা সংকট আছে। দুদকের অনুসন্ধানেও উঠে এসেছে এমন চিত্র। বিদেশে যাওয়া একাধিক শ্রমিক দুদককে জানিয়েছেন, তারা ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকায় মালয়েশিয়ায় গেছেন।

দুদকের অনুসন্ধান বলছে, বিনিময় ইন্টারন্যাশনালসহ এই এজেন্সি সিন্ডিকেটের মূল নিয়ন্ত্রণকারী ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল। ক্যাথারসিসের বসুন্ধরায় রয়েছে নিজস্ব ভবন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. রুহুল আমিন (স্বপন) একসময় বিনিময় ইন্টারন্যাশনালের অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মীম মেডিকেল সেন্টার, ক্যাথারসিস মেডিকেল সেন্টার লিমিটেড, ক্যাথারসিস ট্রাভেলস এবং ক্যাথারসিস ট্রেনিং অ্যান্ড টেস্টিং সেন্টার নামে রয়েছে একাধিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে মীম মেডিকেল সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিদেশ গমনেচ্ছুদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার তথ্য পাওয়া যায়।

শ্রমিকদের কাছ থেকে ৫-৬ গুণ বেশি টাকা নেওয়ার পাশাপাশি এই সিন্ডিকেট বিদেশে টাকা পাচারও করছে। কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশে না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে বিদেশে। ফলে দেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সিন্ডিকেটে সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অন্য একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করছে দুদক।

 

শ্রমিকদের কাছ থেকে ৫-৬ গুণ বেশি টাকা নেওয়ার পাশাপাশি এই সিন্ডিকেট বিদেশে টাকা পাচারও করছে। কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশে না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে বিদেশে। ফলে দেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সিন্ডিকেটে সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অন্য একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করছে দুদক

 

জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩ আগস্ট বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগে অনিয়মে মালয়েশিয়া সরকারকে সেবাদানকারী আইটি কোম্পানি বেস্টিনেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আট কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশন (এমএসিসি)। বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য কোটা অর্জনে নিয়োগ কর্তা বা এজেন্টদের সহযোগিতা করতে ঘুস গ্রহণের অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

জানা যায়, শ্রমিকপ্রতি বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩২ হাজার টাকা করে নিয়েছে ওই আইটি প্রতিষ্ঠানটি। বেস্টিনেটের সঙ্গে মিলিতভাবে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্ট বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল ও ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের সিন্ডিকেট বেশি টাকা নেয়। তখন রিক্রুটিং এজেন্টদের মূলহোতা হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দাতো মোহাম্মদ আমিনকেও গ্রেফতার করে এমএসিসি।

দুদক বলছে, সরকারের লক্ষ্যই হচ্ছে কম খরচে বৈধ উপায়ে বিদেশে কর্মী পাঠানো। যার মাধ্যমে কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভারী করা। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে নির্ধারিত খরচে কর্মীরা বিদেশে যেতে পারছেন না। এতে বিদেশ গমনেচ্ছুরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, সরকারও হারাচ্ছে বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা। ফলে সরকারের পুরো উদ্যোগটিই ভেস্তে যাচ্ছে। শ্রমিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দেশীয় কিছু রিক্রুটিং এজেন্সির কারণে কর্মীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিক্রুটিং এজেন্সি প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা জাগো নিউজকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাকে কোনো চিঠিও দেওয়া হয়নি। আপনার মাধ্যমেই জানলাম, তাই কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।

এসএম/এমকেআর/জিকেএস